আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কানাডায় বেশ কিছু আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। হতাশা আর আর্থিক চাপসহ নানারকম মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয়ে এই শিক্ষার্থীরা আত্মহননের পথ বেছে নেন।

গ্রেটার টরন্টো এলাকার লোটাস ফিউনারেল হোমের পরিচালক হারমিন্দার হানসি প্রেসপ্রগ্রেস পত্রিকাকে জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে এমন ঘটনা দেখা যায় যেগুলোতে বেশ কিছু বা অন্তত কয়েকজন করে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী জড়িত। ইটোবিকোক-এর লোটাস ফিউনারেল হোমের এই পরিচালক বলেন, “আমরা প্রতি মাসে অন্তত চারটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর লাশের শেষকৃত্য করি, কখনও মাসে একটি বা দুটি। তবে এটা চলমান ঘটনা।”

অন্যদিকে গোফান্ডমি (এড়ঋঁহফগব) পেজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে গত তিন বছরে কানাডায় ভারত থেকে আসা অন্তত ৩০ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘটেছে।

অন্টারিওর ব্রাম্পটনের পাঞ্জাবি কমিউনিটি হেলথ সার্ভিসের মাদকাসক্তি কর্মসূচির ম্যানেজার হরবিন্দার সাহোটা বলেন, “আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সংগ্রাম করছেন, তারা সংগ্রাম করছেন গৃহহীন অবস্থা, মাদকাসক্তি, আইনগত সমস্যা নিয়ে; তারা পার্কে, বাস স্টপে, বিভিন্ন প্লাজায় ঘুমাচ্ছেন।”

ব্রিটিশ কলম্বিয়ার দুখ নির্বাণ সাহিব গুরুদুয়ারার সংগৃহীত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত দুই বছরে ঐ প্রভিন্সে অতিরিক্ত মাদক গ্রহণের কারণে এবং আত্মহত্যা করে কমপক্ষে ৪৭ জন ভারতীয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী মারা গেছেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কানাডায় বেশ কিছু আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। প্রতীকী ছবি : লেন্টসব্লগ

এদিকে, সর্বত্র জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অনেকে বাধ্য হয়ে ন্যূনতম মজুরির চেয়েও অনেক কম টাকায় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

কমিউনিটির নেতারা সতর্ক করছেন যে, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত চাপ এবং কাঠামোগত সহায়তার অভাব প্রাথমিকভাবে ভারতীয় ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

অন্টারিওর ব্রাম্পটনে পাঞ্জাবি কমিউনিটি হেলথ সার্ভিসের (চঈঐঝ) মাদকাসক্তি বিষয়ক পরামর্শক নিরপেল গিল মরদেহ পাঠানোর কাজে সহায়তা দেন। তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি (মৃত্যু) ঘটে “হৃদরোগ, আত্মহত্যা, ওভারডোজ এবং দুর্ঘটনায়।”

মিজ. অনু শর্মা পাঞ্জাবি কমিউনিটি হেলথ সার্ভিসের সিইও। তিনি বলেন, গ্রেটার টরন্টো এলাকার শুধু একটি কলেজ থেকেই (তিনি কলেজের নাম বলতে অস্বীকৃতি জানান) প্রতি সপ্তাহে তিনি অন্তত ১০টি কল পান যেগুলি ছাত্রদের আত্মহননের চেষ্টার সঙ্গে সম্পর্কিত।

মূলত মানসিক সংকটের কারণেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা আত্মহননের পথ বেছে নেন। অথচ সময়মত এর চিকিৎসা করালে হয়তো এই শিক্ষার্থীদের জীবনে এরকম করুণ পরিনতি নেমে আসতো না।

উল্লেখ্য যে, অন্টারিওর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ২৫ হাজার ১৬৪ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে আমেরিকান কলেজ হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালিত একটি বড় ধরণের জরিপে দেখা গিয়েছিল যে, ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে উদ্বিগ্নতায় ভোগার সংখ্যা ৫০ শতাংশ, বিষণ্নতায় ভোগার সংখ্যা ৪৭ শতাংশ এবং মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। এই তথ্য প্রকাশিত হয় টরন্টো স্টারে। সুতরাং এ কথা মনে করার কারণ নেই যে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এ দেশে এসে সব দিক থেকে মানিয়ে চলতে পারবে। তাদের কোন মানসিক সমস্যা দেখা দিবে না।

আমরা মনে করি চলমান বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এই মানসিক পরিস্থিতি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা জরুরী। কানাডার ইকনমিতে তারা যোগ করছে বিশাল অংকের অর্থ। প্রতি বছর প্রায় ২৬ বিলিয়ন ডলার। তাদের প্রতি সরকার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব রয়েছে। তারা যাতে সঠিক সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কাউন্সিলিং পায় তার উপর নজর দিতে হবে। মনে রাখতে হবে মানসিক রোগ অবহেলা করার বিষয় নয়। এরও চিকিৎসা করাতে হয়। কানাডার ইউনিভার্সিটি ও কলেজগুলোতে আন্তার্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে কাউন্সিলিং এর সুযোগ রয়েছে তা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। এই সুযোগ আরো বাড়াতে হবে।