ইমিগ্রেশন বিভাগের ভুল : অনেকের স্বপ্ন চূর্ণবিচূর্ণ

প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপারের রক্ষণশীল সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিগত বছরগুলোতে কানাডার ইমিগ্রেশন পলিসিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরিবর্তন এখনো আনা হচ্ছে। কখনো কখনো প্রায় প্রতি সপ্তাহেই পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ফলে হিমসিম খেতে হচ্ছে ইমিগ্রেশন বিভাগের কর্মীদেরকেও। ঘন ঘন পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলাতে না পারার কারণে নানারকম সমস্যাও তৈরী হচ্ছে।

আর শুধু যে ইমিগ্রেশন পলিসিতে ঘন ঘন পরিবর্তন আনা হচ্ছে তা নয়, অনেক অভিজ্ঞ কর্মীদেরকে বিদায় জানিয়ে স্টুডেন্ট ও অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ দিয়ে চালানো হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগটি। দেখা গেছে এদেরকে দুই/তিন দিনের ট্রেনিং দিয়েই নামিয়ে দেয়া হচ্ছে কর্মক্ষেত্রে। আর এরাই পার্মানেন্ট রেসিডেন্স এপ্লিকেন্টদের ফাইল রিভিউ করছেন!

ফল যা হবার তাই হচ্ছে। অর্থাৎ উচ্চমাত্রায় ভুল-ত্রুটি থেকে যাচ্ছে ইমিগ্রেশন প্রসেসিং এ। যেখানে যে ফরম পাঠানো প্রয়োজন সেখানে তা না পাঠিয়ে অন্য ফরম পাঠানো হচ্ছে, ভুল ঠিকানায় চিঠি যাচ্ছে। এরকম অরো অনেক ভুল করা হচ্ছে। কানাডা এমপ্লয়মেন্ট এন্ড ইমিগ্রেশন ইউনিয়ন এর ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ম্যাক্কয়েগ বলেন, অনভিজ্ঞরা এমন সব ভুল ক্রটি করছেন যা সমাধানযোগ্য নয়। এদের কর্মকান্ডে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হন। ইমিগ্রেশনের জন্য আবেদনকারীদের জীবন হয়ে উঠে অসহনীয়, নরকের প্রান্তে চলে যান তাঁরা।

সম্প্রতি সকারের এক অভ্যন্তরীন তদন্তেই ধরা পড়েছে বিষয়টি। জানুয়ারী মাসের গোড়াতে টরন্টো স্টার পত্রিকায় এ খবরটি প্রকাশিত হয়। কিন্তু ইমিগ্রেশন বিভাগ আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলে- তাদের সেন্ট্রালাইজড প্রসেসিং সেন্টারের এক চতুর্থাংশের বেশী কর্মী ক্যাজুয়াল ওয়ার্কার ও স্টুডেন্ট। এরা এডমিনিস্ট্রেটিভ সাপোর্ট ওয়ার্কার হিসেবে কাজ করেন। কোন ফাইলের ব্যাপারে তারা সরাসরি সিদ্ধান্ত দেন না। ইমিগ্রেশন বিভাগের মুখপাত্র ন্যান্সি চ্যান সম্প্রতি টরন্টো স্টারকে এক ইমেইলের মাধ্যমে এই তথ্য জানান। তিনি অবশ্য এ কথাও জানান যে, কোন আবেদন পত্রের বিষয়ে ডিসিশন মেকিং ক্ষমতা দেওয়ার আগে ক্যাজুয়াল ওয়ার্কার ও স্টুডেন্টদেরকে ব্যাপক ট্রেনিং দেওয়া হয়। তাছাড়া ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা কাজের কোয়ালিটি মনিটরিং করে থাকেন নিয়মিত এবং সেই মোতাবেক স্টাফদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থাও করে থাকেন।

তাহলে উচ্চ মাত্রার ভুল কেন হচ্ছে? ন্যান্সি চ্যানের বক্তব্যে অবশ্য সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা নেই। তবে ইমিগ্রেশন বিভাগের সাধারণ কর্মীদের ভাষ্য হলো, অভিজ্ঞ কর্মীদেরকে বিদায় দিয়ে এই ক্যাজুয়াল কর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করাতেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কাজে ভুল-ভ্রান্তির কারণে বিলম্বিত হচ্ছে ফাইল প্রসেসিং এর কাজও। এ কারণে অন্যান্য দেশে নষ্ট হচ্ছে কানাডার ইমিগ্রেশন বিভাগ তথা কানাডার ভাবমূর্তি।

ইমিগ্রেশন বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ডিক্রিপেন্সির অভিযোগও তুলছেন আবেদনকারীদের অনেকে। আবেদনকারীদের ফাইলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় তাঁদের কর্মকান্ডে ফেয়ারনেসের অভাব রয়েছে বলেও তাঁরা অভিযোগ তুলছেন।

উপরে উল্লেখিত ইমিগ্রেশন বিভাগের ভুল-ত্রুটি বিষয়ে সরকারী রিপোর্ট আর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো গুরুতর তাতে সন্দেহ নেই। কারণ, ইমিগ্রেশন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ আবেদনকারী হবু ইমিগ্রেন্টদের জীবন ও ভবিষ্যত স্বপ্ন নিয়ে কাজ করেন। তাদের সামান্য ভুলের কারণেও অনেক হবু ইমিগ্রেন্টের জীবন হয়ে উঠতে পারে ভয়াবহ রকমের দুর্বিসহ। নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে আসার চিন্তা-ভাবনা, আত্মীয় পরিজন- নিজ দেশের কৃষ্টি ও কালচারের মায়া ত্যাগ করে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেয়াটা নিছক পুতুল খেলা নয়। জীবনের একটা বিরাট রকমের সিদ্ধান্ত এটি। অনেক ভেবে চিন্তে লোকজন সিদ্ধান্ত নেন ইমিগ্রেন্ট হয়ে অন্য দেশে যাবার জন্য। এ জন্য অনেক কাঠ-খড় পুড়াতে হয়। ব্যয় করতে হয় অনেক অর্থ ও সময়। দীর্ঘ প্রস্তুতি নিতে হয় মানসিক ভাবে। মানসিকভাবে প্রস্তুত করাতে হয় নিজের বাবা-মা সহ অন্যান্য আত্মীয় পরিজনদেরকে। এটি একটি কঠিন অধ্যায় যে কোন হবু ইমিগ্রেন্ট এর জন্য। আর এই দীর্ঘ ও কঠিন সংগ্রামের অধ্যায় যদি একজন ইমিগ্রেন্ট কর্মকর্তার সামান্য ভুল বা অজ্ঞতার কারণে নষ্ট হয়ে যায় তবে তার চড়া মূল্য দিতে হয় আবেদনকারীকে যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর তাঁরা এমনসব ভুল ক্রটি করছেন যা পরবর্তীতে সমাধানযোগ্য নয়। বিষয়টি ইমিগ্রেশন বিভাগের নীতিনির্ধারকদেরকে গুরুত্বসহকারে ভেবে দেখতে হবে। ইমিগ্রেশন বিভাগের উচ্চমাত্রার ভুলত্রুটি এভাবে চলতে থাকলে একমসয় আবেদনকারীরা আস্থা হারিয়ে ফেলবেন। তখন তাঁরা বিকল্প দেশ খুঁজবেন। বিষয়টি কানাডার অর্থনীতির জন্য শুভ নয়। মনে রাখতে হবে, কানাডার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন এই ইমিগ্রেন্টরা।

ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৫