অন্টারিওতে বাজে ভাড়াটে এবং কতিপয় বাড়িওয়ালা সম্পর্কে অনলাইনে নতুন তথ্য : দৃষ্টি আকর্ষণ করছে ভুক্তভোগী অনেকের

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : অন্টারিওতে মন্দস্বভাবের কিছু ভাড়াটে এবং কিছু অসাধু বাড়িওয়ালার সম্পর্কে নতুন করে জানাজানি হবার ফলে তারা বাড়িওয়ালা ও আইন বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। খবর মাইকেল স্মি – সিবিসি নিউজ।

এক বছরের কিছু বেশি সময় আগে ওয়েতিং বোলু নামের এক মহিলা ‘ওপেনরুম’ প্লাটফরম চালু করেন। তিনি  ভন সিটিতে তার বাড়িতে একজন ভাড়াটে ভাড়া দেয়া বন্ধ করার পরও তাকে উচ্ছেদ করতে বড় ধরণের সমস্যায় পড়ার পর এই প্লাটফরম চালু করেন। এর ঠিকানা https://openroom.ca/documents

তিনি বলেন, “অন্য বাড়িওয়ালাদের সঙ্গে দেখা হবার আগে ভেবেছিলাম, আমিই একমাত্র বাড়িওয়ালা যে এমন সমস্যায় পড়েছে। আমি বলেছি, ‘এ নিয়ে কেন কেউ আরও বেশি কিছু করছে না?”

“তার মানে হলো, যখন আমি বলেছি ‘আপনি জানেন এটি কি? আমি জীবিকার জন্য সফটওয়্যার তৈরি করি, তাহলে কেন আমি নিজের জন্য কিছু একটা বানাবো না?’”

তিনি বলেন, তার অনলাইন ডাটাবেসে এখন ১০,০০০ হাজারের বেশি ডকুমেন্ট আছে। এর বড় অংশই মন্দ ভাড়াটেদের বিষয়ে, যদিও বোলু বলেন, কিছু ডকুমেন্ট আছে সমস্যাজনক বাড়িওয়ালাদের নিয়েও।

অন্টারিওর ক্ষুদে বাড়িওয়ালাদের সমিতির চেয়ারম্যান বাউবা বাহ-এর মতে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কিছু বাড়িওয়ালা রেন্টাল মার্কেট থেকে ভেগে যেতে বাধ্য হন, যা প্রদেশের আবাসন সঙ্কটে আবদান রেখেছে।

তিনি বলেন, “জিটিএ ছেড়ে যাওয়া বাড়িওয়ালার সংখ্যা আমাদের হিসাবে প্রতিমাসে ৫০ থেকে ৭৫ জনের মত এবং তা বাড়ছে।”

ডাটাবেসে যে কেউ ঢুকতে পারেন

ওপেনরুম ডাটাবেসে যে কেউ ঢুকতে পারেন এবং সম্ভাব্য বাড়িওয়ালা অথবা ভাড়াটে সম্পর্কে অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন যে, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অন্টারিওর ল্যান্ডলর্ড অ্যান্ড টেনান্ট বোর্ড (এলটিবি) কখনও কোনও নির্দেশ জারি করেছিল কিনা। বোর্ডের নির্দেশে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটে উভয়েরই নাম, কথিত অভিযোগ এবং ট্রাইব্যুনাল কি রায় দিয়েছিলÑ বাড়িওয়ালা নাকি ভাড়াটের পক্ষে সেসব তথ্য দেয়া থাকে।

ওয়েতিং বোলু

বোলু তার ডাটাবেস শুরুর পর এটি এখন মুখে মুখে শুনে সদস্য হওয়া সাধারণ মানুষের মধ্যে সম্প্রসারিত হয়েছে। তিনি জানান, আইনজীবী, প্যারালিগ্যাল, বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটেরা এখন তাদের মামলার পক্ষ সমর্থনে এলটিবির রায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া লোকেদের নাম, আইনগত ডকুমেন্টসহ উপস্থাপন করছেন।

বোলু বলেন, কোনও নির্দিষ্ট ভাড়াটে অথবা বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে এলটিবির রায় তালিকাভুক্ত করার আগে এটি ঠিক কিনা তা তিনি খতিয়ে দেখেন।

বোলুর হিসাব মতে, গত এক বছর সময়ে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ তার ডাটাবেসে ঢুকেছেন এবং এই সময়ের মধ্যে ওপেনরুমে ১৭ লাখ অনুসন্ধান চালানো হয়েছে।

তিনি বলেন, “বাড়িওয়ালাদের মুখে শোনা যাবে যে, তারা যে পরিস্থিতিতে আছেন সেটি মানসিক যন্ত্রণার; এটি আবেগ, আর্থিক, আইনগত ও শারীরিক যন্ত্রণার।”

“এই যন্ত্রণা? এটি সত্যিকারের যন্ত্রণা। আমি এটা অনুভব করেছি এবং সে কারণেই আমি একটি পরিবর্তন আনার ব্যাপারে এতটা উৎসাহী।”

একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার

বাউবা বাহ বলেন, ওপেনরুম বাড়িওয়ালাদের কিছুটা হলেও আশার আলো দিচ্ছে।

তিনি বলেন, “এটি এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার এবং এটি ভাইরাল হয়ে উঠছে। আমরা এটি ব্যবহার করছি এবং আমাদের বাড়িওয়ালাদেরকে ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছি।”

এটি এমন এক হাতিয়ার যেটি সম্পর্কে নরেন্দ্র লোবানা ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন আরও আগে জানতে পারার।

তিনি বলেন, ৭,৮০০ ডলার বকেয়া পড়া একজন ভাড়াটেকে তুলে দেয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি। গত গ্রীষ্মে এক মাসের ভাড়া বাকি পড়ার পর তিনি চেষ্টা করছিলেন যাতে ভাড়াটে ঘর ছেড়ে যায়। তখন ভাড়াটে স্বীকার করেন যে, এই বাড়ির ভাড়া দেবার মত সঙ্গতি তার নেই। তিনি বলেন, তিনি উচ্ছেদের আদেশ চেয়ে গত শরতে এলটিবিতে আবেদন করার পর থেকে ওই ভাড়াটে আর ভাড়া দেয়নি।

কর্মস্থলের এক বন্ধুর কাছে ওপেনরুমের কথা শুনে লোবানা আবিষ্কার করেন যে, তার সেই ভাড়াটে গত তিন বছরে তিনটি বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন ভাড়া না দেবার কারণে।

তিনি বলেন, এখন থেকে তিনি সম্ভাব্য ভাড়াটে সম্পর্কে এই সাইটে খোঁজখবর না করে আর কাউকে বাড়িভাড়া দেবেন না।

বলেন, “ওপেনরুম আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে সতর্ক হতে হবে।” “কিছু করার আগে ভাড়াটের ইতিহাস জেনে নিন। এটি খুব, খুবই সহায়ক।”

এ প্লাটফরমের সমালোচকও আছে

পিকারিংয়ের প্যারালিগাল লিওন প্রেসনার বলেন, একজন খারাপ ভাড়াটেকে বাড়িভাড়া দিয়ে ফেলার পরও ডাটাবেসটি ব্যবহারের

সুযোগ বাড়িওয়ালাদের জন্য ফুরিয়ে যায় না।

তিনি বলেন, “এটি হলো প্রমাণ,” কারণ, ওপেনরুমের তথ্যে আদালতের নথিপত্র এবং এলটিবির দাপ্তরিক সিদ্ধান্ত তুলে দেয়া হয়।

প্রেসনার বলেন, “যে কেউ তার মামলায় ওই তথ্য ব্যবহার করতে পারেন, এটি তাদের নির্দেশ এবং এটির উদ্ভব হয়েছে ল্যান্ডলর্ড অ্যান্ড টেনান্ট বোর্ডে থেকেই।”

যদিও প্লাটফরমটির সমালোচকও আছে।

মেট্রো টেনান্টস অ্যাসোসিয়েশন্সের ফেডারেশনের জিওর্ডি ডেন্ট বলেন, এই সার্ভিসটি মন্দ ভাড়াটেদের অন্যায্যভাবে কলঙ্কিত করতে পারে।

তিনি বলেন, “এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে যেখানে লোকজনকে কালো তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে হয়তো তুচ্ছ কোনও কারণে।” “আসলে একজন লোককে গৃহহীন করে ফেলা হচ্ছে।”

ওপেনরুম প্রধানত বাড়িওয়ালাদের জন্য পরিষেবা দিলেও, এ থেকে ভাড়াটেদেরও অন্যরকম সুবিধা পাবার আছে, যার মধ্যে রয়েছে বাড়িওয়ালার মূল্যায়নের সুযোগÑ একটি জনসম্পৃক্ত ওয়েবসাইটÑ এবং নগরীর রেন্টসেফটিও, যা ভাড়াটেদেরকে বাড়িওয়ালার রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার রেকর্ড জানতে সহায়ক।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার এক ক্যাফের মালিকের অভিযোগ, বাড়িওয়ালা যৌন সম্পর্কের বিনিময়ে ভাড়া কমানোর প্রস্তাব দেন

জেরিকা হ্যাকেট গুড ওলফ ক্যাফের মালিক

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার লোয়ার মেইনল্যান্ডের একজন ক্যাফে মালিক মানবাধিকার বিষয়ক একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন এই বলে যে, তার সাবেক বাড়িওয়ালা ভাড়া কমানোর বিনিময়ে তার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ানোর জন্য চাপ দিয়েছিলেন। খবর এবিগেইল টার্নার – সিটিভি নিউজ। 

পোর্ট কোকুইলামে দুই বছর ধরে গুড ওলফ ক্যাফে চালানো ওই নারীর নাম জেরিকা হ্যাকেট।

হ্যাকেট অভিযোগ করেন যে, বাড়ি লিজ নেয়ার চুক্তি নবায়ন করতে গেলে তিনি ৮০ বছর বয়সের বাড়িওয়ালার কাছ থেকে এক মর্মন্তুদ প্রস্তাব পেয়েছিলেন।

সিটিভি নিউজকে হ্যাকেট বলেন, “তিনি (বাড়িওয়ালা) প্রস্তাব দেন যে, আমি যদি মাসে দুবার তার সামনে নগ্ন হই তাহলে তিনি আমার বাড়িভাড়া কমিয়ে দেবেন।”

ক্যাফের মালিক বলেন, তিনি ওই প্রস্তাবে মর্মাহত হন এবং কোনও জবাব দিতে পারেননি, তিনি তার প্রতিক্রিয়ার পরিণতি ভেবে ভীত হয়ে পড়েন।

পরে তিনি বাড়িওয়ালার সঙ্গে তার কথাবার্তা রেকর্ড করতে শুরু করেন।

এ ধরণের একটি আলাপচারিতার ভিডিও তিনি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন যেখানে বাড়িওয়ালার কণ্ঠস্বর বিকৃত করেন এবং চেহারা আবৃত করে দেন। ভিডিওতে তাকে কাপড় খুলতে সম্মত হলে “প্রতিবারের” জন্য ২০০ ডলার করে দেবার প্রস্তাব করা হয় বলে অভিযোগ ছিলো। সিটিভি নিউজ সেই সম্পাদনাহীন রেকর্ডিংয়ের সম্প্রসারিত সংস্করণ দেখেছে।

হ্যাকেট বলেন, “আমি যদি থেকে যেতাম, তিনি আমার ওপর ক্ষমতাবান অবস্থানে থাকতেন এবং আমি জানি না যে, তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে আমার লিজ বাতিল করে দেবেন নাকি আমাকে প্রতিদিন অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলবেন।”

হ্যাকেট শেষ পর্যন্ত তার ক্যাফে বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

হ্যাকেটের আইনজীবী বুধবার বিসির মানবাধিকার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেন।   

বাড়িওয়ালার নাম ও ঠিকানা বাদ দিয়ে অভিযোগের একটি সংশোধিত সংস্করণ সিটিভি নিউজকে দেয়া হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, বাড়িওয়ালা হ্যাকেটকে “তার সঙ্গে ড্রিংক করার জন্য তার অফিসে যাওয়ার, পরিচ্ছদ খুলে তাকে নগ্ন শরীর দেখানোর” প্রস্তাব দেন।

এতে লেখা হয়, “তিনি বলেন, সুন্দর পদযুগল দেখে তিনি সুখী হন এবং তার শরীর দেখতে পেলে তিনি সুখী হবেন।” “এই হয়রানি বৈরিতার সৃষ্টি করে এবং একজন নারী ব্যবসায়ী/ভাড়াটে হিসাবে তার জন্য আপত্তিকর পরিবেশ তৈরি করে।”

হ্যাকেটের আইনজীবী জে স্পাইরো বলেন, বাড়িওয়ালাকে ই-মেলে “অনানুষ্ঠানিকভাবে” অভিযোগ সম্পর্কে জানানো হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল সামনের দিনগুলোতে অভিযোগের কপি দাপ্তরিকভাবে বিবাদীর কাছে পাঠাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অভিযোগে বাড়িওয়ালার কাছে ক্যাফে বন্ধ করে দেয়ার কারণে হ্যাকেটের কথিত আয়ের ক্ষতি, এটি আবার চালু করার খরচ এবং তার মর্যাদাহানির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে।

সিটিভি নিউজ বাড়িওয়ালার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য টেলিফোনে এবং তার বাড়ি গিয়েও বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সব চেষ্টাই বিফল হয়েছে।

হ্যাকেট তার ক্যাফে চালু করার জন্য এরই মধ্যে নতুন একটি জায়গা খুঁজে পেয়েছেন। তবে তিনি জানান, এতে আরও সময় লাগবে, কারণ নতুন স্থানে এখনও কাজ চালানোর মত কিচেন নেই।

তিনি আশা করেন, তার কাহিনী প্রকাশ করে দেয়ার ফলে অন্য যারা ওই বাড়িওয়ালার কাছ থেকে বাড়িভাড়া নিয়েছিলেন তারা নিজেদের ক্ষমতাবান ভাববেন এবং অভিযোগ নিয়ে সামনে এগিয়ে আসবেন।

তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে যখনই এই ঘটনা ঘটেছে তখনই বুঝেছি অন্যরাও একই অবস্থার শিকার হয়ে থাকতে পারে। আমি জানতাম, আমি একটা কিছু ঘটাতে যাচ্ছি। আমি জবাবদিহি চাই এবং নিশ্চিত করতে চাই যাতে এমনটি আর কখনও না ঘটে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *