আন্তর্জাতিক নারী দিবস

৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস। এ বছর বিশ্ব নারী দিবসের থিম হলো ‘Invest in women: Accelerate progress. বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত কানাডায়ও নারীর প্রতি সম্মান জানিয়ে এবং তাঁদের সমঅধিকার আদায়ের লক্ষ্যে পালিত হয় এই দিবসটি।

স্মরণ করা যেতে পারে যে, ১৮৫৭ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সেলাই কারখানায় নারী শ্রমিকরা ভোটাধিকারসহ তাঁদের মর্যাদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশকিছু সুনির্দিষ্ট দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন তাঁরা। প্রায় অর্ধশতাব্দী পর ১৯১০ সালে জার্মান নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিন এ দিনটিকে নারী দিবস হিসাবে পালনের প্রস্তাব করেন। ১৯১১ সালে প্রথম বেসরকারিভাবে বিভিন্ন দেশে দিনটিকে নারী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এর দীর্ঘ ৭৩ বছর পর ১৯৮৪ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। সেই থেকে দিনটিকে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো সরকারিভাবে পালন করে আসছে। জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র হিসাবে কানাডাও প্রতি বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে আসছে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে টরন্টোতে মিছিল। ছবি : ইউটিউব

কানাডার ‘চার্টার অব রাইটস এন্ড ফ্রিডম’ এ নারী ও পুরুষের সম অধিকারের বিষয়টি সন্নিবেশিত করা আছে। আমরা জানি কানাডা বিশ্বের প্রথম কাতারের একটি দেশ যেখানে নারী অধিকারকে যথাযথভাবে সম্মান করা হয়। কিন্তু সমতার ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য আরো কিছু ক্ষেত্রে নারীরা এখনো পিছিয়ে আছেন পুুরুষের তুলনায়।

ইলেকশন কানাডার হিসাব অনুযায়ী দেখা যায়, ৪৪তম ফেডারেল নির্বাচনে (২০২১) ৩৩৮টি আসনের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১০৩টি আসনেই জয়ী হন মহিলা প্রার্থী।

শতবর্ষ আগে কানাডায় যেখানে নারীদের ভোটাধিকারই ছিল না সেখানে আজ ১০৩টি আসনে নারী সদস্য বিদ্যমান। এটি অবশ্যই একটি অর্জন। তবে কানাডার ফেডারেল মন্ত্রী সভার দিকে তাকালে আমরা দেখবো সেখানে আজ প্রায় অর্ধেক মন্ত্রীই নারী। জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বে ২০১৫ সালের ফেডারেল নির্বাচনে লিবারেল পার্টি জয়ী হবার পর কানাডার ইতিহাসে প্রথম যোগ হয় এই মাইলস্টেন। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তাঁর মন্ত্রীসভায় অর্ধেক সদস্যই নেন নির্বাচিত নারী এমপি’দের মধ্য থেকে। তাছাড়াও আমরা দেখতে পাই বর্তমান উপপ্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড একজন নারী। একই সাথে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অর্থমন্ত্রণালয়েরও মন্ত্রী। কানাডার সাবেক কয়েকজন গভর্নর জেনারেলও ছিলেন নারী।

তবে সাধারণভাবে নারী নেতৃত্ব এখনও পিছিয়ে আছে ব্যবসা-বাণিজ্যে এবং সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে। আয়ের ক্ষেত্রেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন কানাডার নারীরা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারীদের তুলনায় পুরুষগণ বেশী পারিশ্রমিক পান। সুতরাং মন্ত্রীসভায় অর্ধেক নারী সদস্য আছেন এই তথ্য নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলে হবে না। অধিকার আদায়ে নারীদের আরো সংগ্রাম করে যেতে হবে। আর এই সংগ্রামে পুরুষদেরও ভূমিকা রয়েছে। তাঁদেরকেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। কারণ পৃথিবীতে নারী-পুরুষের সংখ্যা যেমন সমান সমান তেমনি ক্ষমতা ও অধিকার বিষয়েও তা হতে হবে সমান সমান।

নারী-পুরুষের যৌথ প্রচেষ্টায় বহমান থাকে প্রকৃতি। মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যও তাই প্রয়োজনে নারী ও পুরুষের সম্মিলিত অভিযাত্রা। নারীর জীবনধারা একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মাধ্যে আটকে রাখার অর্থ হলো প্রগতির অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করা। তাই পরিবার থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র-সর্বত্র নারীকে তাঁর যোগ্য ও প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *