শিশু যৌন হয়রানী প্রতিরোধে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকদের আরো সতর্ক হতে হবে

টরন্টোতে আবারো এক ইসলামী স্কুলের শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যৌন হয়রানির। গত ১৬ ফেব্রুয়ারী সকালে এই ঘটনা ঘটে। টরন্টোর সিপি২৪.কম এর এক খবরে বলা হয়, স্কারবরোর মার্কহাম ও নাগেট এ্যাভিনিউতে অবস্থিত দি ইসলামিক ফাউন্ডেশন অব টরন্টো (নাগেট মসজিদ) পরিচালিত ইসলামিক স্কুলের শিক্ষক ২৪ বছর বয়স্ক সালেহ মোমলা স্কুল থেকে ১০ বছরের এক বালককে গাড়িতে করে নিয়ে যায় নেইলসন ও ম্যাকলেভিন (মেলভার্ন) এলাকায়। সেখানে সে ঐ বালককে যৌন হায়রানি করে। পরে তাকে আবার স্কুলে নিয়ে আসে।

যৌন হয়রানির বিষয়টি প্রকাশ পেলে টরন্টো পুলিশ সালেহ মোমলাকে গ্রেফতার করে এবং তার ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ করে। পুলিশ কনস্টেবল জেনিফার জিত সিধু গনমাধ্যমকে বলেন, আমাদের ধারণা এই ইসলামী স্কুলের আরো শিক্ষার্থী হয়তো এরকম হয়রানির শিকার হয়ে থাকতে পারে। যারা হয়রানির শিকার হয়েছে তারা বা তাদের অভিভাবকরা যাতে পুলিশের কাছে আরো তথ্য দেন সেই জন্য এই ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন অব টরন্টো’র মুখপাত্র ইউসুফ বাদাত বলেন, অভিযুক্ত সালেহ মোমলাকে এই স্কুলে বাচ্চাদের কোরআন শিক্ষা দানের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। যৌন হয়রানির শিকার বালকটি এই প্রোগ্রামেরই একজন শিক্ষার্থী। তবে যৌন হয়রানির বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর সালেহকে স্কুল এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে তিনি স্কুল থেকে পদত্যাগ করেন।

স্কুল কর্তৃপক্ষ যৌন হয়রানির ঘটনা উল্লেখ করে অভিভাবকদের কাছে একটি পত্র পাঠায় এবং ঐ পত্রে আহ্বান জানানো কেউ এ ধরণের হয়রানির শিকার হয়ে থাকলে তা অবিলম্বে পুলিশকে জানাতে।

উল্লেখ্য যে, টরন্টোতে ইসলামী স্কুল বা মাদ্রাসায় এ জাতীয় ঘটনা আগেও কয়েকবার ঘটেছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাচ্চাদেরকে ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করেন এমন ব্যক্তির বিরুদ্ধেও ইতিপূর্বে যৌন হয়রানি অভিযোগ উঠেছে। টরন্টোতে এরকম এক ব্যক্তিকে পুলিশ ২০১১ সালের আগস্ট মাসে গ্রেফতার করেছিল যার নাম মোহাম্মাদ মাসরুর। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ঐ ব্যক্তির বয়স ছিল তখন ৪৮। তিনি ড্যানফোর্থের বায়তুল মুকাররম ইসলামিক সোসাইটির সহকারী ইমাম ছিলেন। মসজিদে বাচ্চাদের ধর্ম শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি বাড়ি বাড়িতে গিয়েও শিক্ষা দান করতেন।

যৌন হয়রানির অভিযোগে গত ২০১৫ সালের জুন মাসে ড্যানফোর্থ এলাকা থেকে এক বাংলাদেশী সিনিয়র সিটিজেনকেও (৭০) গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সেই ব্যক্তির নাম দেওয়ান সৈয়দ মশিউর রেজা। ঐ সময় টরন্টো পুলিশ সার্ভিসের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ৬ বছরের একটি বালক ড্যানফোর্থ ইসলামিক সেন্টারে ক্লাশ করতে গেলে সেখানে মশিউর রেজা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরে তাকে যৌনতায় পূর্ণ একটি ভিডিও দেখানো হয়। এর পর মশিউর রেজা বালকটিকে যৌন হয়রানি করে। ড্যানফোর্থের ঐ ইসলামিক সেন্টারে মশিউর রেজার অবাধ যাতায়ত ছিল।

লক্ষ্যনীয় যে, শিশুদের উপর এই যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো ঘটছে এমন সব স্থানে ও এমন সব ব্যক্তির দ্বারা যাদেরকে অভিাভাবকগণ কখনোই অবিশ্বাসের তালিকায় রাখেন না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই বিশ্বাসের মর্যাদা কতিপয় অসচ্চরিত্র ও ব্যভিচারী ব্যক্তির কারণে লঙ্ঘিত হচ্ছে সময়ে সময়ে। তারা কালিমা মাখছে গোটা সম্প্রদায়ের উপর। আর এই যৌন হয়রানি বা যৌন নির্যাতন কোমলমতি শিশু মনের উপর সুগভীর নেতিবাকচ প্রভাব ফেলে যার বিষাদময় স্মৃতি তাকে সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয় যা কোনভাবেই কাম্য নয়।

আমাদের মনে হয় স্কুল বা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি খুবই গুরুতসহকারে বিবেচনা করতে হবে। কাউকে নিয়োগ দেওয়ার আগে তার অতীত ইতিহাস ভাল করে অনুসন্ধান করতে হবে এবং ক্যাম্পাসে সার্বক্ষনিক নজরদারীর ব্যবস্থাও রাখতে হবে। একই সাথে অভিভাবকদেরকেও সতর্ক থাকতে হবে।

মার্চ ১৩, ২০১৮