অন্টারিওতে ন্যূনতম মজুরী বৃদ্ধি দারিদ্র বিমোচনে কার্যকর কোন ভূমিকা রাখবে না

অন্টারিওতে ন্যূনতম মজুরী আবারো বৃদ্ধি করা হয়েছে। অক্টোবর মাসের ১ তারিখ থেকে একজন শ্রমিককে প্রতি ঘন্টায় ন্যূনতম মজুরী দিতে হবে ১১.৪০ ডলার। তার আগে ন্যূনতম মজুরী ছিল ঘন্টায় ১১.২৫ ডলার।

উল্লেখ্য যে, ২০০৩ সালে অন্টারিওতে লিবারেল দল ক্ষমতায় আসার পর এ নিয়ে প্রায় ১২ বার ন্যূনতম মজুরী বৃদ্ধি করা হলো। কিন্তু দেখা গেছে নামমাত্র এই মজুরী বৃদ্ধি অন্টারিওর কর্মজীবী দরিদ্র জনগোষ্ঠির কোন উপকারে আসেনি। উপরন্তু, ন্যূনতম মজুরী বৃদ্ধির আইন দারিদ্র বিমোচনের পরিবর্তে দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য কাজ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর করে তুলে এবং কাজ পেলেও পর্যাপ্ত আওয়ার পান না তারা। পাশাপাশি বাড়ি ভাড়া ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যও বৃদ্ধি পেতে থাকে পাল্লা দিয়ে।

অন্টারিওতে এবারের ন্যূনতম মজুরী বৃদ্ধির কারণে ফলাফল যা দাড়াবে তা হলো, একজন শ্রমজীবী মানুষ যদি ঘন্টায় ১১.৪০ ডলারে ফুলটাইম (সপ্তাহে ৪০ ডলার) কাজ করেন তবে মাস শেষে তার আয় হবে ১৮২৪ ডলার এবং বছরের হিসেবে তা হবে ২১,৮৮৮ ডলার। এর সাথে ভেকেশন পে বা অন্যান্য আরো কিছু সুযোগসুবিধা মিলিয়ে (যদি পায়) বছর শেষে আয়ের পরিমাণ সর্ব্বোচ্চ ২৪০০০ ডলারে দাড়াতে পারে। এটি গ্রস হিসাব। টেক্সসহ অন্যান্য ডিডাকশন হিসেবে ধরলে আয়ের পরিমাণ আরো কম হবে।

টরন্টোর ইয়র্ক রিজিয়ন পভার্টি এ্যাকশন ফর চেঞ্জ কোয়ালিশন এর সভাপতি টম পিয়ারসন এর আগেও বলেছেন এই মজুরী বৃদ্ধি যদিও অন্যান্য প্রভিন্সের তুলনায় বেশী তবু অন্টারিওর অনেক পরিবারের দারিদ্র বিমোচনে কার্যকর কোন ভূমিকা রাখবে না এটি। একজন শ্রমজীবীর মাসিক আয় যদি ১৮২৪ ডলার হয় তবে বিভিন্ন ডিডাকশনের পর তিনি হাতে পাবেন সাড়ে বার বা তেরশ ডলারের মত। এই অর্থ বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ মিটানোর জন্য মোটেও পর্যাপ্ত নয়। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, একটি পরিবারে স্বামী-স্ত্রী মিলে যদি মাসে ১২৮০ + ১২৮০ = ২৫৬০ ডলার আয় করেন (টেক্স ও অন্যান্য ডিডাকশনের পর) তবে তাদের বাড়ি ভাড়া বাবদ গুনতে হবে প্রায় ১৪০০ ডলার। হাতে থাকবে তাদের ১১৬০ ডলার। এই সামান্য কটি ডলার দিয়ে তাদেরকে মিটাতে হবে গ্রোসারী, ইউটিলিটি, ডে কেয়ার, গাড়ি, গ্যাস, ইন্সুরেন্স, টিটিসি টিকেট ইত্যাদির খরচ। তার মতে নামমাত্র এই মজুরী বৃদ্ধি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অন্টারিওর কর্মজীবী দরিদ্র পরিবারগুলোর দারিদ্রতা দূর করতে হলে এই মূহুর্তে ঘন্টাপ্রতি মজুরী বৃদ্ধি করতে হবে অন্তত ১৫ ডলার।

প্রতি ঘন্টায় এবারের এই ১৫ সেন্ট মজুরী বৃদ্ধি অন্টারিও প্রভিন্সের ক্রমবৃদ্ধিমান নিন্ম আয়ের শ্রমজীবীদের দারিদ্রতা দূরীকরণে কোন ভূমিকা রাখবে না যেমনটি ভূমিকা রাখেনি আগেও। আমাদের মতে মুদ্রাষ্ফিতি এবং এর সঙ্গে বাড়ি ভাড়া, পণ্যমূল্য প্রভৃতির বর্তমান বাজার দরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রকৃত মজুরী বৃদ্ধি করাটা খুবই জরুরী।

ইতিপূর্বে এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বেতন বৃদ্ধি করতে হবে এখনকার যে রেট তার চেয়ে অন্তত ২৫% বেশী। কানাডিয়ান সেন্টার ফর পলিসি অলটারনেটিভ এর মতে এখনকার যে ন্যূনতম মজুরী তা টরন্টোতে বসবাসকারী শ্রমজীবী মানুষের প্রয়োজনের তুলনায় ৬১% কম।

আমরা আরো দেখেছি অন্টারিওতে অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক তাদের কর্মীদেরকে উপযুক্ত বেতন দেন না, দেন না ভেকেশন পে এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধাও। ফলে এই সব প্রতিষ্ঠানের কর্মীগণ বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের পাওনা অধিকার থেকে এবং একই সাথে বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের মৌলিক অধিকার থেকেও। অন্টারিওর এমপ্লয়মেন্ট স্ট্যান্ডার্ডস এ্যক্ট এন্ড দি লেবার রিলেশনস এ্যক্ট এর পর্যালোচনার পর দুই সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল এই অভিমত প্রকাশ করেন সম্প্রতি।

অন্টারিওতে সাধারণ মানুষের বেতন বা মজুরী বৃদ্ধি করা জরুরী। তবে তা লোক দেখানো এবং নামকাওয়াস্তে হলে কোন লাভ নেই। মজুরী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যেন বাজার দর বৃদ্ধি না পায়, বাড়ি ভাড়া যাতে বৃদ্ধি না পায়, বেকারত্বের হার যাতে বৃদ্ধি না পায় সেই বিষয়গুলোর ব্যাপারেও জোড়ালো পদক্ষেপ নিতে হবে। বিষয়টি জটিল সন্দেহ নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করতে হলে এই পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।

অক্টোবর ৮, ২০১৬