শিক্ষার্থীদের মানসিক সংকট

এপ্রিল 8, 2019

গত ১৭ মার্চ টরন্টো ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে আরো এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এ নিয়ে গত প্রায় এক বছরে তিন জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিল।

মূলত মানসিক সংকটের কারণেই তারা এই আত্মহননের পথ বেছে নেয়। অথচ সময়মত এর চিকিৎসা করালে হয়তো এই শিক্ষার্থীদের জীবনে এরকম করুণ ট্রাজেডি নেমে আসতো না।

টরন্টো ইউনিভার্সিটির সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ অব্যাহতভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক সংকটের বিষয়টি দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে আসছে। তারা ইউনিভার্সিটিতে মেন্টাল হেলথ সার্ভিসেস কার্যক্রম আরো আধুনিকীকরণ এর পরামর্শও অবজ্ঞা করে আসছে।

উল্ল্লেখ্য যে, সর্বশেষ এই আত্মহত্যার ঘটনার পর ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয় এবং আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।

এই ঘটনার প্রতিবাদে ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট এর অফিসের সামনে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী সামাবেশ করে। তারা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলায় এই খাতে সম্পদ বরাদ্দ বৃদ্ধি করারও দাবী করে। তাদের আরো অভিযোগ, টেলিফোনে বা শারীকিভাবে উপস্থিত হয়ে মেন্টাল হেলথ প্রফেশনাল এর সঙ্গে কথা বলার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয় যেটা আরো ক্ষতিকর। কারণ দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাটি আরো জটিল আকার ধারণ করে। উপযুক্ত সময়ে চিকিৎসা পায় না অনেকেই।

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা একটি গুরুতর ব্যাধি যা সবাইকে অবহিত করা প্রয়োজন। ছবি: বেস্টকলেজ.কম

আমরা দেখেছি, কানাডায় মানসিক স্বাস্থ্যগত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পাঁচ থেকে ২৪ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েদের সংখ্যা গত এক দশকে ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। এটি নিশ্চিতভাবেই একটি উদ্বেগজনক খবর।

আমরা আরো দেখেছি অনেক ইমিগ্রেন্ট পরিবারের ছেলে-মেয়েরাও এই সমস্যায় ভুগছে। স্মরণ করা যেতে পারে যে, ইতিপূর্বে টরন্টোতে দুই বাংলাদেশী তরুণের আত্মহত্যার খবরে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছিল কমিউনিটিতে। এই দুই তরুণের একজনের নাম সাবিত খন্দকার এবং অন্যজনের নাম ফাহমি। অতি সম্প্রতি টরন্টোতে আরো একজন বাংলাদেশী শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

অন্টারিওর বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ২৫ হাজার ১৬৪ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে আমেরিকান কলেজ হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালিত একটি বড় ধরণের জরিপে দেখা গেছে যে, ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে উদ্বিগ্নতায় ভোগার সংখ্যা ৫০ শতাংশ, বিষণœতায় ভোগার সংখ্যা ৪৭ শতাংশ এবং মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। এই তথ্য প্রকাশিত হয় টরন্টো স্টারে।

আমরা মনে করি উপরের তথ্যসমূহ যে কোন বিবেচনায়ই উদ্বেগজনক। এই উদ্বেগ শুধু শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়, তাদের পিতা-মাতা ও ভাই-বোনদের জন্যও উদ্বেগজনক। কারণ একটি অমূল্য জীবন ঝরে পড়লে তার শোক সারা জীবন ধরে বয়ে বেড়াতে হয় যারা বেচে থাকেন তাদেরকে।

চলমান বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে টরন্টো ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের অভিযোগসমূহ আমরা মনে করি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা জরুরী। এ খাতে চিকিৎসা ব্যয় আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যে একটি গুরুতর ব্যাধি তা সবাইকে অবহিত করা প্রয়োজন। কারণ এর পরিনতির কথা জানেন না বলে অনেকেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চান না।

আমাদের মনে রাখতে হবে এই শিক্ষার্থীরাই আমাদের ভবিষ্যত। রাষ্ট্রের ভবিষ্যত। এদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যদি সঠিকভাবে নির্নয় করা না যায় এবং সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা যদি দেয়া না যায় তবে তার পরিণতি হবে সবার জন্যই দুর্ভাগ্যজনক।