কানাডায় সেক্সটরশনের শিকার তরুণরা : বাবা-মায়েদের উচিৎ আরো সতর্ক হওয়া

কানাডায় ক্রমবর্ধমান হারে সেক্সটরশনের শিকার হচ্ছে তরুণরা। সাম্প্রতিক সময়ে এই পরিস্থিতি ক্রমশ আরো অবনতির দিকে যাচ্ছে। ফলে বলে বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছেন।

কানাডিয়ান সেন্টার ফর চাইল্ড প্রোটেকশন-এর (C3P) সহযোগী নির্বাহী পরিচালক সিগনি আরনাসন সম্প্রতি সিটিভি নিউজকে বলেন, “সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় সেক্সটরশনের শিকার হচ্ছে ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সের শিশুরা। তবে গত কয়েক মাসে আমরা দেখছি এর চেয়েও অনেক কম বয়সী শিশু সেক্সটরশনের শিকার হচ্ছে। আমরা দেখছি, আমাদের কাছে আসা অভিযোগের ২০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ১৩ বছর বা তার চেয়েও কম বয়সী শিশু জড়িত।”

আরনাসন বলেন, বাবা-মায়েদের উচিৎ অনলাইনের কর্মকাণ্ডের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে বাচ্চাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা। “আপনি বালুতে মাথা গুঁজে থেকে এটা ভাবতে পারবেন না যে, আমার বাচ্চার সঙ্গে কখনই এমনটা ঘটবে না। কারণ এটি ঘটে অতি দ্রুত, বিশেষ করে সেক্সটরশনের ঘটনা।”

কানাডায় ক্রমবর্ধমান হারে সেক্সটরশনের শিকার হচ্ছে তরুণরা। ছবি: কানাডিয়ান সেন্টার ফর চাইল্ড প্রটেকশন

উল্লেখ যে, অনলাইনে শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের শুনানিতে সম্প্রতি তোপের মুখে পড়েছিলেন মেটার প্রধান মার্ক জাকারবার্গ। শুনানির এক পর্যায়ে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে মৃত শিশুদের অভিভাবকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। অভিভাবকদের কষ্টের সঙ্গে সহানুভূতি প্রকাশ করতে জাকারবার্গ বলেন, ‘আপনারা যে যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন, সে জন্য আমি দুঃখিত। এটি ভয়ানক অনুভূতি। আপনাদের পরিবার যে ক্ষতির শিকার হয়েছে, এ রকম হওয়া উচিত নয়। কেউ যেন কখনো এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে না যায়।’

কিন্তু শুধু এই ক্ষমা চাওয়ার মধ্য দিয়ে কি সমস্যার সমাধান হবে? নিশ্চই না। লোক দেখানো এই ক্ষমা চাওয়ার মধ্যে কোন সমাধান নেই। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের মালিক-নির্বাহীদের দায়বদ্ধতার মধ্যে আনা না গেলে এই সকল শুনানী, ক্ষমা চাওয়া অর্থহীন।

তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শিশুদের বাবা মা বা অন্য অভিভাবকদের আরো সচেতন হতে হবে। সরকার বা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর না করে নিজেদেরকেই কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে শিশুদের অনলাইন ব্যবহারের উপর। বর্তমান যুগে অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এমন এক অপরিহার্য বিষয় হয়ে উঠেছে যা থেকে তরুণ বা শিশুদেরকে দূরে সরিয়ে রাখা যাবে না। কিন্তু  পাশাপাশি এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বিপদ বাড়বে বই কমবে না। আর এর প্রাথমিক দায়িত্বটা বাবা-মায়ের উপরই বর্তায়। শিশুর ক্ষতি হলে বাবা-মায়ের ক্ষতিই হয় সবচেয়ে বেশী। তাই এমন হয়রানি থেকে কোমলমতি শিশুদের রক্ষা করতে সবার আগে সচেতন হতে হবে বাবা-মাকেই। আর এ জন্য সন্তানের সাথে বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে বাবা-মাকে। অনলাইনে কোনো হয়রানির শিকার হলে আপনার শিশু যেন তা আপনাকে জানায় সেটি তাকে বুঝিয়ে বলুন। এরকম পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আইনগত সহযোগিতা দেয় এমন প্রতিষ্ঠানের শরণাপন্ন হোন।

আবার এটাও মনে রাখতে হবে, যদি শিশুর যৌন হয়রানি, নিযার্তন ও হত্যা রোধ করা না যায় তা হলে পরিবারের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রেরও ক্ষতি হবে। আমরা কোনোভাবেই প্রত্যাশা করি না, কোনো শিশু এভাবে যৌন হয়রানি কিংবা নিষ্ঠুর হত্যার শিকার হোক। এটা রোধ করা না গেলে একদিকে যেমন সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে অন্যদিকে শিশুরাও থাকবে নিরাপত্তাহীন। তাই যে কোনো মূল্যে এটাকে রোধ করতে হবে।

এ ব্যাপারে সরকার বা রাষ্ট্রেরও দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। শিশু অধিকার সংরক্ষণ করা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদেরও দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের নিরাপত্তা যদি নিশ্চিত করা না যায় তবে তা কেবল দুভার্গ্যজনকই নয়, দেশের ভবিষ্যতের জন্যও হুমকিস্বরূপ।