ডায়াবেটিস : আরো অধিক মাত্রায় সচেতন হতে হবে সবাইকে

২০৫০ সালের মধ্যে ডায়াবেটিসে মৃত্যু বেড়ে দ্বিগুণ হবে। নতুন এক গবেষণায় সম্ভাব্য এ সংখ্যা ১৩০ কোটি বলে অনুমান করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে গবেষণায় বলা হয়েছে, ব্যবস্থাগত বিভেদ ও দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য মৃত্যুর এ সংখ্যা বাড়াবে।

চিকিৎসাবিজ্ঞান-বিষয়ক সাময়িকী ‘ল্যানসেট’-এ সম্প্রতি গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সব দেশেই ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়বে।

উল্লেখ্য যে, কানাডিয়ান জার্নাল অব ডায়াবেটিস এর তথ্যমতে দেখা যায় এদেশে আসা দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠির মধ্যে ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠির চেয়ে অনেক বেশী। 

টরন্টোর বাংলাদেশী ডাক্তার আবু আরিফ ইতিপূর্বে এক সাক্ষাৎকারে প্রবাসী কণ্ঠ-কে  বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে যারা অনেক দিন ধরে এদেশে আছেন তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টরেলসহ ডায়াবেটিসে ভোগেন। আর এদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি। আর যারা বয়োবৃদ্ধ অর্থাৎ সিনিয়র সিটিজেন তারা বেশিরভাগই হার্টের সমস্যা ও ডায়াবেটিস নিয়ে আসেন।

২০৫০ সালের মধ্যে ডায়াবেটিসে মৃত্যু বেড়ে দ্বিগুণ হবে। ছবি: ইন্ডিয়া টুডে

উল্লেখ্য যে, কানাডার শ্রমবাজারে নতুন ইমিগ্রেন্টদের প্রতি বৈষম্য যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে। এখানকার শ্রম নীতি মোটেও ইমিগ্রেন্টবান্ধব নয়। ফলে দারিদ্রতা ছায়ার মত ইমিগ্রেন্টদের পিছনে লেগেই থাকে। আর দারিদ্রতার অবসম্ভাবী পরিণতি হলো নির্দিষ্ট কিছু শারীরিক ও মানসিক রোগ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিস। এই রোগ মানুষের শারীরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয়।

গবেষণায় বলা হয়, বর্তমানে বিশে^ ৫২ কোটি ৯০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন বলে ধারণা করা হয়। মানুষের মৃত্যুর শীর্ষ ১০ কারণের একটি ডায়াবেটিস। এ ছাড়া ডায়াবেটিসের কারণে মানুষ শারীরিকভাবে সক্ষমতাও হারায়। এই সংখ্যা আগামী তিন দশকে বেড়ে ১৩০ কোটিতে দাঁড়াবে।

‘ল্যানসেট’-এর আরেক গবেষণায় বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশেও সংখ্যালঘু তথা কৃষ্ণাঙ্গ, হিস্পানিক, এশীয়দের মধ্যে ডায়াবেটিসের হার দেড় গুণ বেশি। এ জন্য মেডিকেল কলেজ অব উইসকনসিনের গবেষক ‘ক্রমবর্ধমান ডায়াবেটিস বৈষম্যকে’ দায়ী করেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘বর্ণবাদী নীতির কারণে একটি বিশেষ শ্রেণির মানুষ পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর খাবার ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত।’

টরন্টোর নিকটবর্তী হ্যামিলটনের ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে কানাডায় দক্ষিণ এশীয় ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে ডায়াবেটিস এবং স্থুলতার সমস্যাও শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠির চেয়ে দক্ষিণ এশীয় ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে বেশী।

কিন্তু কানাডায় দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠির মধ্যে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা এত বেশী কেন? এর কারণ খুঁজে পাওয়া সহজ নয় বলে জানিয়েছেন ম্যাক্মাস্টার ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপিকা সোনিয়া আনান্দ। সিবিসি নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে এখনো গবেষণা করা হচ্ছে। দক্ষিণ এশীয়দের জেনেটিক দিকটাও পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এটি আসলে জটিল একটি বিষয়। শুধু জেনেটিক বিষয়টি দায়ী তাও বলা যাচ্ছে না। সোনিয়া বলেন, লাইফস্টাইল বদলাতে হবে। যেমন নিয়মিত ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া -বিশেষ করে কম মাত্রায় কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠির সব বয়সের লোকদেরকেই এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।

সত্যিকার অর্থে ডায়াবেটিস রোগের এরকম ব্যপকতা দুশ্চিন্তার একটি বড় কারণ হয়ে দাড়িয়েছে আজ। এই বিষয়ে ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশনের প্রধান বিজ্ঞানী লিয়ান ওং বলেন, সম্ভাব্য খারাপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, বিনিয়োগে সব দেশের মনোযোগ দিতে হবে।

তবে আমরা মনে করি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। শুধু সরকরী প্রচেষ্টায় বা বিনিয়োগ বড়িয়ে সুফল পাওয়া যাবে না।