নবাগত শিশুরা জটিল স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে, নিতে হবে বিশেষ যত্ন

হ্যামিলটনের ম্যাকমাস্টার শিশু হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গীতা ওয়াহি কিছুদিন আগে সিবিসি নিউজকে বলেন, ‘কানাডায় ক্রমবর্ধমান সংখ্যক নবাগত শিশু স্থূলতা ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বিশেষ করে শিশুর স্থূলতার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে, এখানে আসার আগে নবাগত শিশুদের স্থূলতার হার প্রায়ই কম থাকে এবং সময়ের সাথে সাথে তাদের মধ্যে স্থূলতার হার বেড়ে কানাডার জনসংখ্যায় বর্তমান হারে পৌঁছে যায়।’

একই ইউনিভার্সিটির মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. সোনিয়া আনন্দ সিবিসি নিউজকে বলেন, ‘শিশুর জটিল রোগ থাকার মানে, এটি তার ভবিষ্যত স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলবে এবং তার জীবনকাল সংক্ষিপ্তও করতে পারে। তাই আমি এটিকে একটি জরুরী সমস্যা বলে মনে করি।’

গত ১৫ বছরের গবেষণা সমীক্ষাগুলোতে দেখা যায়, অভিবাসীরা কানাডীয়দের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভালো স্বাস্থ্য নিয়ে আসেন- তাদের মধ্যে স্বল্প সংখ্যকেরই জটিল রোগ যেমন হৃদরোগ, ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস থাকে। কিন্তু কানাডায় অবস্থানের সময়টা দীর্ঘতর হবার সঙ্গে সঙ্গে তাদের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে।

বিভিন্ন পরীক্ষায়ও দেখা গেছে, নবাগত এসব শিশু প্রায়শ পাশ্চাত্যের খাদ্যতালিকা ও অলস জীবনযাত্রা গ্রহণ করে। কিছু বাবা-মা শিশুর অতিরিক্ত খাওয়া এবং পাশ্চাত্যের খাদ্য তালিকায় প্রচুর ক্যালরি থাকার বিপদ সম্পর্কে অসচেতন।

শিশুদের সুস্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। ছবি : ওয়েলেসলী ইনস্টিটিউট

আরো আছে দারিদ্রতার প্রভাব। নতুন আসা ইমিগ্রেন্ট পরিবারের শিশুদের মধ্যে দারিদ্রতার হার প্রায় ৫০%। এরা কানাডায় এসেছেন গত ৫ বছরের মধ্যে এবং এদের মধ্যে অনেকেই দৃশ্যমান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য।

টরন্টোর ড্যানফোর্থ ও ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় প্রচুর সংখ্যক ইমিগ্রেন্ট থাকেন। টরন্টো স্টার এর প্রতিবেদনে বলা হয়, এই এলাকায় শিশু দারিদ্রতার হার টরন্টোতে তৃতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। এই এলাকার শতকরা প্রায় ৫৫ ভাগ শিশু দরিদ্র অবস্থায় বাস করছে। এই শিশু সন্তানেরা দারিদ্রতার শিকার হয়ে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

বছর দুই আগের এক হিসাবে দেখা যায় কানাডায়  প্রায় ১৩ লাখ শিশু দারিদ্রতার মধ্যে বাস করছে। টরন্টো স্টার এর এক সম্পাদকীয়তে এই পরিস্থিতিকে কানাডার জন্য লজ্জাজনক বলে আখ্যায়িত করেছে। ইউনিসেফ এর হিসাবে শিশু দারিদ্রতার তালিকায় বিশ্বের ৩৫টি ধনী দেশের মধ্যে কানাডার অবস্থান ২৬তম। অর্থাৎ বাজে অবস্থানে রয়েছে কানাডা।

কানাডায় আসার পর প্রচুর মানুষ তাদের খাওয়ার ধরণও পাল্টে ফেলেন। সে কারণেও তাদের ওজন খুব বেশি বেড়ে যায়। তাছাড়া অনেক দেশের সংস্কৃতিতে মোটাসোটা শিশুদের স্বাস্থ্যবান মনে করা হয়। অন্যদিকে স্বল্প আয়ের ইমিগ্রেন্ট পরিবারের পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের স্বল্পতা থাকে। এর বদলে স্বল্পমূল্যের কার্বহাইড্রট জাতীয় খাবার থাকে বেশী যা শিশুদের ওজন বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ। আরো আছে স্যোসাল মিডিয়া বা অনলাইন গেমে আসক্তি। ফলে শিশুদের শারীরিক পরিশ্রম একেবারেই হয় না। এ সব মিলিয়ে শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেক বেশী কানাডায়।

ইতিপূর্বে ২০০০ সালের মধ্যে কানাডা থেকে শিশু দারিদ্রতা দূর করার জন্য পার্লামেন্টে যে পরিকল্পা গ্রহণ করা হয়েছিল ৩৮ বছর আগে, সেই পরিকল্পনা আজো সফলতার মুখ দেখেনি। এই ব্যর্থতা কানাডার মতো একটি ধনী দেশের জন্য নিশ্চিতভাবেই লজ্জাকর।

গত কয়েক বছরে ফেডারেল সরকার ও অন্টারিও সরকার চাইল্ড টেক্স বেনিফিট বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বটে। কিন্তু মহামারী ও যুদ্ধ যে ভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় আকাশচুম্বী করে তুলেছে তা থেকে মুক্তি পাচ্ছেনা স্বল্প আয়ের ইমিগ্রেন্ট পরিবারগুলো এবং সেই সাথে  ঐ সকল পরিবারের শিশুরাও। তাই সরকারকে এখন নতুন করে ভাবতে হবে কি ভাবে শিশু দারিদ্রতা কমিয়ে আনা যায় এবং সেই সাথে শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষা করা যায়। আমাদের মনে রাখতে হবে, এই শিশুরাই কানাডার ভবিষ্যত। তাই এদের সুস্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে জরুরী ভিত্তিতে।