ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা : যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই

বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়া সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইউক্রেনে। পহেলা মার্চ (এই সম্পাদকীয় যখন লেখা হচ্ছে) হামলার ষষ্ঠ দিন অতিবাহিত হয়। দেশটির প্রায় সব জেলাতেই এখনও রুশ সৈন্যদের সঙ্গে লড়াই চলছে। এই পরিস্থিতিতে দুই পক্ষকে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছে সবাই। ইতিমধ্যে প্রথম দফা আলোচনা হয়ে গেছে। কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। এরই মধ্যে ইউক্রেনে হামলা বন্ধের জন্য তিনটি শর্ত সামনে এনেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, ‘ক্রিমিয়ার উপর রাশিয়ার সার্বভৌমত্ত্ব মেনে নিতে হবে, ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ করতে হবে এবং ইউক্রেন যেন একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র থাকে তার নিশ্চয়তা দিতে হবে।’

এই দাবী জানানোর পাশাপাশি পুতিন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীকে পরমাণু অস্ত্রও প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, রাশিয়ার কাছে ভয়ঙ্কর কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। সেগুলো শক্তিশালী দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। এর মধ্যে রয়েছে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। রাশিয়া থেকে মাত্র ২০ মিনিটে ব্রিটেন এবং ৩০ মিনিটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো। এই অস্ত্রগুলো খুবই ভয়ঙ্কর।

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার প্রতিবাদে টরন্টোতে মিছিল। ছবি : ক্রিস গোলভার/সিবিসি

অন্যদিকে হামলায় নাস্তানাবুদ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘আমাদের কেউ দমাতে পারবে না কারণ আমরা ইউক্রেনিয়ান।’

অর্থাৎ দুই পক্ষই অনড় তাদের অবস্থানে। এই অবস্থায় পরবর্তী আলোচনা কতদূর সফল হবে তা বলা মুশকিল। কিন্তু পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান না হলে ইউক্রেনে ক্রমশই বাড়বে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি। বাড়বে মৃত্যুর সংখ্যা যা বিবেকবান কোন মানুষেরই কাম্য হতে পারে না।

এদিকে কানাডা থেকে ইউক্রেনে পাঠানো হচ্ছে সামরিক সরঞ্জাম। ইউক্রেন সেনাবাহিনীর কাছে হেলমেটের মতো অপ্রাণঘাতী সামরিক সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। তবে কানাডা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সৈন্য পাঠানোর কথা নাকচ করে দিয়েছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে এমনটা জানানো হয়েছে। কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জলি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইউক্রেনের সৈন্যদের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট, গ্যাস মাস্ক ও নাইট ভিশন সরঞ্জামাদি প্রয়োজন। আমরা এমন অপ্রাণঘাতী সামরিক সরঞ্জামাদি পাঠাবো।

ইতিমধ্যে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি-সহ ২৬টি দেশ দাঁড়িয়েছে ইউক্রেনের পাশে। এর আগে ইউক্রেনে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এবং এক হাজার ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী অস্ত্র পাঠানোর কথা জানায় জার্মানি। আবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন করতে ন্যাটোর মাধ্যমে অস্ত্র পাঠাতে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

অর্থাৎ পরিস্থিতি ক্রমেই আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই যুদ্ধে জড়াচ্ছে না বলে দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন। অর্থাৎ সেদেশে সৈন্য পাঠাবেন না তিনি। কিন্তু পাশাপাশি এও বলছেন, ন্যাটো অঞ্চলের প্রতি ইঞ্চি জমি রক্ষা করা হবে।

বস্তুত ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা বিশ্ব রাজনীতিতে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তবে এটিও সত্যি যে, ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগদান করলে রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। কিন্তু এর জন্য পুতিন দুর্বল প্রতিবেশীর ওপর রীতিমতো যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে দেশটাকে দখল করে নেবে- এটা কোনো যুক্তিতেই সমর্থনযোগ্য নয়।  

পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কোন দিকে গড়ায়, তা ভেবে শঙ্কিত বিশ্ববাসী। অনেকে আবার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কাও করছেন। এ কারণে যুদ্ধ থামানোর আকুতি জানাচ্ছেন তারা। মানবতার দোহাই দিয়ে যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলতে চাই, যুদ্ধ নয়, শান্তি। আজকের যুগে যুদ্ধ কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিশ^বাসী এমনিতেই কঠিন সময় পার করছে করোনা মহামারীর কারণে। এর মধ্যে বড় ধরণের কোন যুদ্ধ শুরু হলে তা কখনোই কল্যাণ বয়ে আনবে না। যুদ্ধ মানুষের জীবন ও সম্পদের ধ্বংস ছাড়া বিশ্ব সভ্যতাকে কিছুই দিতে পারে না। তাই আমরা মনে করি, যে কোনো মূল্যে শান্তি বজায় রাখতে হবে বিশ্বে।