ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে

অ্যাঙ্গুস রেইড ইন্সটিটিউটের নতুন এক সমীক্ষায় দেখা গেছে কানাডায় ইসলামের প্রতি বিভিন্ন মাত্রায় বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান রয়েছে যা কুইবেকে সর্বোচ্চ।

সমীক্ষায় আরো বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে কুইবেকের বাইরে প্রতি পাঁচজন কানাডীয়র মধ্যে দুজন (৩৯%) ইসলাম সম্পর্কে প্রতিকূল দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। কুইবেকে সংখ্যাটা দাঁড়ায় জনসংখ্যার অর্ধেকে (৫২%)। সামগ্রিকভাবে এই ধর্ম সম্পর্কে কানাডীয়দের বিরূপ মনোভাব আরও জোরালো অবয়ব নেয়। ফলে এ ধর্মের অনুসারীরা কানাডার সমাজের অনেক ক্ষেত্রে অনাকাঙ্খিত হবার ঝুঁকির মুখে থাকেন।

উল্লেখ্য যে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কানাডায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে আক্রমণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় অ্যাক্টিভিস্ট ও সরকারি কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। দেশটিতে মুসলিমদের ওপর হামলার ঘটনা ২০২০ সালের চেয়ে ২০২১ সালে ৭১ শতাংশ বেড়ে যায়।

কানাডায় মুসলিমদের ওপর হামলার ঘটনা ২০২০ সালের চেয়ে ২০২১ সালে ৭১ শতাংশ বেড়ে যায়। ছবি : রয়টার্স

আমরা লক্ষ্য করছি মুসলমানদের উপর ছোটখাট বিদ্বেষী হামলার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে কানাডায়। মসজিদে হামলা, হিজাব পরিহিতা মহিলাদের উপর হামলা ঘটেই চলেছে এবং দিনে দিনে এর মাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এগুলো ঘটাচ্ছে কানাডার উগ্র শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা।

এই সহিংসতা সবচেয়ে বড় বেদনাদায়ক দৃষ্টান্ত হিসাবে সামনে আসে ২০১৭ সালে যখন কুইবেকের একটি মসজিদে ছয় মুসলিমকে হত্যা করা হয়। সেদিন ইসলামিক কালচারাল সেন্টার অব কুইবেকে মাগরিবের নামাজ আদায়কালে আলেকজান্ডার বিসোনেট নামের এক যুবক অতর্কিতে স্বয়ংক্রিয় বন্দুক হামলা চালায়। বন্দুক হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৬ জন মুসল্লি। হামলার ঘটনায় আহত হন আরো ১৯ জন।

পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৬ জুন লন্ডন অন্টারিওতেও ঘটে আরেক বেদনাদায়ক ঘটনা। এক সন্ত্রাসীর হামলায় প্রাণ হারান এক মুসলিম পরিবারের তিন প্রজন্মের চার সদস্য। আর অল্পের জন্য বেঁচে যায় ৯ বছরের এক শিশু। তবে আহত হয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। রাস্তা পারাপারের সময় অতর্কিতে তাঁদের উপর একটি পিকআপ ট্রাক উঠিয়ে দিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হামলা ঘটনো হয়। হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ন্যাথানিয়েল ভেল্টম্যান নামের ২০ বছর বয়সী এক শ্বেতাঙ্গ যুবককে আটক করে স্থানীয় পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ৪ জনকে হত্যা ও আরেকজনে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।

কানাডায় মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর হামলা হচ্ছে মূলত ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত চরম ডানপন্থী ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে। উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালে অন্টারিও পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয় এন্টি-ইসলামোফোবিয়া প্রস্তাব। কাছাকাছি সময়ে কানাডার ফেডারেল পার্লামেন্টেও পাশ হয় এন্টি-ইসলামোফোবিয়া প্রস্তাব। কিন্তু পরিস্থিতির কোন উন্নতি ঘটেনি আজও।

অন্টারিও লিবারেল পার্টির ঐ সময়কার ব্যাকবেঞ্চার এমপিপি নেটালী ডেস রোজিয়ার্স এই এন্টি-ইসলামোফোবিয়া প্রস্তাব উত্থাপিত করেছিলেন। তিনি পার্লামেন্টের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান সব ধরণের ঘৃণা, শত্রুতা, কুসংস্কার, বর্ণবাদ এবং অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবার জন্য। তিনি ক্রমবর্ধমান এন্টি মুসলিম বাগাড়ম্বরপূর্ণ উক্তি ও মনমানসিকতার বিরুদ্ধেও তীব্র নিন্দা জানানোর আহ্বান জানান এবং ধিক্কার জানানোর আহ্বান জানান সবধরণের ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে।

কিন্তু পরিস্থিতি আগে যা ছিল এখনও তাই রয়ে গেছে। স্মরণ করা যেতে পারে যে, ২০১৭ সালে অন্টারিওর প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ পার্টির তৎকালীন প্রধান প্যাট্রিক ব্রাউন-ও বলেছিলেন, ইসলামোফোবিয়া কোন কাল্পনিক বিষয় নয়। এটি এখানে সত্যি সত্যি ঘটছে। আমাদেরকে অবশ্যই এর নিন্দা জানাতে হবে অপকটভাবে। আমরা সবাই মিলে একত্রিত হয়েছি একটি বৈচিত্রময় সুন্দর দেশ গড়ার এবং এটিই আমাদের প্রধান বিবেচ্য বিষয়।

আমরাও মনে করি একটি বৈচিত্রময় সুন্দর দেশ গড়াই সবার লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। হিংস্রতা ও সন্ত্রাসের কোন ধর্ম নেই। ইসলামোফোবিয়ার নামে নিরীহ মানুষ হত্যা সন্ত্রাসবাদেরই নামান্তর। এই সন্ত্রাসবাদকে জয়ী হতে দেয়া যায় না। আর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এখন শুধু মুখের কথায় কাজ হবে না। আমাদেরকে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে।