কানাডায় বিবাহিত দম্পতির হার এখনও প্রাধান্য বজায় রেখেছে

কানাডার পরিবারপিছু সদস্য সংখ্যা ২০১৬ সালে দাঁড়িয়েছে ২.৪ জনে, যা ১৮৭১ সালে ছিলো ৫.৬ জন

সেপ্টেম্বর ২, ২০১৭

অটোয়া: গত ২ আগস্ট প্রকাশিত ২০১৬ সালের আদমশুমারির সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত থেকে পাওয়া প্রধান দিকগুলি এখানে তুলে ধরা হলো। এতে পরিবার, খানা (বাড়ি), বস্তুগত অবস্থা এবং ভাষা সম্পর্কিত বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করা হয়েছে:

–   কানাডার প্রতিটি পরিবারের সদস্য সংখ্যা যেখানে ১৮৭১ সালে ছিলো ৫.৬ জন সেখানে ২০১৬ সালে তা মাত্র ২.৪ জনে নেমে এসেছে।

–  ২০১৬ সালে ২০-৩৪ বছর বয়সী কানাডীয়দের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজনের বেশি, যা শতকরা হিসাবে ৩৪.৭ ভাগÑ বসবাস করেছে বাবা-মার মধ্যে অন্তত একজনের সঙ্গেÑ অন্যদিকে ২০০১ সালে এই সংখ্যা ছিলো ৩০.৬ শতাংশ। ওই একই সময়ের মধ্যে নিজের পরিবারের সঙ্গে বসবাসকারী একই বয়সের নাগরিকদের সংখ্যা ৪৯.১ শতাংশ থেকে কমে ৪১.৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বিবাহিত দম্পতির হার এখনও প্রাধান্য বজায় রেখেছে কানাডায়। ছবি : হাফিংটন পোস্ট

–  পরিবারের সঙ্গে এক বাড়িতে বসবাসের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে অন্টারিওতে। সেখানে তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের ৪২.১ শতাংশই বাবা-মার মধ্যে অন্তত একজনের সঙ্গে বাস করে, যা ২০০১ সালে ২০.৩ শতাংশ বেড়েছে। অন্টারিওর টরন্টো এবং অশোয়াতে এই হার ৪৭ শতাংশেরও বেশি।

–  ২০১৬ সালে মাত্র এক সদস্যের পরিবারের সংখ্যা ছিলো ২৮ শতাংশের সামান্য বেশি। ১৮৬৭ সালের পর থেকে এক সদস্যের পরিবারের এই সংখ্যা সর্বোচ্চ। এর ফলে যে কোনও সময়ের জন্য এটিই কানাডার বসবাসের সবচেয়ে সাধারণ ব্যবস্থা হিসাবে সামনে আসে। এদের মধ্যে আবার ৫৩.৭ শতাংশ হলো নারী।

–  কানাডার প্রতি ১০টি শিশুর মধ্যে তিন জনই ঐতিহ্যগত বসবাস রীতির বাইরে, যেমন কোনও একক বাবা অথবা একক মায়ের কাছে, সৎ বাবা-মার পরিবারে, দাদা-দাদি বা নানা-নানী অথবা পালক পিতা-মাতার সঙ্গে বসবাস করে। স্ট্যাটিস্টিক্স কানাডার হিসাব অনুযায়ী ২০১৬ সালে ১৪ বছর বা তার কম বয়সী পালিত শিশুর সংখ্যা ছিলো ২৮ হাজার ৩০ জন।

–  শিশু সন্তান রয়েছে এমন দম্পতির সংখ্যা ২০০১ সালে যেখানে ছিলো ৩১.৫ ভাগ, সেখানে ২০১৬ সালে তা কমে ২৬.৫ ভাগে দাঁড়িয়েছে।

–  ২০০১ সালে বাবা-মার মধ্যে যে কোনও একজনের সঙ্গে বসবাস করতো ১৭.৮ শতাংশ শিশু, সেখানে ২০১৬ সালে এ ধরণের শিশুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৯.২ শতাংশ, অর্থাৎ ১০ লাখেরও বেশি শিশু একক বাবা অথবা একক মায়ের সঙ্গে বসবাস করে। এদের মধ্যে ৮১.৩ শতাংশ বাস করে তাদের মায়ের সঙ্গে। অবশ্য ওই একই সময়ের মধ্যে বাবার সঙ্গে বসবাসকারী শিশুর সংখ্যা ৩৪.৫ শতাংশ বেড়েছে।

–  ২০১৬ সালে কানাডায় সমলিঙ্গের দম্পতির সংখ্যা ছিলো ৭২,৮৮০টি। ২০০৬ সালের তুলনায় এক্ষেত্রে বৃদ্ধি ঘটেছে ৬০.৭ শতাংশ। এদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ বিবাহিত, আর প্রায় ১২ শতাংশের শিশু রয়েছেÑ যাদের বেশিরভাগই নারী।

–  ২০১৬ সালে ৬৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী এক-তৃতীয়াংশ (৩৩ শতাংশ) নারী নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করেন, যা ২০০১ সালের চেয়ে কম। ২০০১ সালে এ ধরণের নারীর সংখ্যা ছিলো ৩৮.৩ শতাংশ। অন্যদিকে নিঃসঙ্গ জীবনযাপনকারী পুরুষের সংখ্যা ছিলো মাত্র ১৭.৫ শতাংশ। বয়স্ক নারীদের বিবাহিত অথবা অবিবাহিত দম্পতি হিসাবে জীবনযাপনের হার ২০০১ সালের ৪৪.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫১.৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

–  বিবাহিত দম্পতির হার এখনও প্রাধান্য বজায় রেখেছে। সব ধরণের দম্পতির মধ্যে অবিবাহিত দম্পতির হার ১৯৮১ সালের ৬.৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৬ সালে দাঁড়িয়েছে ২১.৩ শতাংশে।

–  একাধিক প্রজন্মের পরিবারÑ একই পরিবারে অন্তত তিন প্রজন্মের সদস্য রয়েছে এমন পরিবারের সংখ্যা ২০১৬ সালে ছিলো সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল। সব ধরণের পরিবারের মধ্যে বহু প্রজন্মের পরিবারের হার ২১.৭ শতাংশ থেকে ৩৭.৫ শতাংশে বেড়েছে। ২০১৬ সালে প্রায় ২২ লাখ কানাডীয় নাগরিক বহু প্রজন্মের পরিবারে বাসবাস করে।

–  বাড়িতে ইংরেজি অথবা ফরাসী ছাড়াও ভিন্ন কোনও ভাষায় কথা বলে এমন কানাডীয়র সংখ্যা ২০১৬ সালে ছিলো প্রায় ৭৬ লাখ। এধরণের কানাডীয়র সংখ্যা ২০১১ সাল থেকে বেড়েছে ১৪.৫ শতাংশ হারে।

–  ইংরেজি ও ফরাসী এই দুই ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা গত বছর ছিলো সর্বকালের সবচেয়ে বেশি ১৮ শতাংশ। যাদের মাতৃভাষা ফরাসী এমন মানুষের সংখ্যা ২০১১ সালের ২২ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২১.৩ শতাংশে। কুইবেকে এদের হার পাঁচ বছর আগের ৭৯.৭ শতাংশ থেকে কমে ২০১৬ সালে দাঁড়িয়েছে ৭৮.৪ শতাংশে।

–  কানাডায় সবচেয়ে দ্রুত বিকাশশীল ভাষা ছিলো তাগালগ (ফিলিপিনো)। ২০১১ সালের চেয়ে ৩৫ শতাংশ হারে বেড়েছে এই ভাষাভাষীর সংখ্যা। এর পরেই রয়েছে আরবি (৩০ শতাংশ), ফারসি (২৬.৭ শতাংশ), হিন্দি (২৬.১ শতাংশ) এবং উর্দু (২৫ শতাংশ)।

–  ২লাখ ২৮ হাজার ৭৭০ জনের মতো মানুষ তাদের বাড়িতে কোনও একটি স্থানীয় ভাষা ব্যবহার করে বলে জানা যায়। অন্যদিকে স্থানীয় ভাষাই যাদের মাতৃভাষা এমন মানুষের সংখ্যা ২ লাখ ১৩ হাজার ২৩০ জনের মতো। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, অধিকতর বেশি সংখ্যক মানুষ স্থানীয় ভাষাকে তাদের দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে গ্রহণ করছে।

–  জানা গেছে, কানাডার জনসংখ্যার মোট ১৯.৪ শতাংশ মানুষ তাদের ঘরে একটির বেশি ভাষায় কথা বলে। ২০১১ সালে এমন মানুষের সংখ্যা ছিলো ১৭.৫ শতাংশ।

-কানাডিয়ান প্রেস