ট্রুডোর নাম নিয়ে মাতামাতি: প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে দেখা করলো শিশু জাস্টিন ট্রুডো

আগস্ট ১৫, ২০১৭

গত বছর ফেব্র“য়ারি মাসে ক্যালগেরিতে আসা একটি সিরীয় পরিবার তাদের ছেলের নাম রাখে সেই ব্যক্তির নামে যিনি তাদের কানাডায় বসবাস সম্ভব করেছেন।

আফরা হাজ হামুদ ও মোহাম্মেদ বেলাল তাদের পরিবারে যোগ হওয়া সবচেয়ে ছোট সদস্য অর্থাৎ তাদের ছেলের নাম রাখেন জাস্টিন ট্রুডো আদম বিলাল।

বাবা-মা তাদের সন্তানের নাম রাখার ব্যাপারে প্রায় দুমাস আগে থেকে আলোচনা করছিলেন।

হামুদ ব্যাখ্যা করে বলেন, “আমার স্বামী বলেন, আমরা যদি তার মতো ছেলের নাম জাস্টিন ট্রুডো রাখি তাহলে কেমন হয়?”

“তার কথা শুনে আমি একটু যেন আহতই হয়েছিলাম। আমি সামান্য হাসলাম, তারপর বলালাম, ‘হ্যা, এতে কোনও সমস্যা নেই। এটা হতে পারে তোমার তরফ থেকে জাস্টিন ট্রুডোকে ছোট্ট করে ধন্যবাদ জানানোর মতো।’”

দুমাস বয়সী শিশু জাস্টিন ট্রুডো আদম বিলাল ক্যালগেরিতে এক অনুষ্ঠানে তার মিতা প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে দেখা করে। শিশু জাস্টিন এক বছর আগে কানাডায় আসা একটি সিরীয় পরিবারে গত মে মাসে জন্মগ্রহণ করে। ছবি : হাফিংটন পোস্ট

এই পরিবারটি প্রায় ছয় বছর আগে সিরিয়া ছেড়ে আসে। গত বছরের ফেব্র“য়ারি মাসে কনাডায় পৌঁছার আগে তারা তিন বছর লেবাননে কাটিয়েছে।

ট্রুডো ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিন পরই কানাডা যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে হাজার হাজার উদ্বাস্তুকে গ্রহণ করতে রাজি হয়। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে স্পন্সরশিপের মাধ্যমে আরও কয়েক হাজার উদ্বাস্তু এদেশে পৌঁছে।

হামুদ বলেন, “আমাদের জীবন এখন প্রতিদিনই অপেক্ষাকৃত ভালো হয়ে উঠছে। শুরুতে জীবন ছিলো কিছুটা কঠিন কারণ আমাদের বড় ধরণের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, এখন আমরা ঠিক আছি, ভালো আছি।”

তিন বলেন, আরবি ছাড়া অন্য কোনও ভাষার নাম পছন্দ করাটা সস্পূর্ণ ভিন্ন, কিন্তু এটি এই পরিবারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তার ভাষায়, “নামটি হবে একটি বিশাল কাহিনী। কারণ আরবি নাম আর ইংরেজি নামের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। সিরিয়ায় আমরা সন্তানের নাম রাখি বাবা-মার নাম অনুসারে, যেমন আমার বাবার নামে অথবা আমার স্বামীর বাবার নামানুসারে। কিন্তু এখন আমার ছেলের নাম রেখেছি জাস্টিন ট্রুডোর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।”

উল্লেখ্য, নামকরণের মাধ্যমে সম্মান প্রদর্শনের দিক থেকে এই পরিবারটিই একমাত্র পরিবার নয়।

গত নভেম্বরে আলবার্টার রেড ডিয়ার এলাকায় নবাগত একটি পরিবার তাদের নবজাতক সন্তানের নাম রাখে জাস্টিন দোসো। ওই পরিবারের কর্তা আহমেদ দোসো বলেন, এটা হলো কানাডার ২৩তম প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন। দোসো বলেন, “আমার জন্য তিনি চমৎকার এবং সহানুভূতিশীল এক ব্যক্তিত্ব, আমি আশা করি প্রাচ্য বা পাশ্চাত্যের সব নেতাই যেন তার মতো হন।” দোসো বলেন, উত্তম চরিত্রের অধিকারী কোনও ব্যক্তির নামে সন্তানের নাম রাখা আরবের পুরনো ঐতিহ্য।

আলবার্টা প্রভিন্সের রেড ডিয়ার অঞ্চলে নিজ ঘরে একজন অনুবাদকের সহায়তায় আহমেদ দোসো ব্যাখ্যা করছিলেন যে, উত্তম চরিত্রের ব্যক্তির নামে সন্তানের নামকরণের পুরনো ঐতিহ্য মেনেই তিনি তার পঞ্চম এবং কানাডায় জন্মগ্রহণকারী প্রথম ছেলেকে জাস্টিন নামে ডাকার সিদ্ধান্ত নেন।

দোসো বলেন, “এটা সত্য যে জাস্টিন নামটি পাশ্চাত্যের এবং আমরা প্রাচ্যের মানুষ এবং আরব, কিন্তু ট্রুডোর প্রতি শ্রদ্ধা থেকে ছেলের নাম জাস্টিন রাখা নিয়ে আমার কোনও সমস্যা ছিলো নাÑ কারণ আমি তাকে পছন্দ করি।”

জাস্টিন দোসোর জন্ম হয় গত ২রা নভেম্বর, দোসোর পরিবার কানাডায় আসার নয় মাস পর। ২০১৪ সালের শেষদিকে তারা সিরিয়া থেকে পালিয়ে আসেন এবং তুরস্কের একটি উদ্বাস্তু শিবিরে প্রায় এক বছর অবস্থান করেন। সেখানেই তিনি টেলিভিশনে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোকে টরন্টোর পিয়ারসন বিমানবন্দরে কানাডায় আসা প্রথম সিরীয় উদ্বাস্তুদের শুভেচ্ছা জানাতে দেখেন।

অন্টারিওর নর্থ ইয়র্কে একটি নবাগত পরিবার গত জানুয়ারিতে একই কাজ করেছে। এরপর ফেব্র“য়ারিতে অন্টারিওর উইন্ডসরে আরেকটি পরিবারে আরেক জাস্টিনের জন্ম হয়।  Ñসিবিসি ও হাফিংটন পোস্ট