প্রকাশিত হয়েছে জসিম মল্লিকের জীবনী ভিত্তিক গ্রন্থ হৃদয়ে লিখেছি নাম

একুশের গ্রন্থমেলা ২০২৪ উপলক্ষ্যে প্রকাশিত হয়েছে জসিম মল্লিকের জীবনীভিত্তিক গ্রন্থ হৃদয়ে লিখেছি নাম। বইটি প্রকাশ করেছে খ্যাতনামা প্রকাশক অনন্যা। প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। ছয়শ পৃষ্ঠার গ্রন্থটির মূল্য ৮০০ শত টাকা। এখানে বইটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে লেখকের বক্তব্য এবং লেখক পরিচিতি তুলে ধরা হলো..

জসিম মল্লিক

মানুষ তার পুরো জীবনের কথা কখনও বলতে পারে না। বলা সম্ভব না। প্রয়োজনও নাই। আমার মতো সাধারণ মানুষের জীবনী লেখার চেষ্টা করা হাস্যকর। সেই চেষ্টা আমি করিনি। তবে জীবনী যে লেখা যাবে না এমন না। যে কারো জীবনী লেখা যেতে পারে। জীবনী শুধু বিখ্যাত লোকের হবে সাধারণ মানুষের হতে পারবে না এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তেলাপোকারও জীবনী হতে পারে। কেরানীরও জীবনী হতে পারে। জীবনী না হলেও এই গ্রন্থে আমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে। আমি আমার অনেকগুলো গল্প উপন্যাসে নিজের কথা বলেছি। নতুন করে আর কিছু লেখার নাই। এই গ্রন্থের লেখাগুলো কোনো পরিকল্পনা করে লেখা হয়নি। যখন যেটা মনে হয়েছে লিখেছি। নিজের অভিজ্ঞতা, মনোজগত, টানাপোড়েন, মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের বিচিত্র রুপ, সুখ দুঃখের অনুভূতি, ভাই বোন, মা বাবা, সন্তান, বন্ধুদের নিয়ে লিখতে আমি সবসময় ভালবাসি। মানুষের মনোজগত লেখায় বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। যে দেশটায় থাকি সেই কানাডা এবং নিজের দেশের প্রতি ভালবাসা ও আকুলতার কথা আছে বই জুড়ে। আছে আমেরিকা বিশেষকরে নিউইয়র্কের কথা, আছে মানুষের অন্তরের কথাও। যাদের সাথে সখ্যতা হয়েছে, যারা সামান্যতম ভালবাসা দিয়েছে তাদের কথা আছে। আমি সহজে কিছু ভুলি না। যারা দূরে সরে গেছে, অবহেলা দিয়েছে তাদের কথাও আছে। আমি সাধারণ একজন মানুষ কিন্তু আমার অভিজ্ঞতাগুলো অসাধারণ। চেষ্টা করেছি সেই সব অভিজ্ঞতা গুছিয়ে সুখপাঠ্য করে তুলতে। যারা আমার সহজ সরল ভাষায় লেখা পছন্দ করেন এই গ্রন্থ তাদের আনন্দ দেবে, ভাবনার খোরাক জোগাবে এটুকু বলতে পারি। এক জীবনের নানা চরাই উৎরাই, লড়াই সংগ্রাম, চাওয়া পাওয়া, স্বার্থপরতা, ভালবাসা, প্রেম, গোপনীয়তা, উপেক্ষা আর অবহেলা থাকে। সেসব তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি।

লেখক পরিচিতিঃ জসিম মল্লিক। কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক। জীবন যে এক আশ্চর্য্য গল্প, বয়ান; জসিম মল্লিক তার নিপুণ কারিগর। যে জীবনকে নিবারন করা যায় না, অনিবার্য; জসিম সেই কাহিনীই তুলে ধরেন। গভীর বোধ, বেদনা আর বিহ্বলতা না থাকলে জীবনকে কতটুকুই বা বোঝা যায়। বোঝে মানুষ? হয়তো তা বুঝতেই জসিম ছুটে যান বরিশাল থেকে টরন্টো, মরক্কো থেকে মেক্সিকো, দুবাই থেকে ডালাস, আবার টোকিও থেকে মিলানো। পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। ডানা ঝাপটানো পাখির মতোন। এই বয়ে চলা, উড়ে চলাই তাকে ঋদ্ধ করেছে, জীবনের বোধ ও গভীরতায় করেছে সমৃদ্ধ। তাই হতাশাকে প্রশ্রয় দেন না তিনি। জসিমের লেখায় ও যাপনে তাই ফুটে উঠে। কেননা জসিম জানেন, জীবন মানেই ব্যর্থতা না, সেখানে সফলতাও আছে,  শুধু ব্যর্থ বলে কোন জীবন নেই। তা তিনি বিশ্বাসও করেন না। তাই জসিমের চরিত্ররা হারতে হারতে জিতে যায়, জিততে জিততে হেরে যায়। কিন্তু সেই হেরে যাওয়াটা সৈয়দ ওয়ালি উল্লাহর উজানে মৃত্যুর মতো। পাওলো কোয়েলহোর আবার তল থেকে উঠে আসার মতো, হারাকু মুরাকামির ভাঙচুর ভাঙচুর শব্দের মধ্যেও জয়ের প্রবল স্বপ্ন। বিশ্ব ভূগোলের অভিজ্ঞতা ও বাসিন্দা তিনি। তাই তার কাহিনী, চরিত্র নির্দিষ্ট কোন ভূগোল নির্দেশ করে না। তাই তার বলা রাঢ়িখালের মেয়েটির গল্প হয়ে উঠে টরন্টোর জেনিফারের গল্প। এই যে স্পর্শ বিন্দুকে ছুঁয়ে যাওয়া ও এক হওয়া-এটাই লেখককে বৈশ্বিক মর্যাদা দেয়। আন্তর্জাতিকতায় জসিম মল্লিক তাই ভিন্নধারার এক কাহিনীকথক। স্বতন্ত্র, বলিষ্ট, উচ্চ মার্গীয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেছেন। সাপ্তাহিক বিচিত্রা ও সাপ্তাহিক২০০০ সাংবাদিকতা করেছেন। দেশ বিদেশের বাংলা পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। ২০২২ সালে সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পুরস্কার পেয়েছেন। জন্ম বরিশালে ১৯৬১ সালে।

লেখক জসিম মল্লিক