প্রবাসে পরহিতকর্ম – ৫৩

নভেম্বর ৪, ২০১৮

রীনা গুলশান

উপরের লিভিং রূমে ৬/৭ জনের উচ্চ কণ্ঠ ঘন্টা থেকে ঘন্টা পরিবাহিত হচ্ছে। আজতো সময় নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। একেবারে শনি, রবি, সোম মানে যাকে বলে তিনদিনের ছুটি। লং উইকএন্ড। তাই তাদের আড্ডা এখন ‘হু কেয়ার্স’ টাইপ। যদিও তাদের উচ্চকিত কণ্ঠ আমার কানে মধুবর্ষণ করছিল। বাচ্চারা বাড়ী বসে আড্ডা দিলে আমার খুবই ভাল লাগে। বাইরে বরং যতক্ষণ থাকে আমার এক ধরনের অনাকাঙ্খিত টেনশন হতে থাকে। এক বার খাবার দিয়ে এসেছি। ওদের আড্ডা ধীরতা দেখে আবার চট করে ‘মোরগ পোলাউ’ চড়িয়ে দিলাম। এটা করতে আমার খুব বেশী সময় লাগে না। রাত আটটার দিকে ওরা নীচে নেমে এলো। এবারে ছেলের বাবা মায়ের ডাক পড়লো। এবারে আর ফরমাল কক্ষে নয়, একেবারে ফ্যামিলি রূমেই সব চলে এলো। এখন মূল আলোচনা। পুরা প্লানটা ওদের হাতেত চলে এসেছে। ওরা বলছে, এখন ২০১৫ (তখন ছিলো ২০১৫ সাল), ২০১৯ সালে এই কন্ডো হ্যান্ডওভার করে দেবে। জায়গাটাতো অসম্ভব সুন্দর এবং আকর্ষনীয়। এজাক্সের একদম মধ্যভাগে। এবং মেইনইন্টারসেকশন। হাসপাতাল, সুপার মার্কেট, মল, আউটলেট মল সব হাতের কাছে। ওদের প্লানে দেখলাম কন্ডো বিল্ডিং টা ১০ তলা হবে। ইউনিট হবে ৩১৮ টি। ৪২০ ডলার প্রতি স্কোয়ার ফিটে দিতে হবে। এবং শুরুতে, গাড়ির পার্কিং এর জন্য ৫ হাজার ডলার দেওয়া লাগবে। লকারের জন্য ৫ হাজার ডলার দেওয়া লাগবে। এরপরই মূল পয়েন্ট। সাইনিং মানি ডিপোজিট দেওয়া লাগবে ৩৫০০ ডলার। এছাড়া প্রতি বছর ৫% ওদের দেওয়া লাগবে, মূল টাকার যতদিন না তারা কন্ডোটি ক্রেতাদেরকে হ্যান্ডওভার করবে। আমরা সম্মতি প্রকাশ করলাম। আমার হাসবেন্ড যেহেতু একজন ইঞ্জিনিয়ার, সে দেখলো plan টা সত্যিই সুন্দর। বৈশিষ্টপূর্ণ। এক তলা এবং দোতালা সম্পূর্ণ মার্কেট এবং মল হবে। বাড়ির প্লানটা খুবই চিত্তকর্ষক। অন্যত্র যে সব কন্ডো দেখা যায় ঠিক সেই ধরনের ম্যাচ বক্স মার্কা নয়। একেবারে খোলামেলা ধারনের। ওর দুই বন্ধু নিলো দুই বেডরুমের কন্ডো। আমার ছেলে নিলো একটি বেডরূম উইথ ডেন। এবং আমার যেটা সবচেয়ে ভাল লাগলো সেটা হলো প্রতিটি কনডোতে লম্বা ব্যালকনি আছে। কন্ডোগুলো মাঝখানে থাকবে সুইমিং পুল এবং শিশুদের পার্ক। এছাড়া কন্ডোর তিনতলাতে থাকবে বিশেষ বহুবিধ কার্যকরী জিনিষ। মূল বাসস্থান শুরু হবে ৪ তলা থেকে। পার্টি রূম, মিটিং রূম ইত্যাদি। ৪ তলাতে শুধু মাত্র জিম রূম। অসম্ভব সুন্দর পরিকল্পনা । যাই হোক আমাদের সবার খুউবই পছন্দ হলো। অতএব ওরা সব সাইন করে যার যার মত সাইনিং মানিও জমা দিয়ে দিল। ২০১৫ তে সব কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন হয়ে গেলো। এবং কন্ট্রাক্টটেই লেখা ছিল ‘লেমাইন ইনভেস্টমেন্ট গ্র“প। কন্ডোর ক্লোজিং ২০১৯ সালের শীতে। এরা অনলাইনে এবং পেপারে বিজ্ঞাপন দেবার পর প্রচুর সাড়া পেয়েছিল। ইতিমধ্যে তার ভিআইপি সেলও আরম্ভ করে দিয়েছে। ভিআইপি সেলের ২ দিনের মধ্যে ৯০% বিক্রি হয়ে গেল। আমি এটা শুনে যারপর নাই হতবাক হয়ে গেলাম। মূলত ‘ GO’ স্টেশন থেকে দুই মিনিটের হাটার দূরত্বে বলেই ডিমান্ড এতটা বেড়ে গেছে। কারণ, ‘ GO’ স্টেশনে গাড়ি পার্কিং এও অনেক টাকা। যার জন্য, বিশেষ করে যারা সপ্তাহে ৫/৬ দিন কাজ করে তারা সবাই এই কন্ডোর উপর ইন্টারেস্টেড হলো। তারা ভাবলো একদিকে টাকাও সেভ হবে। আবার সময়ও সেভ হবে। সকাল ৬ টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ট্রাফিক সম্পর্কে মোটামুটি সকলেই অবহিত। ঐ পথ দিয়ে প্রতিদিন আমি যাতায়ত করি। ২ মাসের মধ্যেই দেখলাম বেশ বড় একটা ফ্লাটের মতো করে ফেলেছে। বাড়িটার দেওয়ালের গায়েই ছিল ‘লেমাইন ইনভেস্টমেন্ট গ্র“পের সচিত্র বিজ্ঞাপন। অতি চমৎকার এবং খুবই কালারফুল বিজ্ঞাপন। দেখেই মন ভালো হওয়ার মতো বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনের মধ্যেই মোটামুটি কন্ডোর প্লানটা দেওয়া আছে। এবং ওদের সঙ্গে যোগযোগের ফোন, ইমেইল নম্বর সব দেওয়া আছে। প্রতিদিন ওখান দিয়ে যেতাম আর ভাবতাম, আহা এইতো বেশ হলো, আমার খুব ধারে কাছেইতো থাকবে আমার ছেলে রুম্মান। অফিসে যাওয়া আসার পথেই চোখে পড়বে, ছেলের বাসস্থান। এদিকে ওরা প্রতিদিন নানান পরিকল্পনা করে কন্ডো হাতে পেলে কি করবে। আমার ছেলের পরিকল্পনা হলো, কন্ডো হাতে পেলেই ভাড়া দিয়ে দিবে। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো বিক্রি করে দিবে। কারণ আমার ছেলেটার আবার একটু বড় পরিবেশে থাকার অভ্যাস হয়ে গেছে। তবে ওর অন্যান্য বন্ধুরা, সবাই এই কন্ডোতেই উঠবে। কারাম বাদে। কারামের এখন ভাল পয়সা। সে এই কন্ডো কিনেছে ব্যবসার জন্য। যার জন্য সে দু’কামরার কন্ডো বুকিং দিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে এমনকি টরন্টোতে লেমাইন গ্র“পের অফিসে ক্রেতাদের সাথে সামনা-সামনি একটা মিটিং হয়ে গেল। তারা ক্রেতাদের সাথে সামনা-সামনি মত বিনিময় করলো। আমার এই কনসেপ্টটা খুব ভালো লাগলো। কারণ, ক্রেতারা যেহেতু আজকাল খুবই সচেতন হয়ে থাকে, তাই ওদেরও কোন না কোন সুচিন্তিত মতবাদ থাকতে পারে। (চলবে)

রীনা গুলশান, টরন্টো

gulshanararina@gmail.com