সিংহভাগ কানাডিয়ানই চাচ্ছেন আগামী নির্বাচনের আগে জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগ করুক

তবে ট্রুডো মনে করেন তিনি দেশকে সঠিক পথেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩ : গত কয়েক মাসে পরিচালিত বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে লিবারেল পার্টির প্রধান এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর জনপ্রিয়তা বাড়ছে না। তবে ক্রমেই বাড়ছে প্রধান বিরোধী দল কনজার্ভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পয়লিভরে’র জনপ্রিয়তা।

গত সেপ্টেম্বরে একান্তভাবেই গ্লোবাল নিউজের জন্য পরিচালিত Ipsos-Reid-এর এক জরিপে ৪০ শতাংশ কানাডিয়ান জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পয়লিভরে তাদের সেরা পছন্দ।

পয়লিভরে’র জনপ্রিয়তা এক বছর আগের চেয়ে পাঁচ পয়েন্ট বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোই সেরা পছন্দ এমন জনমত বছরের পর বছর ধরে ৩১ শতাংশে স্থির আছে।

অন্যদিকে The Leger poll এর সাম্প্রতিক এক জরিপের বরাত দিয়ে গত ১৫ নভেম্বর দি কানাডিয়ান প্রেস জানায় – বর্তমানে প্রায় প্রতি তিনজনের মধ্যে দুইজনই জাস্টিন ট্রুডোর প্রতি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করছেন এবং অর্ধেক কানাডিয়ানই চাচ্ছেন আগামী নির্বাচনের আগে তিনি পদত্যাগ করুক।

কানাডার প্রতি তিনজনের মধ্যে দুইজনই ট্রুডোর প্রতি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করছেন এবং অর্ধেকই চাচ্ছেন আগামী নির্বাচনের আগে তিনি পদত্যাগ করুক। ছবি: দিলজিক.কম

ট্রুডো ও তাঁর সরকারের প্রতি জনগণের ব্যাপক অসন্তোষের অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে আছে বাড়ির মূল্য ও ভাড়া আকাশচুম্বী হওয়া, দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়া, স্বাস্থ্য সেবা যথাযথভাবে না পাওয়া ইত্যাদি। 

জনগণের এই চাওয়ার প্রেক্ষিতে জাস্টিন ট্রুডোর প্রতিক্রিয়া কি? তিনি কি পদত্যাগ করবেন? নাকি জরিপ ফলাফলকে উপেক্ষা করে তাঁর কাজ চলিয়ে যাবেন?

মাস তিনেক আগে রিসার্স কো. নামের একটি জরিপ প্রতিষ্ঠানের জরিপে দেখা গেছে -জাস্টিন ট্রুডো গত ৫৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ প্রধানমন্ত্রীর তকমা পেয়েছেন। ৩০ শতাংশ কানাডিয়ান এ বিষয়ে একমত। তবে কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার হলো, জাস্টিন ট্রুডোর প্রয়াত বাবা পিয়েরে ট্রুডো পেয়েছেন দেশের  সবচেয়ে প্রিয় নেতার মুকুট।

ইপসোস এর সিইও ডেরিল ব্রিকার বলেন, “জরিপ থেকে এটা স্পষ্ট, আজ যদি নির্বাচন হয় তাহলে কনজারভেটিভ পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করতে পারে।” জীবনযাত্রার ব্যয়, আবাসনের প্রাপ্যতা ও মূল্যস্ফীতির উল্লেখ করে ব্রিকার বলেন, “এই মুহূর্তে কানাডিয়ানরা যেভাবে ভাবছেন সে বিষয়ে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে, তাঁদের মধ্যে দেশ যেদিকে যাচ্ছে তা নিয়ে সত্যিকারের অসন্তোষ আছে। নির্দিষ্ট করে বললে, সেইসব গুরুতর বিষয়ে যেগুলি তাঁদের ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত।”

কানাডা এখন অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা ও গৃহায়ন সম্পর্কিত যেসব প্রধান সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে সে বিষয়ে জরিপে দেখা যায়, তিনটি ক্ষেত্রেই পয়লিভরে’রই সেরা পরিকল্পনা আছে বলে বহু কানাডিয়ান মনে করেন।

আঞ্চলিক ক্ষেত্রে, কুইবেক ছাড়া প্রতিটি প্রদেশ ও অঞ্চলেই পয়লিভরে’র পক্ষে আনুকূল্য তালিকার শীর্ষে রয়েছে। টেরিটোরিগুলি এই জরিপে অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

জরিপে দেখা যায়, অন্টারিওতে পছন্দের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পয়লিভরে-কে এগিয়ে রেখেছে ৪২ শতাংশ মানুষের সমর্থন, সেই তুলনায় ট্রুডোর সমর্থন ৩৮ শতাংশ।

ইপসোস জরিপের ফলাফলে বোঝা যাচ্ছে, ৬০ শতাংশ কানাডিয়ান মনে করেন, এখন ট্রুডোর নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো এবং পরবর্তী নির্বাচনে লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব দেয়ার জন্য অন্য কাউকে সামনে নিয়ে আসা উচিত। এই সংখ্যাটি ২০২২ সালের এক জরিপের চেয়ে বেশি। সেই জরিপে একই কথা বলেছিল ৫৪ শতাংশ উত্তরদাতা।

বর্তমান সংখ্যালঘু লিবারেল সরকারের পক্ষে এনডিপির সমর্থন ও আস্থার চুক্তি রয়েছে। এনডিপি ২০২৫ সালের শরতে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত সরকারকে সমর্থন দিতে সম্মত হয়েছে।

বিনিময়ে লিবারেল দল ডেন্টাল কেয়ার এবং ফার্মাকেয়ারের মত এনডিপির অগ্রাধিকারের বিষয়গুলি এগিয়ে নিতে সম্মত হয়।

৫৩ শতাংশ উত্তরদাতা অবশ্য বলেন, এনডিপির জন্য লিবারেল দলের প্রতি সমর্থন দেয়া বন্ধ করা এবং নির্বাচন আদায় করার এখনই সময়। অবশিষ্ট উত্তরদাতারা মনে করেন, এনডিপির উচিৎ নির্বাচনের জন্য চাপ সৃষ্টি না করে লিবারেল সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখা।

তবে জনমতের এই প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। গত ২৩ ডিসেম্বর গ্লোবাল নিউজে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি জানি যে লোকেরা আমার প্রতি হতাশ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের ভোটাররা যারা ২০১৫ সালের নির্বাচনে লিবারেল পার্টিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠনে সহায়তা করেছিল। আট বছর পর আমরা এখন যে বৈশি^ক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি সেটার কারণে সেদিনের সেই তরুণ প্রজন্ম আজ বাড়ি ভাড়া দিতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে, নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে এখন তারা চিন্তিত।

জাস্টিন ট্রুডো বলেন, জনমত যাই হোক, আমি এই পরিস্থিতিতে সরে দাঁড়াচ্ছি না। এটা হাতপা গুটিয়ে নেওয়ার সময় না। বরং আমি দেশবাসীর স্বার্থে আরো জোরালো পদক্ষেপ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাব।

তবে অতি সাম্প্রতিক জরিপেও দেখা গেছে ৬৯% কানাডিয়ান মনে করেন দলীয় প্রধান ও সরকার প্রধানের পদ থেকে জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগ করা উচিৎ। গত নভেম্বরে পরিচালিত Ipsos poll এর জরিপ থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়। অবশ্য একই জরিপে এটাও দেখা গেছে ৬৩% কানাডিয়ান মনে করেন ট্রুডো পদত্যাগ করবেন না।

ট্রুডো বলেন, আমাদের সরকারে একটা দুর্দান্ত টিম রয়েছে যারা কানাডিয়ানদের বর্তমান সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এই সমস্যাগুলোর মধ্যে আছে আবাসন, খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি, জলবায়ুসহ আরো কিছু সমস্যা।

তবে সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের বর্তমান অসন্তোষ সত্ব্যেও ট্রুডো মনে করেন তিনি দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। 

সাম্প্রতিক সময়ে জাস্টিন ট্রুডোকে নিয়ে আরো কিছু জরিপ ফলাফল 

গত ২৩ মার্চ সিটিভি নিউজ জানায়, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বিষয়ে মতের দিক থেকে কানাডিয়ানরা বিভক্ত। জাতীয় পর্যায়ের এক নতুন জরিপের তথ্যমতে, প্রতি পাঁচজন কানাডিয়ানের মধ্যে দুজন বলেছেন, তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে পছন্দ করেন, অন্যদিকে অর্ধেকেরও সামান্য বেশি সংখ্যক বলেছেন, তাঁরা করেন না।

আট বছর দায়িত্ব পালনকারী পূর্বসূরীদের তুলনায় ট্রুডোর প্রতি সমর্থনের দীর্ঘদিনের প্রবণতার চিত্র তুলে ধরার লক্ষে এঙ্গুস রেইডের পরিচালিত সমীক্ষায় যে ফলাফল পাওয়া যায় তা বহুলাংশে অনুকূল, যদিও একটি বড়ো অংশ তাঁকে সমর্থন করেননি।

ট্রুডোর প্রতি সম্মতি দেন ৪০ শতাংশ মানুষ। এটি তাঁর সমান সময় দায়িত্ব পালনকারী আগের তিনজন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জনগণের সম্মতির হারের চেয়ে বেশি। শুধু Jean Chrétien এদিক থেকে  ট্রুডোকে ছাড়িয়ে গেছেন।

ট্রুডোর প্রতি অনুমোদনের এই হার পাওয়া গেছে গত মে মাসের শুরুর দিকে ১৬০০ প্রাপ্তবয়স্ক কানাডিয়ানের ওপর পরিচালিত সমীক্ষায়।

আট বছর দায়িত্বে থাকার পর ট্রুডোর প্রতি জনগণের অনুমোদনের হার সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপারের চেয়ে চার পয়েন্ট বেশি, একই সঙ্গে এই হার তাঁর বাবা পিয়েরে এলিয়ট ট্রুডোর চেয়ে আট পয়েন্ট বেশি।

ব্রায়ান মালরোনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আট বছর ক্ষমতায় থাকার পর জরিপে তার প্রতি জনগণের অনুমোদনের হার ছিল মাত্র ১২ শতাংশ। ১৯৯৩ সালের ফেডারেল নির্বাচনে তার দল অপসৃত হবার আগের বছরই মালরোনি প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দেন।

যাই হোক, জরিপে অংশ নেয়া ৫৫ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা জাস্টিন ট্রুডোকে পছন্দ করছেন না। অন্যদিকে ৪০ শতাংশ “জোরালোভাবে অপছন্দের” অপশন বেছে নেন। সুতরাং এটি স্পষ্ট যে, কানাডিয়ানরা ট্রুডোর ব্যাপারে মতামত দেয়ার ক্ষেত্রে ঐক্য থেকে অনেক দূরে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭০ সাল থেকে ক্ষমতাসীন প্রায় সব প্রধানমন্ত্রীই বেশিরভাগ কানাডিয়ানের অপছন্দের ছিলেন।

এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন Jean Chrétien. ২০০১ সালের ডিসেম্বরে তাকে পছন্দকারীর হার ছিল ৫৪ শতাংশ, আর অপছন্দকারী ছিল ৪২ শতাংশ।

এঙ্গুস রেইড উল্লেখ করে যে, এবারের বসন্তে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা ট্রুডোর প্রতি সমর্থনে প্রভাব রেখে থাকতে পারে। যেমন, “নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপের বিষয়ে তদন্ত শুরু করা, জ্যামাইকায় তার এক লাখ ৬০ হাজার ডলার ব্যয়ে অবকাশ কাটানোর বিষয়ে যাচাই-বাছাই, বাজেট সম্পর্কিত একটি বিভাজনমূলক পুনঃপূর্বাভাস দেয়া এবং কানাডা সম্ভবত ন্যাটোর দেয়া শর্তাবলী কখনই পূরণ করতে পারেবে না এমন একটি স্বীকারোক্তি ফাঁস হয়ে যাওয়া।”

তার পরও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মানুষের মতামত গত বসন্ত থেকেই ৪০ শতাংশের কয়েক পয়েন্টের মধ্যে থেকে গেছে, যা গত বছরের মার্চে সবচেয়ে কমে ৩৭ শতাংশ ছিল।

সমীক্ষায় দেখা যায়, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে – যে মাসে গোষ্ঠী প্রধানদের নেতৃত্বে ওয়েটসুওয়েটেন জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা তাদের ভূমির ওপর দিয়ে পাইপলাইন টানার বিরুদ্ধে বিশাল প্রতিবাদ বিক্ষোভ গড়ে তোলে এবং কানাডাজুড়ে নোবেল করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে- ট্রুডোর প্রতি সমর্থনের হার ছিল ৩৩ শতাংশ; যখন তাকে অপছন্দ করেন ৬৪ শতাংশ কানাডিয়ান।

তবে, ২০২০ এর মে মাসের মধ্যে তার প্রতি জনগণের সম্মতির হার ৫৫ শতাংশে উঠে যায়। এঙ্গুস রেইডের ২০২০ এর ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ এর মে পর্যন্ত সময়কালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এটি ছিল তার অর্জিত সর্বোচ্চ জনসম্মতির হার। 

পরিসংখ্যানের বিস্তারিত

সেই সময়ে রাজনৈতিক দলের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান আলাদা করে দেখানো হলে, দেখা যাচ্ছে, কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক ভোটরদের ৯০ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা ট্রুডোকে পছন্দ করেন না, এর মধ্যে ৮১ শতাংশ বলেন, তাঁরা “জোরালোভাবেই অপছন্দ” করেন।

লিবারেল পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ – ৮০ শতাংশ ট্রুডোকে পছন্দ করেন, যাঁদের ২৫ শতাংশ বলেন, তাঁরা “অত্যন্ত পছন্দ” করেন। নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির ভোটারদের মধ্যে ট্রুডোকে পছন্দ করার মত মানুষের সংখ্যা এর পরেই সবচেয়ে বেশি। এদের হার ৫৩ শতাংশ। অন্যদিকে ৪৩ শতাংশ অপছন্দ করেন এবং এদের অর্ধেকই জোরালোভাবে অপছন্দ করেন। ব্লক  কুইবেকো দলের ভোটারদের মধ্যে প্রতি চারজনে একজন ট্রুডোকে পছন্দ করেন, আর অপছন্দ করেন ৬৮ শতাংশ ভোটার।

এঙ্গুস রেইডের তথ্যমতে নারীদের মধ্যে ট্রুডোকে পছন্দ করার হার অনেক বছর ধরেই তাঁর গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে অন্যতম ধারাবাহিকতা। অন্য সব বয়স গ্রুপের চেয়ে ৫৫ বছরের বেশি বয়সের নারীদের মধ্যে ট্রুডোর গ্রহণযোগ্যতার হার অব্যাহতভাবে সর্বোচ্চ রয়ে গেছে। শুধু ৫৫ বছরের বেশি বয়সের নারীদের গনায় ধরা হলে ট্রুডোর গ্রহণযোগ্যতা ৪৮ শতাংশে দাঁড়ায়।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ৩৫-৫৪ বছরের নারীদের মধ্যে ট্রুডোর গ্রহণযোগ্যতায় ভাটার টান ধরে, ২০২৩ সালের মে মাসে তার গ্রহণযোগ্যতা দাঁড়ায় ৩৭ শতাংশে, যেখানে সেপ্টেম্বরে ছিল ৪৫ শতাংশ।

সাধারণভাবে পুরুষদের মধ্যে ট্রুডোর গ্রহণযোগ্যতা দীর্ঘদিন ধরেই অপেক্ষাকৃত কম ছিল। ২০২১ সালের শুরু থেকে বিশেষ করে ১৮-৩৪ বছরের পুরুষদের মধ্যে ট্রুডোর গ্রহণযোগ্যতায় অনেক উত্থান-পতন দেখা যায়। বর্তমানে এই বয়স গ্রুপের পুরুষদের ৩৮ শতাংশ ট্রুডোকে পছন্দ করেন, যেখানে ৫৫ বছরের বেশি বয়সের ৩৬ শতাংশ এবং ৩৫-৫৪ বছরের পুরুষদের ৩৪ শতাংশ ট্রুডোকে পছন্দ করেন।

ট্রুডো তার পার্টিকে সবচেয়ে ভালোভাবে সাহায্য করতে পারেন নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়ে

এখন, বাজার গবেষণার আরেক বিশ^খ্যাত প্রতিষ্ঠান ইপসোস-এর তথ্যমতে, অনেকে বলছেন যে, অজনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নতুন কারো কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের মাধ্যমে তার দলকে সর্বোত্তম সাহায্য করতে পারেন। ইপসোস-এর জরিপ অনুযায়ী, নতুন নেতৃত্ব নিতে পারেন খুব সম্ভব একজন অপেক্ষাকৃত তরুণ, নবীন ও নতুন মুখ- সম্ভাব্য একজন নারী নেত্রী: উপপ্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যালানি জোলি অথবা ট্রেজারি বোর্ডের প্রেসিডেন্ট অনীতা আনন্দ।

দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হলে আরও কেউ কেউ নেতৃত্বের জন্য আগ্রহী হতে পারেন- উদ্ভাবন, বিজ্ঞান ও শিল্পমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া-ফিলিপ্পে শ্যাম্পেন অথবা রাজনীতির বাইরের কেউ, যেমন ব্যাংক অব কানাডার সাবেক গভর্নর মার্ক কার্নে। এই জরিপ চালানো হয়েছিল একান্তভাবে গ্লোবাল নিউজের জন্য।

উল্লেখিত ব্যক্তিদের কেউই এখন পর্যন্ত নেতৃত্বের জন্য প্রকাশ্যে কোনও আগ্রহ প্রকাশ করেননি।

গতমাসে সাসকাচুয়ানে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ফ্রিল্যান্ড বলেন, “আমরা একটি টিম হিসাবে প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন দেয়ার ব্যাপারে শতভাগ অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং কানাডাবাসীর সেবায় কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি।”

আর কোনও এক উপলক্ষে ইপসোসের সিইও ড্যারেল ব্রিকার বলেন, এই মুহূর্তে লিবারেল দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা কোনও বড় পার্থক্য সৃষ্টি করবে জরিপের এমন কোনও তথ্যও নেই।

ইপসোস যাঁদের মধ্যে জরিপ চালিয়েছে তাঁদের সামনে নেতৃত্ব লাভের সম্ভাব্য আশাবাদী হিসাবে লিবারেল দলের উপরে উল্লেখিত নেতাদের নাম তুলে ধরেছিল। তাতে ফ্রিল্যান্ড সবচেয়ে ভালো প্রার্থী বলে গণ্য হলেও সেখানে এমন কোনও মতামত আসেনি যে, লিবারেল দলের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য নেতৃত্বের পরিবর্তনই সমাধান।

সমীক্ষায় অংশ নেয়া ব্যক্তিদের মাত্র ২৫ শতাংশ বলেন, তাঁরা লিবারেল দলকে ভোট দেবার কথা ভাববেন যদি ফ্রিল্যান্ড পার্টির নেতৃত্ব দেন। জোলির ক্ষেত্রে সংখ্যাটি ১৮ শতাংশে, কার্নের ক্ষেত্রে ১৬ শতাংশে, আনন্দ-এর ক্ষেত্রে ১৪ শতাংশে এবং শ্যাম্পেনের ক্ষেত্রে ১২ শতাংশে নেমে আসে।