ইসরায়েল–হামাস সংঘাত: সমাধানের উপায় হচ্ছে, দুটি রাষ্ট্র গঠন করা – পোপ
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, নভেম্বর ৫, ২০২৩ : বিশ্ববাসীর চোখ এখন ইসরায়েল ও গাজার যুদ্ধের দিকে। কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাধারণ মানুষ জোর দাবী তুলছেন অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য। কিন্তু ইসরায়েল এই যুদ্ধ সহসা থামাবে এমন কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এমনকি ইসরায়েলের এক মন্ত্রী গাজায় পারমানবিক বোমা ফেলার পক্ষেও কথা বলেছেন বলে জানা যায়। অতি-ডানপন্থী এই ইসরাইলী রাজনীতিকের নাম আমিহাই ইলিয়াহু। তবে এই মন্ত্রীকে পরে বরখাস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
গাজায় এই মুহুর্তে যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। দেশটির দাবী – যুদ্ধবিরতি হলে হামাস পুনরায় সংগঠিত হবে, এবং আবারো সাতই অক্টোবরের মতো হামলা চালাতে পারে সংগঠনটি। আর এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র এখন গাজায় কোন যুদ্ধবিরতি চায় না।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৯ হাজার ২২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। নভেম্বর ৪ তারিখের হিসাব এটি।
ইসরাইল গাজায় যে শুধু হামলা চালাচ্ছে তা নয়, তারা অবরুদ্ধ গাজায় ত্রাণসামগ্রী পাঠাতেও দিচ্ছে না ঠিক মত। ফলে গাজায় দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য সংকট। হাসপাতালগুলোতে এখন প্রয়োজনীয় ওষুধও নেই। এমনকি একটি হাসপাতালে বোমা হামলাও চালিয়েছে ইসরাইল। এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেন, গাজা উপত্যকার হাসপাতালে ইসরাইলি হামলা ‘ভয়াবহ এবং একেবারেই অগ্রহণযোগ্য’।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা জানিয়েছেন, গাজা উপত্যকার আল-আহলি ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালে ইসরাইলি বিমান হামলায় ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে হাসপাতালের মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে লাশ। আনাদুলু অ্যাজেন্সি এই খবর জানায়।
ট্রুডো অবশ্য এ কথাও বলেন যে, ‘হামাস যোদ্ধারা সন্ত্রাসী। তারা প্রতিরোধকারী নয়, তারা মুক্তিযোদ্ধা নয়। কানাডায় তাদের সমর্থন করা উচিত নয়। কানাডা সন্ত্রাস দমনে ইসরাইলের পাশে থাকবে।
এদিকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে মুখ খুলেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বলেন, ইসরায়েলি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলা ছিল ‘ভয়াবহ’, তবে এখন ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যা করছে তা ‘সহ্যের বাইরে’। এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
হাসপাতালে হামলার পর গত ৩ নভেম্বর ইসরায়েল গাজায় কয়েকটি এ্যম্বুলেন্সের উপরও হামলা চালিয়েছে। গাজার আল-শিফা হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অ্যাম্বুলেন্সে হামলার ঘটনায় ১৫ জন নিহত হন। এই হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, হামলার ঘটনায় তিনি স্তম্ভিত। তিনি আবারও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।
গাজায় মানবিক পরিস্থিতিও খুব ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেন জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস। তিনি বলেন, ‘মর্গগুলো লাশে ভরে গেছে। স্থানীয় দোকানগুলোতে কোন পন্য নেই। স্যানিটেশনের অবস্থা ভয়াবহ। রোগ ও শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে তা বেড়েছে। পুরো জনগোষ্ঠী আতঙ্কিত। গাজায় কোনো জায়গা নিরাপদ নয়।’
এদিকে জেরুজালেম সফররত ক্যাথলিক চার্চের প্রধান পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের পাশে দাঁড়িয়ে ‘সার্বভৌম ফিলিস্তিনি মাতৃভূমি’র পক্ষে জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। পোপ বলেন, তিনি ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ বুঝতে পারেন। তাঁর মতে, ইসরায়েল–হামাস সংঘাত থামাতে হলে ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের জন্যও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রয়োজন। সেই হিসেবে ভালো সমাধানের উপায় হচ্ছে, দুটি রাষ্ট্র গঠন করা।
প্রায় একমাস ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। আর এর মধ্যেই এই দাবি জানালেন পোপ ফ্রান্সিস।