ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পাকিস্তানে আবারও এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক , ০৭ মে ২০২৩ : ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগে পাকিস্তানে আবারও এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এএফপি’র খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান–তেহরিক–ইনসাফ এর এক সমাবেশে জনতা এ ‍নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, গণপিটুনিতে নিহত ওই ব্যক্তির নাম নিগার আলম। পাকিস্তান–তেহরিক–ইনসাফ এর সমাবেশ শেষে মোনাজাত পরিচালনার আহ্ববান জানানো হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু মোনাজাত পরিচালনা করতে গিয়ে ঐ ব্যক্তি যা বলেন তাতে উপস্থিত জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তখন  নিগার আলম ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। তবে ক্ষুব্ধ জনতা তার পিছু নেয় এবং এক পর্যায়ে তাঁকে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে খুঁজে পায়।

ফাইল ছবিতে দেখা যাচ্ছে ব্লাসফ্লেমী আইনে অভিযুক্ত এক খ্রীস্টান নারী আছিয়া বিবি’র মুক্তির দাবিতে পাকিস্তানে বিক্ষোভ করছেন পাকিস্তান মাইনরিটি এলাইয়েন্স এর সদস্যরা। ২০১৮ সালে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খারিজ করে দেয়। পরবর্তীতে তিনি কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেন। ছবি : রাহাত ধর

জেলা পুলিশ জানায়, ‘ক্ষুব্ধ জনতার মধ্যে কয়েক জন তখন সীমানাপ্রাচীর টপকে বাড়িতে ঢোকেন এবং নিগার আলমকে লাঠি–সোঁটা দিয়ে পেটাতে শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্ত লোকজন এতটাই ক্ষুব্ধ ছিল যে পুলিশের পক্ষে তাঁদের আটকানো সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।’

তবে এ ঘটনা যখন ঘটে তখন ইমরান খান সমাবেশস্থলে ছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে ইমরানের দলের কেউ মন্তব্যও করেননি।

উল্লেখ্য যে, পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মানুষ পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে শ্রীলংকার এক নাগরিককে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল উন্মত্ত জনতা। পাকিস্তানের শিয়ালকোট শহরে এক কারখানা ব্যবস্থাপক ৪৮ বছরের প্রিয়ান্থা কুমারাকে পিটিয়ে হত্যার পর তার মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। পাশবিক ওই হামলায় শতাধিক মানুষ অংশ নেয়। ইসলামি একটি পোস্টার ছিঁড়ে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলার অভিযোগে তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন এলাকাবাসী। ডন এর এক খবরে বলা হয়, পরবর্তীতে হত্যার দায়ে ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন পাকিস্তানের আদালত। ঐ একই মামলায় অভিযুক্ত ৮৮ জনের মধ্যে ৯ জনকে যাবজ্জীবন ও অন্য আসামিদের দুই থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এক বিদেশী নাগরিককে পিটিয়ে হত্যার পর তার মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়াও ওই ঘটনা গোটা পাকিস্তানে আলোড়ন তুলেছিল এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান একে ‘পাকিস্তানের জন্য লজ্জার দিন’ বলে আখ্যা দেন।

পাকিস্তানের সেন্টার ফর সোশ্যাল জাস্টিস– জানায়, দেশটিতে ১৯৮৭ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত  দুই হাজারের বেশি মানুষের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে অন্তত ৮৮ জন গণপিটুনিতে প্রাণ হারান।