আবারও আফগান নারীদের বোরকা পরা বাধ্যতামূলক করলো তালেবান শাসকরা

নতুন নির্দেশ অনুযায়ী মহিলাদের চোখ ছাড়া পুরো মুখ ঢেকে রাখতে হবে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক , ৭ মে, ২০২২ : আফগানিস্তানে আবারও মহিলাদের বোরখা পরা বাধ্যতামূলক করলো তালেবান শাসকরা। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা ও তালেবান প্রধান হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা  ঘরের বাইরে মহিলাদের সম্পূর্ণ শরীর ঢাকা বোরকা পরার নির্দেশ দিয়েছেন। গত বছর আগস্ট মাসে ক্ষমতা দখলের পর মহিলাদের উপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের ধারাবাহিকতায় এটি হলো সর্বশেষ সংযোজন। নির্দেশে বলা হয়, ‘মহিলাদের উচিত মাথা থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত ঢেকে থাকে এমন বোরকা পরা। এটি ঐতিহ্যবাহী ও মর্যাদাপূর্ণ পোশাক।’

নির্দেশে স্পষ্ট করে বলা বলা হয়, ‘যেসব নারী খুব বেশি বয়স্ক নন, আবার তরুণও নন, তাঁদের অবশ্যই শরিয়া নির্দেশ অনুযায়ী চোখ ছাড়া পুরো মুখ ঢেকে রাখতে হবে।’

এই আইন করা হয়েছে যেন কাছের সম্পর্কের প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ স্বজন ছাড়া অন্য পুরুষদের সঙ্গে দেখা হওয়ার সময় নারীরা নিজেদেরকে আড়ালে রাখতে পারেন। উল্লেখ্য যে, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালীনও নারীদের ওপর একই ধরনের কড়াকড়ি আরোপ করেছিল তালেবানরা।

তালেবানদের নতুন আইনে আরও বলা হয়েছে, কোন নারী বোরখার এই আইন না মানলে এবং সরকারী হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য করলে তার পরিবারের পুরুষ সদস্য বা অভিভাবকের তিন দিন পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

উল্লেখ্য যে, আফগানিস্তানে অনেক নারী শরীয়া আইন মানার জন্য এমনিতেই বোরকা পরেন। তবে  শহরাঞ্চলে বোরখা না পরে কেবলমাত্র মাথার চুল ঢাকার জন্য কিছু নারীকে হিজাব পরতে দেখা যায়।

আফগানিস্তানে আবারও মহিলাদের বোরখা পরা বাধ্যতামূলক করলো তালেবান শাসকরা। ছবি : গেটি ইমেজ

তালেবানরা নতুন এই নির্দেশকে একটি ‘পরামর্শ’ হিসেবে বর্ণনা করলেও এটি না মানলে  কী ঘটতে পারে সে সম্পর্কে হুঁশিয়ারিও দিয়েছে। যেমন:

•প্রথমত, কোন নারী যদি বোরকা না পরেন তবে তাদের বাড়ি পরিদর্শনে গিয়ে সরকারী কর্মকর্তারা ঐ নারীর স্বামী, ভাই বা পিতার সঙ্গে কথা বলবেন।

•দ্বিতীয় ধাপে ঐ নারীর পুরুষ অভিভাবককে সরকারি দফতরে ডেকে পাঠানো হবে।

•সর্বশেষ ধাপে ঐ নারীর পুরুষ অভিভাবককে আদালতে নেয়া হবে এবং তিন দিন পর্যন্ত তার সাজা হতে পারে।

বিবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরানে মুসলিম পুরুষ এবং নারীদের সংযত এবং শালীন পোশাক পরতে বলা হয়েছে। পুরুষদের বেলায় এরকম শালীন পোশাক হচ্ছে নাভি থেকে পায়ের গোড়ালির উপর পর্যন্ত কাপড়ে আবৃত রাখা। আর নারীর বেলায় মুখ, হাত এবং পা ছাড়া শরীরের সমস্ত অংশ ঢেকে রাখা। নিজের বিবাহিত স্বামী কিংবা আত্মীয় পুরুষ ছাড়া অন্য সব পুরুষের সামনে মেয়েদের এই পর্দা মেনে চলতে হবে।’

ঐ প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ  করা হয় যে, ‘ ইসলামের অনুসারীদের মধ্যে এ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে নারীর বেলায় এটুকু পর্দাই যথেষ্ট কিনা। এ কারণে হিজাব (আরবিতে এর আক্ষরিক অর্থ ঢেকে রাখা) এবং নিকাবের (পুরো মুখ ঢেকে রাখা কাপড়) মতো পর্দায় অনেক পার্থক্য আছে।

হিজাব হচ্ছে সাধারণত এমন একটি ওড়না, যেটি দিয়ে মাথার চুল এবং ঘাড় ঢেকে রাখা হয়। আর নিকাব হচ্ছে মুখ ঢেকে রাখা পর্দা, যেখানে শুধু চোখের জায়গাটা খোলা থাকে। এই নিকাব পরা হয় একটি মাথা ঢাকা ওড়না বা পুরো শরীর ঢাকা আবায়ার সঙ্গে। আর বোরকা এমন পোশাক, যেখানে সমস্ত মুখ এবং শরীর ঢাকা থাকে, শুধু চোখের সামনে একটা জালি পর্দার ভেতর দিয়ে বাইরে দেখা যায় ‘

মূলত: আফগানিস্তানে দৈনন্দিন জীবনে তালেবানরা যেসব কঠোর ধর্মীয় বিধিনিষেধ আরোপ করছে, তার বেশিরভাগই নারীদের টার্গেট করে করা হচ্ছে।

স্মরণ করা যেতে পারে যে, গত বছর আফগানিস্তানে তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর বলেছিল, সরকার প্রতিষ্ঠার পর আফগানিস্তানে নারীদের জন্য বোরকা বাধ্যতামূলক করা হবে না, তবে প্রত্যেক নারীকে ঘরের বাইরে হিজাব পরতে হবে। স্কাই নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এমনটি জানিয়েছিলেন  তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের মুখপাত্র সুহাইল শাহীন। তিনি আরও বলেছিলেন, নারীরা প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা তথা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে। সূত্র : এএফপি/আলজাজিরা/বিবিসি