কানাডাজুড়ে বাড়িভাড়া লাফিয়ে বাড়ছে, অনেকের সামর্থ্যরে বাইরে চলে যাচ্ছে

সুদের হার বাড়ছে আর বাড়ির বাজার শীতল হয়ে আসছে, ফলে ভাড়ার ওপর বেশি চাপ পড়ছে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : নাথান আর্মস্ট্রং অন্টারিওর উডস্টক এলাকার একটি মোটেলের সঙ্কীর্ণ রুমে বসে অ্যাপার্টমেন্টের তালিকা হাতড়ে ফিরছেন গত কয়েক মাস ধরে। তিনি ও তার স্ত্রীকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই মোটেল রুমে বাস করতে হচ্ছে। এই পুরো সময় ধরে তারা মরিয়া হয়ে একটি ভাড়াবাড়ি খুঁজছেন।

“তালিকায় খুব বেশি বাড়ি নেই, আর মনে হচ্ছে ভাড়া বেড়েই যাচ্ছে। এক বেডরুমের একটি অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া পনের থেকে উনিশ ’শ ডলার পর্যন্ত” তিনি বলেন। “আমাদের সামর্থ্যরে সীমা বিলীন হয়ে যাচ্ছে।”

এই পরিস্থিতিকে আর্মস্ট্রং হতাশাজনক ও ব্যয়বহুল বলে উল্লেখ করেন। এই দম্পতি মোটেলে নিজেদের খাবারটাও রান্না করতে পারেন না।

তিনি বলেন, “এটা ভীষণ, ভীষণ কঠিন পরিস্থিতি।” “রান্না করা মুশকিল, কারণ মোটেলে রান্নার নিজস্ব সরঞ্জাম রাখার অনুমতি নেই। টোস্টার ওভেন রাখা যাবে না, সেটা অগ্নি সতর্কতার পরিপন্থী।”

এই দম্পতি বলেন, তারা বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। গত ১৬ মাস ধরে একটি স্থিতিশীল আবাসনের খোঁজ করতে গিয়ে কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্যে তারা বহু সংখ্যক অ্যাপার্টমেন্ট হারিয়েছেন।

রেন্টালস.সিএ এবং বুলপেন রিসার্চ অ্যান্ড কনসালটিং এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই এলাকায় বাড়িভাড়া দ্রুত বাড়ছে। এই এলাকার নিকটতম বড় শহর অন্টারিওর লন্ডনে অ্যাপার্টমেন্টের গড় ভাড়া গত জুনে দাঁড়ায় ১,৯৩৩ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮.৫ শতাংশ বেশি।

কানাডাজুড়েই ভাড়ার বাজার আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। ছবি : প্রবাসী কণ্ঠ

কিছু বিশ্লেষক পূর্বাভাস দেন যে, কানাডাজুড়েই ভাড়ার বাজার আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে।

রিয়েল এস্টেট বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বুলপেন রিসার্চ অ্যান্ড কনসালটিং এর প্রেসিডেন্ট বেন মায়ার্স বলেন, উচ্চ সুদের হারের কারণে বাড়ির সম্ভাব্য ক্রেতারা পিছিয়ে যাচ্ছেন, ফলে বাড়ি ভাড়ার বাজারে বাড়তি চাপ পড়ছে।

মায়ার্স বলেন, “এই দুটি কারণে ভাড়াটেরা তাদের ভাড়া করা বাড়িতেই থেকে যাচ্ছেন, ফলে ভাড়া দেওয়ার মত বাড়ির সরবরাহও কমছে।”

হ্যালিফ্যাক্সেও ভাড়া বাড়ির সরবরাহ একটি আলোচিত বিষয়। কানাডা মর্টগেজ অ্যান্ড হাউজিং করপেরেশনের হিসাবে সেখানে বাড়ি খালির পরিমাণ এক শতাংশেরও কম, যা সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। বাড়িভাড়া বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান

রেন্টার্সএড-এর প্রোগ্রাম ডাইরেক্টর লেসলি ডান বলেন, “আমাদের নতুন বাড়ি নির্মাণ কাজ চলছে এবং নির্মিত বাড়িও আছে। কিন্তু ভাড়া নেবার লোকের সংখ্যার সাথে সেগুলি তাল মিলিয়ে উঠতে পারবে না।”

সারা কানাডাতেই বাড়ি ভাড়া বাড়ছে

তিনি বলেন, স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো দ্রুতই বাড়ি ভাড়া নেবার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে, কারণ মানুষের বেতনের চেয়ে বাড়িভাড়া অনেক দ্রুত বাড়ছে। ডান বলেন, বাড়ি ভাড়ার বাজার এতটাই উত্তপ্ত যে এটি ভাড়া নিতে ইচ্ছুক লোকেদের ওপর অন্যায্য চাপ সৃষ্টি করছে।

ডান বলেন, “এখন কাউকে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হবে কিনা বিবেচনার আগেই তাকে তিন মাসের ভাড়া অগ্রিম দিতে বলা হচ্ছে। এটা ধ্বংসাত্মক।”

“বেশিরভাগ নবাগত, বেশিরভাগ তরুণ, বেশিরভাগ গৃহহীন, বেশিরভাগ নির্ধারিত আয়ের মানুষের জন্য এটা (তিন মাসের ভাড়া অগ্রিম দেওয়া) বহন করার কোনও উপায় একবারেই নেই।”

দেশের বৃহত্তম নগরীগুলোতেও ভাড়াটেদের জন্য বাজার ভীষণ দুরূহ, কারণ এসব নগরী সবচেয়ে দামি। রেন্টালস.সিএর তথ্যমতে কানাডায় অ্যাপার্টমেন্টের গড় ভাড়া সবচেয়ে বেশি ভ্যাঙ্কুভারে, মাসে ২,৯৩৬ ডলার। এটি এক বছর আগের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। টরন্টোতে গড় ভাড়া মাসে ২,৪৬৩ ডলার, যা এক বছর আগের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। -সূত্র : নিশা পটেল / সিবিসি