কানাডায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাড়ছে

পাঞ্জাবি সম্প্রদায়ের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ক্রমবর্ধমান হারে মৃত্যুর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডায় সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সের বেশ কয়েকজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। সম্প্রতি ভ্যাঙ্কুভারের একটি গুরুদুয়ারা মন্দির আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর ওভার ডোজ সঙ্কটের (নেশাজাতীয় দ্রব্য সংশ্লিষ্ট) ক্রমবর্ধমান প্রভাব সম্পর্কে মুখ খুললে অন্টারিও’র ব্রাম্পটন এলাকার পাঞ্জাবি সম্প্রদায়ের সদস্যরাও কানাডায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্রমবর্ধমান হারে মৃত্যুর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।  

যদিও তথ্যটি প্রায়শ অকল্পনীয়, তবু বেশ কিছু লক্ষণ আছে যা থেকে বোঝা যায়, কানাডায় প্রতি বছর খুব বেশি সংখ্যায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী মারা যাচ্ছেন। সম্প্রতি এই তথ্য প্রকাশ করে অটোয়ার প্রেসপ্রগ্রেস নামের একটি পত্রিকা।

এদিকে নিউ কানাডিয়ান মিডিয়া’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে গত পাঁচ বছর ধরে আমরা কানাডায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাড়তে দেখেছি। অত্যন্ত দ্রুত মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া, সেইসঙ্গে স্নায়ুবিধ্বংসী কর্মসূচি, সাংস্কৃতিক আঘাত এবং সামাজিক একাকীত্ব ইত্যাদি হলো কয়েকটি কারণ যে জন্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে “কানাডীয় জীবনসংগ্রামের” চরমতম ভার বহন করতে হয়।

ব্রিটিশ কলম্বিয়ার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী শিবানী রেহিল বলেন, তাকে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের চেয়ে চারগুণ বেশি টিউশন ফি দিতে হয়, তার পরও  মানসিক সমস্যার জন্য তার বীমার আওতায় কোনওরকমে মাত্র তিনটি কাউন্সেলিং সেশন করা যায়। 

গত পাঁচ বছর ধরে কানাডায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাড়তে দেখা গেছে। প্রতীকী ছবি : গেটি ইমেজেস

“পরিবর্তিত সময়ে অগ্রাধিকারগুলোতেও পরিবর্তন আনার দরকার, যেমন, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কাউন্সেলিংয়ের বর্ধিত কাভারেজ। কারণ আমাদের অধিকাংশই এরই মধ্যে আর্থিক বিষয়ে উদ্বেগের মধ্যে আছি।”

তিনি পরামর্শ দেন যে, ভারতের মত কোনও দেশ (যেখানে মানসিক স্বাস্থের বিষয়ে ব্যাপক কুসংস্কার আছে) থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসে আরও বেশি মনস্তত্ব বিষয়ক শিক্ষা দেয়া হলে বা এমনকি এর একটি উপাদান আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে দেয়া ওরিয়েন্টেশনে যোগ করা হলে তিনি খুশি হবেন।  

কুইবেকে গ্রাজুয়েশন করা মেক্সিকান অভিবাসী ডেনিসে হরকাসিটাস বলেন, “ইউনিভার্সিটির কাউন্সেলিং সেশনে আমাদের যোগ দেয়ার সুযোগ আছে তা আমার জানা নেই। আমার মনে হয়, বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীই জানে না যে তার টিউশন ফির আওতায় কিছু মানসিক স্বাস্থ্য সেবা অন্তর্ভুক্ত আছে।”

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদেরকে তাদের প্রাপ্য সুবিধাবলি সম্পর্কে ওরিয়েন্টেশন দেয়া হলে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রতিষ্ঠান, অনলাইনের পোস্ট আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উচ্চ হারে মৃত্যুর কথাই বলে

গ্রেটার টরন্টো এলাকার একটি ফিউনারেল হোমের পরিচালক জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে এমন ঘটনা দেখা যায় যেগুলোতে বেশ কিছু বা অন্তত কয়েকজন করে আন্তর্জাতিক ছাত্র জড়িত।

ইটোবিকোক-এর লোটাস ফিউনারেল হোমের পরিচালক হরমিন্দর হানসি প্রেসপ্রোগ্রেসকে বলেন, “আমরা প্রতি মাসে অন্তত চারটি করে লাশের শেষকৃত্য করি, কখনও মাসে একটি বা দুটি। তবে এটা চলমান ঘটনা।”

হানসি বলেন, প্রতিটি মৃত্যুর কারণ ঠিকঠাক বলা ফিউনারেল হোমের পক্ষে কঠিন, কারণ এজন্যে যথাযথভাবে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের প্রয়োজন হয়। তবে তিনি উল্লেখ করেন যে, গত কয়েক বছরে উচ্চহারে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা অনস্বীকার্য।

প্রেসপ্রোগ্রেস-কর্তৃক ‘গোফান্ডমি’ (GoFundMe) পেজ বিশ্লেষণে গত তিন বছরে কানাডায় ভারত থেকে আসা অন্তত ৩০ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা সনাক্ত করা হয়েছে।

ক্রাউডফান্ডিং পেজের তথ্য অনুযায়ী, এসব মৃত্যুর পেছনে বিভিন্ন কারণ জড়িত, যার মধ্যে গুলিসহ আত্মহত্যা, হৃদরোগ, ঘুমের মধ্যে মৃত্যু, কর্মস্থলে দুর্ঘটনা জড়িত।

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মৃত্যুতে ওভার ডোজ সঙ্কটের প্রভাব

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জ এবং তাদের শোষণের মাত্রা বহুস্তরের। আর নওজোয়ান সাপোর্ট নেটওয়ার্কের (এনএসএন) বিক্রম সিংহ বলেন, প্রতি বছর তিনি আরও বেশি সংখ্যক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে মাদকের বিষাক্ত ছোবল ও ওভারডোজ সঙ্কটে জড়িয়ে পড়তে দেখেছেন।

প্রেসপ্রোগ্রেসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মি. সিংহ বলেন, “২০১৯ সালে এখানে আসার পর থেকে এমন একটি মাসও যায়নি যে মাসে এ ধরণের ঘটনার কথা শুনিনি।”

এনএসএন শিক্ষার্থীদের চুরি যাওয়া মজুরির অর্থ পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। আর সেটি তারা করে প্রায়শ চাকরিদাতাদের কাছ থেকে যারা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য মজুরি দিতে চায় না।

সিংহ বলেন, তিনি অবাক হন জেনে যে, শিক্ষার্থীরা যাতে দীর্ঘ শিফটে কাজ করতে পারেন সেজন্যে তাদেরকে মাদক গ্রহণের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আর ওভার ডোজের কারণে তারা মারা যাচ্ছেন, এ থেকে তাদেরকে কী পরিমাণ মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে হয় তা বোধগম্য।

“এই শিক্ষার্থীরা অনেক চাপের মধ্যে থাকেন। এখানে চাকরি পাওয়া কঠিন, এখানে বসবাস করা খুব ব্যয়বহুল।”

তিনি স্কারবরোর আলফা কলেজ অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন যেখানে প্রতিষ্ঠানটি তার সামর্থের চেয়েও ১০০ জন বেশি ছাত্র ভর্তি করেছে।

সিংহ বলেন, “এক সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থীরা কলেজের বাইরে তাবু খাটিয়ে বসে থেকেছেন। তারা দিনরাত সেখানে বসে থেকেছেন কিন্তু কোনও সরকারী কর্মকর্তা অথবা ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে কথা বলতে আসেননি।”

একজন ছাত্র ভ্যাঙ্কুভারের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলিং রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। ছবি : রাধা আগরওয়াল

“সরকারের একটিই মাত্র উদ্দেশ্য, শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে আসা এবং তাদের কাছ থেকে টাকা কামানো। এরপর কী হচ্ছে তা নিয়ে তাদের কোনও চিন্তা নেই।”

অন্টারিওর ব্রাম্পটনের পাঞ্জাবি কমিউনিটি হেলথ সার্ভিসের মাদকাসক্তি কর্মসূচির ম্যানেজার হরবিন্দার সাহোটা বলেন, “তারা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সংগ্রাম করছেন, তারা সংগ্রাম করছেন গৃহহীন অবস্থা, মাদকাসক্তি, আইনগত সমস্যা নিয়ে; তারা পার্কে, বাস স্টপে, বিভিন্ন প্লাজায় ঘুমাচ্ছেন।”

প্রেসপ্রোগ্রেস জানায়, ‘Gurdwara Dukh Nivarin Sahib’ এর সংগৃহীত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত দুই বছরে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার লোয়ার মেইনল্যান্ডে অতিরিক্ত মাদক গ্রহণের কারণে এবং আত্মহত্যা করে কমপক্ষে ৪৭ জন ভারতীয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী মারা গেছেন। এসব মরদেহ ভারতে ফেরত পাঠাতে গুরুদুয়ারার ব্যয় হয়েছে দুই লাখ ডলারের বেশি অর্থ।

গুরুদুয়ারার ধর্মগুরু নারিন্দার সিংহ ওয়ালিয়া বলেন, তিনি নিজেই ৩৯ টি মৃতদেহ পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন এবং মৃতের বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জানার পর আরও ৮ থেকে ১০টি দেহ পাঠাতে সাহায্য করেছেন। তাদের অর্থসংক্রান্ত না হলেও শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কিত সাহায্যের প্রয়োজন ছিল।

ওয়ালিয়ার হিসাব অনুযায়ী, ওভারডোজের সমস্যায় মৃতদের ৮০ শতাংশ মরদেহ ভারতে পাঠানো হয়েছে।

অর্থনৈতিক চাপ

দুঃস্থ অভিবাসী ও ছাত্রদের সহায়তাকারী অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ওয়ান ভয়েস কানাডার ২০২১ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায়শ অর্থনৈতিক চাপের কারণে ওভারডোজের মত ঘটনা ঘটতে পারে।

অর্থনৈতিক চাপের কারণে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা সৃষ্টি করে। টপইউনিভার্সিটিজ.কম-এর প্রাক্কলন অনুযায়ী, শুরুতে

স্থানীয় আন্ডারগ্রাজুয়েট স্তরের একজন শিক্ষার্থীকে বছরে ৬,৪৬৩ ডলার পরিশোধ করতে হয়, অন্যদিকে একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে পরিশোধ করতে হয় প্রায় ৩৬,১০০ ডলার। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ফেডারেশন অব স্টুডেন্টস-এর (BCFS) তথ্যমতে, ব্রিটিশ কলম্বিয়া এবং বেশিরভাগ প্রদেশে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বেতন বিধিবদ্ধও নয়।

এদিকে, সর্বত্র জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অনেকে বাধ্য হয়ে ন্যূনতম মজুরির চেয়েও অনেক কম টাকায় অবৈধভাবে নগদ অর্থের বিনিময়ে কাজ করতে (ট্যাক্স ফাঁকি দেবার জন্য নগদে মজুরি দেয়া হয়) বাধ্য হচ্ছেন।

কমিউনিটির নেতারা সতর্ক করছেন যে, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত চাপ এবং কাঠামোগত সহায়তার অভাব প্রাথমিকভাবে ভারতীয় ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

অন্টারিওর ব্রাম্পটনে পাঞ্জাবি কমিউনিটি হেলথ সার্ভিসের (PCHS) মাদকাসক্তি বিষয়ক পরামর্শক নিরপেল গিল মরদেহ পাঠানোর কাজে সহায়তা দেন। প্রেসপ্রোগ্রেসকে  তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি (মৃত্যু) ঘটে “হৃদরোগ, আত্মহত্যা, ওভারডোজ এবং দুর্ঘটনায়।”

লোটাস ফিউনারেল হোমের হারমিন্দার হানসি ব্যাখ্যা করেন যে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা শারীরিকভাবে উপযুক্ত থাকার জন্য মাদক নিতে “সহকর্মীদের চাপে” থাকেন এবং প্রায়শ আসক্ত হয়ে পড়েন। গিল যোগ করেন যে, শিক্ষার্থীরা সঙ্কটে পড়েন কারণ “তারা জানেন না কীভাবে (নেশা) ছাড়তে হবে, কোথায় সহায়তা পাওয়া যাবে অথবা কোথায় যেতে হবে তাও জানেন না।” তিনি বলেন, নিজের দেশে ধার করা টাকা ফেরত দেয়ার জন্য “এখানে বসবাসকালে অর্থ আয়ের চাপে” থাকেন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা, আর এসব কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় ভোগেন।

এ ‘এক বিরাট সমস্যা’

স্থানীয় শিক্ষার্থীদের তুলনায় বিদেশী শিক্ষার্থীরা অনেকটাই ভিন্নতর সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হন, বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য অনুযায়ী: এটি হলো লেখাপড়ায় ভালো নম্বর অর্জন করে, কানাডায় চাকরি পেয়ে এবং অনেক সময় কানাডায় পারমানেন্ট রেসিডেন্টের স্টেটাস পাবার মধ্য দিয়ে  প্রায়শ স্বচ্ছল তাদের বাবা-মাকে খুশি করার অত্যধিক চাপ।

কানাডায় আন্তর্জাতিক ছাত্রদের আত্মহত্যার বিষয়ে খোঁজ-খবর অথবা সরাসরি সাড়া খুব একটা দেওয়া না হলেও যেখানে প্রচুর সংখ্যক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী রয়েছে সেই অস্ট্রেলিয়ায় মৃত্যুর ঘটনা পরীক্ষার চলতি বছরের একটি রিপোর্টে এমন উপসংহার টানা হয়েছে যে, স্থানীয় সহপাঠীদের তুলনায় বিদেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের কোনওরকম সতর্কবার্তা না দিয়েই আত্মহননের সম্ভাবনা অনেক বেশি। অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া স্টেট সাত বছরে ২৭ জন বিদেশী শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা উদঘাটন করেছে।

বিদেশী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের আত্মহত্যার উচ্চ হার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রবণতার অনুরূপই, যা অব্যাহতভাবেই দেখা যায় যে, মেয়েদের তুলনায় ছেলে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার সম্ভাবনা তিন থেকে চারগুণ বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলেছে, আত্মহত্যা, বৈশি^ক পর্যায়ে তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ।

বিদেশী শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার বিষয় নিয়ে ইংরেজি-ভাষী দুনিয়ায় সতর্কঘণ্টা বাজছে। বিদেশী শিক্ষার্থীদের বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ইংরেজি-ভাষী দুনিয়াতেই আসে।

চায়না ডেইলি পত্রিকা সম্প্রতি “বিদেশে অধ্যয়নরত অনেক বেশি সংখ্যক চীনা শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করছেন” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া ও কর্মরত ৩,৩০.০০০ চীনা শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। 

চীনের সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত পত্রিকাটি শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার কারণ খুঁজে বের করার জন্য কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানিয়েছে। এটি কি তাদের “ব্যর্থতা ও বাবা-মায়েদের হতাশ করার ভীতির কারণে” অথবা “নিজে নিজে সংগ্রাম করতে হওয়া থেকে আসা নৈঃসঙ্গের কারণে?”

ব্রিটিশ কলম্বিয়ার মৃতদেহ পরীক্ষাকারী পরিষেবা আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের নাগরিকত্ব, আত্মহত্যার উপায় অথবা এর কারণ সম্পর্কিত কোনও তথ্য প্রকাশ করে না।

অবশ্য, অস্ট্রেলিয়ার মৃতদেহ পরীক্ষার ওপর সমীক্ষায় দেখা যায়, এরা এশিয়া থেকে আসা তরুণ যারা অন্যান্য কারণের পাশাপাশি খুব সম্ভবত তাদের বাবা-মায়েদের কাছ থেকে লেখাপড়ায় তাদের খারাপ ফলাফল গোপন করার জন্য আত্মহত্যা করেছেন।

মিজ. অনু শর্মা পাঞ্জাবি কমিউনিটি হেলথ সার্ভিসের সিইও। প্রেসপ্রোগ্রেসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, গ্রেটার টরন্টো এলাকার শুধু একটি কলেজ থেকেই (তিনি কলেজের নাম বলতে অস্বীকৃতি জানান) প্রতি সপ্তাহে তিনি অন্তত ১০টি কল পান যেগুলি শিক্ষার্থীদের আত্মহননের চেষ্টার সঙ্গে সম্পর্কিত। শর্মা জোর দিয়ে বলেন, সংখ্যাটি হয়তো আরও বড় কিন্তু সব ঘটনার খবর জানানো হয় না। তিনি বলেন, যেহেতু তিনি এই অঞ্চলের মাত্র একটি কলেজে সেবা দিলেও  তিনি উদ্বিগ্ন যে, অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীদেরও নিশ্চয়ই এ ধরণের সেবার দরকার, কিন্তু তারা সেটি পাচ্ছে না।

শর্মা বলেন, এ সমস্যার সমাধান নিহিত “সচেতনতা” এবং সরকার যেসব শিক্ষার্থীদেরকে এদেশে নিয়ে আসছে তাদের সাহায্য করতে সরকারকে বাধ্য করার মধ্যে।

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর কানাডার অর্থনীতিতে যে অর্থের যোগান দিতে সহায়তা করে সে বিষয়ের উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটি ২৬ বিলিয়ন ডলারের একটি শিল্প।” তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহবান জানান, “কিছু একটা করুন… শিক্ষার্থীরা যেন নিজের হাতে নিজেদের জীবন না নেয় সেজন্যে তাদের সাহায্য করুন।”