কানাডায় নতুন অভিবাসীদের আয় সাম্প্রতিক বছরগুলিতে যথেষ্ট বেড়েছে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ১২ জানুয়ারি ২০২৪ : পার্লামেন্টের বাজেট অফিসার ইভেস গিরোক্স এর তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরে কানাডায় নতুন পারমানেন্ট রেসিডেন্টদের আয় সাধারণ জনগণের তুলনায় “যথেষ্ট বেড়েছে।”

পার্লামেন্টের বাজেট অফিসারের দপ্তর (PBO) নতুন অভিবাসীদের মাঝারি পর্যায়ের আয়ে কী ধরণের পরিবর্তন এসেছে এবং এর পেছনের কিছু কারণ সম্পর্কিত তাদের স্বাধীন রিপোর্ট শুক্রবার প্রকাশ করেছে। পিবিও অর্থনৈতিক ও আর্থিক বিষয়াদি সম্পর্কিত স্বতন্ত্র বিশ্লেষণ পার্লামেন্টকে দিয়ে থাকে। বাজেটের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এর লক্ষ। খবর ক্রিসল ড্যাবু – সিটিভি নিউজ।

সিটিভিনিউজ.সিএর সঙ্গে সম্প্রতি এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে গিরোক্স বলেন, “আয়ের ব্যবধান কমে আসার এই ঘটনা অস্থায়ী রেসিডেন্টদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং চমৎকার কানাডীয় অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ… যেটি সাম্প্রতিক অভিবাসীরা শ্রমবাজারের কর্মস্থলে অথবা কানাডায় পড়াশোনার সুবাদে অর্জন করেছেন।” “সুতরাং এখানে একটি জোরালো পারস্পরিক সম্পর্ক আছে বলে মনে হয়।”

কানাডায় নতুন পারমানেন্ট রেসিডেন্টদের আয় সাধারণ জনগণের তুলনায় “যথেষ্ট বেড়েছে।” ছবি : ইমিগ্রেশন.সিএ

এই রিপোর্ট এমন সময় প্রকাশ পেল যখন কানাডা ২০২৫ সালের শুরু থেকে ও ২০২৬  সালে তার অভিবাসনের লক্ষমাত্রা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়িয়ে পাঁচ লাখে উন্নীত করেছে। এটি দেশে শ্রমিকের সরবরাহ এবং দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতি সমৃদ্ধ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রিপোর্টে নতুনদের পারমানেন্ট রেসিডেন্সি পাবার এক বছর পরের আয়ের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করেছে।

নতুন পারমানেন্ট রেসিডেন্টরা দেখিয়েছেন যে, তাদের মাঝারি পর্যায়ের আয়ের পরিমাণ ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সব ধরণের কানাডীয় করদাতাদের চেয়ে ৫৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

এর আগে সব শ্রেণীর বাসিন্দার তুলনায় অভিবাসীদের মাঝারি মানের আয় ২০০৬ সালের ৪৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৩ সালে প্রায় ৮৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল।

২০১৫ সালে এবং ২০১৮ সালের বৃদ্ধি ছিল উল্লেখযোগ্য যখন যথাক্রমে ১৫ শতাংশ পয়েন্ট এবং ১১ শতাংশ পয়েন্ট আয় বেড়েছিল। তাছাড়াও, দেখা গেছে, ২০০৬ সাল থেকে অস্থায়ী রেসিডেন্টদের বেতনও বেড়েছে।

গিরোক্স এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, “কানাডায় নতুন অভিবাসীদের শ্রমবাজার থেকে প্রাপ্তি ২০১০-এর দশকে যথেষ্ট উন্নীত হয়েছে।” “এই বৃদ্ধি ১৯৮০-র দশক ও তার পরবর্তীকালে কতিপয় নতুন অভিবাসী যে তুলনামূলক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন তার সম্পূর্ণ বিপরীত।”

১৯৬০-এর দশক থেকে ১৯৭০-এর দশকজুড়ে কানাডায় নবাগতরা কানাডায় জন্মগ্রহণকারী বাসিন্দাদের “অনেকটা একইরকম” আয় করেছেন, কিন্তু ১৯৮০-র দশকে তাদের আয় অপেক্ষাকৃত কমতে শুরু করে। তথ্যে দেখা যায়, ১৯৯০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অভিবাসীদের মাঝারি মানের আয় সব শ্রেণীর নাগরিকের চেয়ে অব্যাহতভাবে ৬০ শতাংশের নিচে থেকেছে।

রিপোর্টের উপাত্তে প্রবণতাটা স্পষ্ট

আয়ের এই উন্নয়নের পেছনের কারণ অস্পষ্ট, তবে পিবিও উপাত্তে এমন প্রবণতা দেখতে পেয়েছে যা সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে আভাস দেয়।

একটি উদাহরণ হল, এসব আয় বৃদ্ধির ব্যাপারটা ঘটেছে এমন সময়ে যখন কানাডায় পারিবারিক সংযোগ আছে এমন অভিবাসীর সংখ্যা বেড়েছে। এটি স্পষ্ট করে যে, সামাজিক নেটওয়ার্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

অন্টারিওর লন্ডনে অবস্থিত ওয়েস্টার্ন অন্টারিও ইউনিভার্সিটির মাইগ্রেশন অ্যান্ড এথনিক স্টাডিজ বিষয়ক সহযোগী স্নাতক কোর্সের গবেষণা সহযোগী এবং ইতিহাসের অধ্যাপক স্টিফানি ব্যানগার্থ বলেন, গবেষকরা দীর্ঘকাল ধরেই বলে আসছেন যে, অভিবাসীদের একাত্মতা ও এদেশে থেকে যাবার ক্ষেত্রে পারিবারিক সংযোগের “বিরাট প্রভাব” রয়েছে।  

এক ই-মেল বার্তায় ব্যানগার্থ সিটিভিনিউজ.সিএ-কে বলেন,  “শেষের এই বিষয়টি- ধরে রাখা- খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- যেহেতু ঐতিহাসিকভাবেই কানাডাকে গুরুত্ব দেয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশদ্বার হিসাবে।” “অভিবাসনকে পুঁজি করে এবং পারিবারিক সংযোগের আরও বেশি উন্নয়ন ঘটিয়ে আমাদের নতুনদের ধরে রাখার প্রয়াস আরও বেশি সফল হতে পারে। এটি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের আরও বেশি নিবিষ্টভাবে কাজ করা দরকার।”

পিবিওর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে অর্জিত আয়ের উন্নতির সঙ্গে কানাডায় আগে কাজ করা এবং কানাডীয় অভিজ্ঞতার অবদান প্রায় ৮৫ শতাংশ।

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, “যারা এখানে আসার (অর্থাৎ পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হবার) আগে থেকেই কানাডায় কর্মরত ছিলেন তারা বেতনের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য সুবিধা পেয়েছেন।” “এর অর্থ হল, এখানে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন এবং কর্মরত অবস্থায় উচ্চতর পর্যায়ের আয় করছেন সেইসব ব্যক্তিদের কানাডা অধিক সংখ্যায় আকৃষ্ট করতে পারছে। এরপরই তারা পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হচ্ছেন।”