একটি অনুষ্ঠানের পিছনের গল্প
ডা.পুলক
ফেব্রুয়ারির কোন এক সকালে উঠে মনে হলো এইবছর তো আমাদের এস.এস.সি পরীক্ষার পাশের পঁচিশ বছর পূর্ণ হলো। একটা অনুষ্ঠান করলে কেমন হয়, এই ভাবনাটা ছড়িয়ে দিলাম পুরো গ্রুপে। গুটিকয়েক মানুষ সাড়া দিলো, ভাবলাম শুরু তো করি তারপরে দেখা যাবেক্ষণ।
ভোট চেয়ে দেখলাম ত্রিশজন ভোট দিয়েছেন, সবার সাথে কথা বলে বুঝলাম এই অনুষ্ঠান হলে গ্রুপে একটা নাড়া পরবে। দুটো মিটিং হলো সবার সাথে, অনেকেই এসেছিলো টিম হর্টনে আর মম’স কিচেনে। সবাই আলোচনা করে ঠিক করলাম অনুষ্ঠান হবে একুশে মে আর হবে টরেন্টোর যেকোন ব্যাংকুয়েট হলে।
টাকা চাওয়া শুরু হলো, খালেদ শুরু করলো প্রথম টাকা দেওয়া। তারপরে প্রথম সপ্তাহে মাত্র পাঁচজন টাকা দিলো, আমার তো মাথায় হাত। আমি পুরাই হতাশ, টাকা পাবো কিনা কোনো নিশ্চয়তা নাই। একরাতে উইন্ডসোর থেকে মাসুক এসে আমাকে ঘরোয়ার সামনে অনেক ইন্সপায়ার করলো। এই দিকে ব্যাংকুয়েট হলের টাকা দেবার সময় হয়ে এসেছে, সাতপাঁচ না ভেবে নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে বুকিং দিয়ে দিলাম।
মাঝখানে রোজার ঈদ গেলো। গুণে দেখলাম হাতে মাত্র চার সপ্তাহ আছে। মোস্তফা আর হিরার কাছে বিশেষ কৃতজ্ঞতা যে ওরা ওদের বাসা চার সপ্তাহের জন্য ছেড়ে দিলো আমাদের রিহার্সালের জন্য। আমরা প্রতেকেই হলাম বে-গুণ অর্থাৎ কোনো গুণই নাই। কিন্তু রিহার্সালে আমাদের সেকি ডেডিকেশন, সবার মাঝে অনুষ্ঠান সফল করার তাড়না ।
প্রথমেই ধন্যবাদ দেই আমার বেটার হাফ রুমা’কে, প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী মেয়ে। সব সময় ভরসা দিয়ে কথা বলে, “টেনশন কর না, প্রোগ্রাম সুন্দর হবেই।” আমার সকল পাগলামীকে সবসময় প্রশ্রয় দেওয়া মেয়ে।
সাফায়াত, আমার পাগলা আর মানিকজোড়। ওর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো ও আমার পালস বুঝে, একইভাবে আমি ওরটা। ও গরম হলে আমি ঠান্ডা আর ও ঠান্ডা হলে আমি হয়ে যাই গরম।
অনিক আর ডোনা, অসাধারণ এক জুটি। অনিক আবার আমার কলেজমেট হওয়াতে আমার দাবী আরো বেশী। এই অনুষ্ঠানের পুরো প্ল্যানটা হয়েছে ওদের বাসায় ইফতার পটলাক পার্টিতে। অসাধারণ সময় কেটেছে সবার।
ফররুখ আর শান্তনু, পাকনা পোলা দুটো। আল্লাহ মানুষকে এতো বুদ্ধি কেমনে দেয় তা ওদের না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। ওদের দারুণ কিছু বুদ্ধি কাজে দিয়েছে। এরা পাশে থাকা মানে সবসময়ই হাসিমুখ থাকতে হয়।
হিশাম, ওকে ডিফাইন করার মতো শব্দ আমার কাছে নাই। ওর এতো এতো ব্যস্ততার মাঝেও আমাদের জন্য সময় বের করেছে । রিহার্সেলে নেচেছে, নাচিয়েছে আর এর মত বন্ধুপাগল মানুষ কমই আছে।
ঝর্ণা, অফুরন্ত প্রাণশক্তি। ভাইরে ভাই, মানুষ এইরকম কেমনে পারে কে জানে। প্রতি উইকেন্ডে মনে হয় চারটা করে প্রোগ্রাম থাকে ওর, সবগুলোতে সমান এনার্জি নিয়ে অংশ নেয়। দূরে থাকতো বলে আফসোস করতো কিন্তু সারাক্ষণ আমাদের জন্য মন পরে থাকতো।
রিনি, তন্দ্রা, ফারজানা, নীপা-রিহার্সালে এরা এতো সিরিয়াস হতে পারে যে তা ওদের না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতো না। ভাগ্য ভালো আমরা রিহার্সালের জন্য চার সপ্তাহ পেয়েছিলাম, নাহলে প্রতিনিয়ত ভালো করার চেষ্টা যেরকম ছিলো তাতে অনুষ্ঠান ডিসেম্বরে করতে হতো।
তামিমা, যার সংক্ষিপ্ত নাম তনু। রিহার্সালে আমাদের মতো আড্ডাবাজদের চিল্লায় চিল্লায় পারফর্ম করিয়েছে। মাইক হাতে নিয়ে চিল্লায়ে গলা ফাটাবাশঁ বানিয়েছে। অনুষ্ঠান সফল করতে দুধের বাচ্চাকে সময় না দিয়ে সবার সাথে যোগাযোগ রেখেছে, সবার ভালোটা তুলে এনেছে।
ফয়সাল, আমাদের ক্যামেরা মেজিক ম্যান। প্রতিটা অনুষ্ঠানে ওর ছবি তাক লাগিয়ে দেবার মতো, এমনকি পোষ্টার বানিয়েও তাক লাগিয়েছে। সবার সুন্দর সুন্দর ছবি তোলার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ ও পেতেই পারে ।
সোহাগ, আমাদের সুখন ভাই। এই অনুষ্ঠান আমার কাছে মনে হয় সোহাগের লিডারশিপ কোয়ালিটিটা দারুণভাবে বের করে এনেছে। রিহার্সালে প্রতিনিয়ত সবাইকে উদ্ভুত করেছে আর অনুষ্ঠানের ট্যাগলাইন ওর মাথা থেকে এসেছে।
খালেদ, অলরাউন্ডার আমাদের। টরেন্টোর সব খবর ওর কাছে আছে । আমাদের ডেনফোর্থ আড্ডার মধ্যমণি ও। আড্ডাপাগল এই ছেলেকে টরন্টো’র কোথায় ‘বাঘের দুধ’ পাওয়া যায় বলে দিলে খুঁজে এনে দিবে।
তন্ময়, SSC98_HSC00_CANADA_CHAPTER এর ফাউন্ডার। চরম আকারের মাস্তিবাজ ছেলে, সাথে দারুণ করে আবৃত্তি। পারিবারিক কারণে ব্যস্ত ছিলো কিন্ত সবসময়ই খোঁজ রেখেছে কিভাবে আমাদের সাহায্যে আসতে পারে ।
তুহিন, আমাদের ‘ওয়াও’ বাবা। অনুষ্ঠান সফল করতে ওর আইডিয়ার শেষ নাই। তবে যখন যা যা হেল্প চেয়েছি, বিনা দ্বিধায় ও করেছে। অনুষ্ঠানের ক্রেষ্ট ওর করা আর লোগোটাও ওর চিন্তার ফসল ।
মোস্তফা আর হীরা, অদ্ভুত সাবলিল তোরা দুজন। তোদের দুজনের মেধা আমরা আজীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবো। আমরা অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই তোদের। কারণ এই অনুষ্ঠান সফল করতে রিহার্সালের বিকল্প ছিলো না, তোরা তোদের বাসা চার সপ্তাহের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলি। নিজেদের সকল ব্যস্ততা ভুলে পরিবারকে সময় না দিয়ে প্রতি শুক্রবার আর রবিরার সন্ধা থেকে রাত অব্দি একাগ্রতার সাথে রিহার্সেল হাসিমুখে করে গিয়েছিস। বাড়তি পাওনা মোস্তফার উপস্থাপনা আর মেইন স্টেজের ব্যাকগ্রাউন্ড পোষ্টার হীরা’র করা ।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের সব স্পন্সরদের, যাদের কন্ট্রিবিউশন ছাড়া অসম্ভব ছিলো এতো বড় ইভেন্টটি সম্পন্ন করা। মহি ভাই, হিশাম, শুভ, সুমন ভাই, হোসনে মোবারক ভাই যারা যারা স্পন্সর ছিলেন তাদের ধন্যবাদ।
স্বপ্ন দেখেছিলাম কিন্তু বাস্তবতার পথ তোরা সবাই দেখিয়েছিস। তোদের সবার প্রতি পুরো কৃতজ্ঞ আমি।
পরিশেষে আমরা সকল ৯৮- বন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞ। এস.এস.সি পঁচিশ বছর পূর্ণ হবার জন্য আমাদের এই আয়োজন। যে কোন অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা তোমাদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাই। আমরা আমাদের চেষ্টার এতটুকু ত্রুটি করিনি অনুষ্ঠান সফল করার জন্য । অনুষ্ঠানটি সফল হলে আমাদের শ্রম সার্থক। এর মাঝেও যদি কেউ কোন কিছু নিয়ে কষ্ট পেয়ে থাকো তাহলে আমরা দুঃখিত। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের যে বন্ধন গড়ে উঠলো তা বজায় থাকুক আজীবন। সবাই ভালো থেকো।