বেসিক ইনকাম পাইলট প্রজেক্টের পরামর্শ দাখিল

স্বল্প আয়ের মানুষদের জীবনের মান উন্নয়নের জন্য মাথাপিছু প্রতি মাসে ১৩২০ ডলার অনুদান দেয়া উচিত

ডিসেম্বর ১০, ২০১৬

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : অন্টারিওর ‘বেসিক ইনকাম পাইলট প্রজেক্ট’ এর আওতায় স্বল্প আয়ের মানুষদের জীবনের মান উন্নয়নের জন্য মাথাপিছু প্রতি মাসে ১৩২০ ডলার অনুদান দেয়া উচিত। আর এটি দেয়া যেতে পারে অন্টারিওর নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে (যেমন উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চল এবং আদিবাসী অঞ্চল)। এমনটাই বলেছেন বেসিক ইনকাম পাইলট প্রজেক্ট এর উপদেষ্টা সাবেক সিনেটর হুগ সিগ্যাল। গত ৩ নভেম্বর তিনি এ বিষয়ে তার পরামর্শ দাখিল করেন অন্টারিও সরকারের কাছে। খবর টরস্টার নিউজ সার্ভিসের।

হুগ সিগ্যাল বলেন, যারা ডিজএবিলিটির কারণে কাজ করতে অক্ষম তারা এই ১৩২০ ডলারের সাথে অতিরিক্ত আরো ৫০০ ডলার করে পাবেন। আর বর্তমানে বিদ্যমান স্যোসাল এসিস্টেন্স এই বেসিক ইনকাম প্রজেক্টের সঙ্গে একিভূত হয়ে যাবে।

নিন্ম আয়ের শ্রমজীবীরা তাদের কাজ থেকে যে বেতন পাবেন তার একটা অংশ নিজেদের কাছে রাখতে পারবেন বেসিক ইনকাম পাইলট প্রজেক্টের আওতায় অনুদান পাবার পরও।

বেসিক ইনকাম পাইলট প্রজেক্টে নিন্ম আয়ের লোকদের অংশগ্রহণ করাটা হবে ঐচ্ছিক। যাদের বয়স ১৮ থেকে ৬৫, তারা এ প্রজেক্টে অংশ নিতে পারবেন।

বেসিক ইনকাম পাইলট প্রজেক্টের উপদেষ্টা হুগ সিগ্যাল বলেন, মানুষের দারিদ্রতা দূরীকরণের মাধ্যমে অন্যন্য ব্যয়ও কমানো যাবে। এর মধ্যে আছে Ñ  স্বাস্থ্য  খাতের ব্যয়, পুলিশের তদারকী খরচ সহ কমিউনিটির আরো কিছু খাতের খরচ। স্বল্প আয়ের মানুষের স্বাস্থ্য ভাল থাকলে কর্মস্থলে উৎপাদন মাত্রাও বৃদ্ধি পাবে। এটি একটি মানবিক ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। এই উদ্যোগের পাশাপাশি কর্মহীনদেরকে কর্মসংস্থানেও উৎসাহ যোগানো হবে। স্কিল ডেভলাপমেন্ট ও জব কাউন্সিলিং এ সহায়তা দেয়া হবে।

বর্তমানে অন্টারিওতে একজন কর্মহীন ব্যক্তি মাসে ৭০৬ ডলার করে পান স্যোসাল এসিস্টেন্স হিসাবে এবং যারা ডিজএবিলিটি সাপোর্ট প্রগ্রামে আছেন তারা পান ১১২৮ ডলার করে।

অন্টারিও প্রভিন্স বর্তমানে সোস্যাল এসিস্টেন্স এর ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রতি বছর ৯ বিলিয়ন ডলার খরচ করে থাকে। দারিদ্রতার সঙ্গে সম্পর্কিত চিকিৎসা ব্যয়, শিক্ষা ও লিগ্যাল সিস্টেম এর খরচ এই হিসাবে ধরা হয়নি।

অন্টারিওতে যে ব্যক্তির আয় টেক্স কাটার পর বছরে ২১ হাজার ডলারের কম তাকে দরিদ্র বলে বিবেচনা করা হয়।

অন্টারিও সরকার গত বাজেটের সময় সংকেত দিয়েছিল এই বেসিক ইনকাম প্রজেক্টে অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার। গত জুন মাসে কমিউনিটি এন্ড সোস্যাল সার্ভিসেস মিনিস্টার হেলেনা সাবেক সিনেটর সিগ্যাল কে এ বিষয়ে নকশা ও তা বাস্তবায়ন পরিকল্পনা করা জন্য দায়িত্ব দেন। উল্লেখ্য যে, সিগ্যাল বহু বছর ধরেই এই বেসিক ইনকাম বা গ্যারান্টিড এনুয়াল ইনকাম প্রবর্তন করার ব্যাপারে ওকালতি করে আসছিলেন।

সিগ্যালের দাখিল করা পরিকল্পনার উপর মন্তব্য করার জন্য জনগণকে আহ্বান জানানো হবে। মন্তব্য প্রদানের সময়সীমা আগামী জানুয়ারী পর্যন্ত। আগামী মার্চের বাজেটে এই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হতে পারে।

উল্লেখ্য যে, অন্টারিতে যারা দারিদ্রতার মধ্যে বাস করছেন তাদের আয়বৃদ্ধির জন্য এই বেসিক ইনকাম গ্যারান্টি প্রকল্প চালু হতে যাচ্ছে। প্রথম দিকে এটি পাইলট প্রকল্প হিসাবে চালু করা হবে। ফলাফল ভাল হলে পরবর্তীতে তা আরো বিস্তৃত হতে পারে।

অন্যদিকে ফেডারেল সরকারও এই প্রকল্পটি চালু করার বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। লিবারেল এর একটি পার্লামেন্টারী কমিটি ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরকারের কাছে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব রেখেছে।

বেসিক ইনকাম গ্যারান্টির প্রবক্তারা বলেন, এটি চালু হলে দরিদ্র জনগোষ্ঠি উপকৃত হবে এবং বর্তমানে চালু ওয়েলফেয়ার সিস্টেমসহ অন্যান্য প্রকল্পের চেয়ে কম খরচে তা নির্বাহ করা সম্ভব হবে। তারা আরো বলেন, দারিদ্রতা মানুষের স্বাস্থ্যের উপর বড়রকমের বিরুপ প্রভাব ফেলে। বেসিক ইনকাম গ্যারান্টির প্রকল্প চালু করা হলে অন্টারিওর হেলথ সিস্টেমের খরচও অনেক কমে যাবে।

প্রাপ্ত তথ্যে আরো দেখা যায়, কানাডায় প্রতিদিন প্রায় এক মিলিয়ন লোককে ফুড ব্যাংকের স্মরনাপন্ন হতে হয় অভাবের তারনায়। ইউনিভারসিটি অব টরন্টোর সোস্যাল ওয়ার্ক ফেকাল্টির অধ্যাপক লিওনার্ড এডওয়ার্ডের মতে কানাডায় প্রতি তিনজন দরিদ্র লোকের মধ্যে একজন হলেন ইমিগ্রেন্ট যারা এখানে মাইনরিটি গ্রুপের সদস্য হিসেবে বিবেচিতে হয়। অথচ কানাডা পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা ধনী দেশগুলোর একটি। বহু  সংখ্যক সেরা ধনীরও বসবাস রয়েছে এই কানাডায়। প্রথম সারির ১০০ জন ধনী কানাডিয়ানের মোট সম্পত্তির পরিমান ২০০ বিলিয়ন ডলার।

কোন সমাজে বা রাষ্ট্রে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠি বা সম্প্রদায়ের দারিদ্রতা সত্যিকার অর্থে সমাজ বা রাষ্ট্রের প্রতিটি সদস্যকেই ভোগায়। কারণ, ঐ নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠি দারিদ্রতার কারণে নানান রোগ-শোকে ভোগে, মানসিক রোগ তাদের নিত্য সাথী হয়ে দাড়ায়, আইশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বেশী সময় ব্যয় করতে হয় তাদের জন্য। ফলে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় ও আইন-শৃংখলা বজায় রাখার খরচ বৃদ্ধি পায়। দারিদ্রতার কারণে শারীরিক ও মানসিক রোগ লেগে থাকে বলে কর্মস্থলে তাদের উপস্থিতি কমে যায়। ফলে জাতীয় উৎপাদন ব্যহত হয়। স্কুল কলেজেও উপস্থিতির হার কমে যায় দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের। ড্রপআউট বেড়ে যায়। ফলে ভবিষ্যতে দক্ষ কর্মীবাহিনীর স্বল্পতা দেখা দেয়। এভাবে আরো নানাভাবে এই দারিদ্রতা সামজ ও রাষ্ট্রকে পিছিয়ে দেয়।

বেসিক ইনকাম গ্যারান্টির প্রবক্তাদের একজন সিনেটর আর্ট এ্যাগলিটন বলেন, এই প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করা গেলে সমাজে দারিদ্রতা কমবে এবং চিকিৎসা ব্যয়ও কমবে।

দেখা গেছে দেশে এবং বিদেশে যেখানেই গুরুত্বের সঙ্গে এই বেসিক ইনকাম প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে সেখানেই তা ইম্প্রেসিভ রিজাল্ট এনে দিয়েছে।

টরন্টোর ওমেন্স কলেজ হসপিটালের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেনিয়েল মার্টিন বলেন, আমরা যদি এই বেসিক ইনকাম এর ব্যাপারটি ঠিকমত কাজে লাগাতে পারি তবে তা একদিকে যেমন দারিদ্রতা দূরীকরণ সাহায়তা করবে অন্যদিকে কাজের প্রতি মানুষের অনিহাও দূর করবে। আর এটি অলীক কোন ধারণা নয়। এটি বাস্তবিকভাবেই করা সম্ভব। এতে করে আমাদের হেলথ কেয়ার সিস্টেমের ব্যয়ভারও বিপুল ভাবে হ্রাস পাবে।

উল্লেখ্য যে, কানাডায় এই গ্যারান্টিড মিনিমাম ইনকাম এর প্রকল্প আগেও চালু করা হয়েছিল। সেটি করা হয়েছিল ১৯৭০ সালের দিকে। ঐ সময় মেনিটোবার ডাউফিনে প্রকল্পটি চালু করার পর দেখা গিয়েছিল লোকজন কাজ থেকে সরে আসেনি। উপরন্তু দেখা গিয়েছিল হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ৮.৫% হ্রাস পেয়েছিল।