মসজিদে বিদ্বেষী হামলা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য
গত ১০ অক্টোবর স্কারবরোর ১২২৫ কেনেডি রোডে অবস্থিত একটি মসজিদে প্রবেশ করে মুসল্লিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষী ও ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রদান এবং হত্যা বা শারীরিক ক্ষতি করার হুমকি প্রদান করে রবিন লাকাতোস নামের এক ব্যক্তি। এই সময় মুসল্লিদের পাশাপাশি সেখানে ৮ থেকে ১০ বছর বয়সী এক ডজনেরও বেশি শিক্ষার্থীও উপস্থিত ছিল।
আকস্মিক এই ঘটনার পর এক পর্যায়ে মুসল্লিরা ঐ ব্যক্তিকে জোরপূর্বক মসজিদ থেকে বের করে দেয়। এর কিছুক্ষণ পর খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হয় এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে।
বিদ্বেষী এই ঘটনার পর টরন্টোর মেয়র অলিভিয়া চাও সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে বলেন, এটি ইসলামোফোবিয়ার একটি ‘ভয়ংকর’ উদাহরণ যা কমিউনিটিকে নাড়া দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখানে ইসলামোফোবিয়া এবং যে কোন ধরনের ঘৃণা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য এবং আমাদের শহরে এ ধরনের ঘটনা সহ্য করা হবে না।’
এদিকে ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ কানাডিয়ান মুসলিমস’ এর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে এবং ইসলামোফোবিক ও বর্ণবাদী বক্তব্য দেয়। এই ব্যক্তি ফিলিস্তিনি বিরোধী বক্তব্যও দেয়। নামাজরত ব্যক্তিদের প্রতি এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিও হুমকি প্রদান করে।
উল্লেখ্য যে, গত জুনে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান বলছে, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর টরন্টোতে ঘৃণামূলক অপরাধের ঘটনা বেড়েছে ৬৪ শতাংশ। সিবিসি নিউজের এক খবরে এ কথা বলা হয়।
কিন্তু বাস্তবতা সম্ভবত ভিন্ন। কারণ এই পরিসংখ্যানে সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ না পাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। টরন্টোর পুলিশ প্রধান গুৎড়হ উবসশরি নিজেই উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন ইসলামোফোবিক বা মুসলিম বিদ্বেষী ঘটনাগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে কম রিপোর্ট করা হচ্ছে। টরন্টো পুলিশের এক কর্মকর্তা ঔধপশ এঁৎৎ বলেন, এর কারণ হতে পারে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা পুলিশকে বিশ্বাস করে না বা তাদের উপর নির্ভর করতে পারে না।
উল্লেখ্য যে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কানাডায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে আক্রমণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় অ্যাক্টিভিস্ট ও সরকারি কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন।
আমরা লক্ষ্য করছি মুসলমানদের উপর ছোটখাট বিদ্বেষী হামলার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে কানাডায়। মসজিদে হামলা, হিজাব পরা মহিলাদের উপর হামলা ঘটেই চলেছে এবং দিনে দিনে এর মাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এগুলো ঘটাচ্ছে কানাডার উগ্র শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা।
এই সহিংসতা সবচেয়ে বড় বেদনাদায়ক দৃষ্টান্ত হিসাবে সামনে আসে ২০১৭ সালে যখন কুইবেকের একটি মসজিদে ছয় মুসলিমকে হত্যা করা হয়। সেদিন ইসলামিক কালচারাল সেন্টার অব কুইবেকে মাগরিবের নামাজ আদায়কালে আলেকজান্ডার বিসোনেট নামের এক যুবক অতর্কিতে স্বয়ংক্রিয় বন্দুক হামলা চালায়। বন্দুক হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৬ জন মুসল্লি। হামলার ঘটনায় আহত হন আরো ১৯ জন। পুলিশ পরে বিসোনেটকে গ্রেফতার করে।
পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৬ জুন লন্ডন অন্টারিওতেও ঘটে আরেক বেদনাদায়ক ঘটনা। এক সন্ত্রাসীর হামলায় প্রাণ হারান এক মুসলিম পরিবারের তিন প্রজন্মের চার সদস্য। রাস্তা পারাপারের সময় অতর্কিতে তাঁদের উপর একটি পিকআপ ট্রাক উঠিয়ে দিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হামলা ঘটানো হয়। হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ন্যাথানিয়েল ভেল্টম্যান নামের ২০ বছর বয়সী এক শ্বেতাঙ্গ যুবককে আটক করে স্থানীয় পুলিশ।
উল্লেখ্য যে প্রতিবারই মুসলিমদের উপর কোন হামলার ঘটনা ঘটলে কানাডার রাজনীতিকরা বিবৃতি দেন মিডিয়ায়। তারা এই ধরনের হামলার তীব্র নিন্দা জানান। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো কানাডায় ইসলামোফোবিয়া পরিস্থিরিত কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এটি নিশ্চিতভাবেই উদ্বেগজনক। আমরা মনে করি এর জন্য প্রশাসনকে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে এই পরিস্থিতির কোন উন্নতি ঘটবে না।