ক্রমবর্ধমান হারে অভিবাসীদের দেশ ছাড়ার প্রবণতা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে

নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, কানাডায় আসা অভিবাসীরা অন্য কোথাও সুযোগ-সুবিধা পাবার জন্য ক্রমবর্ধমান হারে দেশটি ছেড়ে যাচ্ছেন। অভিবাসীদের কানাডা ছেড়ে যাওয়ার জোয়ার সৃষ্টি হয় ২০১৭ ও ২০১৯ সালে। ওই দুই সময়ে ঐতিহাসিক গড়ের চেয়ে ৩১ শতাংশ বেশি অভিবাসী কানাডা ছাড়েন। ইন্সটিটিউট ফর কানাডিয়ান সিটিজেনশিপ এবং কনফারেন্স বোর্ড অব কানাডার পরিচালিত সমীক্ষা এটি।

সংবাদটি কানাডার জন্য দুর্ভাগ্যজনক সন্দেহ নেই। কনফারেন্স বোর্ড অব কানাডার আগের এক সমীক্ষার কথা উল্লেখ করে নতুন এই সমীক্ষায় বলা হয়, ‘কানাডার ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধি অভিবাসনের ওপর নির্ভরশীল। অভিবাসনের ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ায়, শ্রমিক ও অবসর গ্রহণকারীর অনুপাত উন্নত করে এবং শ্রমিক ঘাটতি সহজ করে। নবাগতরা কানাডার মানবিক লক্ষ্য অর্জনেও সহায়ক।’

শুধু তাই নয়, ইতিপূর্বে Environics Institute এবং Canadian Race Relations Foundation এর এক যৌথ জরিপে দেখা গেছে কানাডায় ৭৫% অধিবাসী মনে করেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইমিগ্রেন্টদের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। জরিপে আরো বলা হয়, অধিকাংশ কানাডিয়ান আগামীতেও এই বিশ্বাস ধরে রাখবেন যে, কানাডার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইমিগ্রেন্টদের ভূমিকা ইতিবাচক।

কানাডা মেধাবী অভিবাসী জনশক্তি থেকে সর্বোচ্চ সুফল তুলছে না। ছবি: ubyssey.ca

এদিকে অন্য এক জরিপে আমরা দেখতে পাচ্ছি, জব মার্কেটের উন্নতি ও বিকাশের জন্য কানাডা এখন সম্পূর্ণভাবে ইমিগ্রেন্ট নির্ভর হয়ে পড়েছে। স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার সর্বশেষ এম্পøয়মেন্ট ডাটা এই তথ্যই দিচ্ছে।

তাছাড়া কানাডা বর্তমান বিশ্বে একটি অন্যতম শিক্ষিত দেশ। আর এর কৃতিত্ব প্রধানত ইমিগ্রেন্টদের প্রাপ্য। অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে ইমিগ্রেন্ট পরিবারের ৩৬% ছেলে-মেয়ের (যাদের বয়স ২৫-৩৫ এর মধ্যে) ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি রয়েছে। আর এই একই বয়সের মূলধারার কানাডিয়ান ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি রয়েছে ২৪% জনের। সম্প্রতি সরকারের এক অভ্যন্তরীন অনুসন্ধানে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, কানাডা তার মেধাবী অভিবাসী জনশক্তি থেকে সর্বোচ্চ সুফল তুলছে না। মেধাবী অভিবাসীরা এখানে আসার পর অন্য দেশ থেকে নিয়ে আসা তাঁদের প্রশিক্ষণ ও যোগ্যতার স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হচ্ছে কানাডা। স্ট্যাটিসটিকস কানাডা সম্প্রতি এই তথ্য তুলে ধরেছে।

স্ট্যাটিসটিকস কানাডা আরো জানায়, জনসংখ্যার বড় অংশ অবসরের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ায় ওইসব সনদধারীদের কাজে লাগানো জরুরী। অবসরের কারণে শূন্য হওয়া পদ পূরণে কানাডার যথেষ্ট সংখ্যক প্রশিক্ষিত কর্মী আছে এটা নিশ্চিত করার জন্য উচ্চশিক্ষিত জনগণকে কাজে লাগানোই মুখ্য উপায়।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, কানাডার শ্রমবাজারে কাজের সন্ধানে নামা দক্ষ অভিবাসীগণ নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তাঁদের ভাষাগত দক্ষতা নেই, কানাডিয়ান অভিজ্ঞতা নেই, কানাডিয়ান ডিগ্রি নেই, কানাডিয়ান সংস্কৃতি সম্পর্কে তাঁদের ধারণা নেই এরকম কিছু অভিযোগ তুলে তাঁদেরকে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে।

এ সকল কারণেই দক্ষ অভিবাসীদের মধ্যে দেশ ছাড়ার প্রবণতা বাড়ছে। সম্প্রতি এর সঙ্গে আরো যোগ হয়েছে কানাডার আবাসন সংকট এবং দ্রব্যমূলের সীমাহীন উর্ধগতি। 

কনফারেন্স বোর্ড এর সমীক্ষায় বলা হয়েছে, কানাডাকে অভিবাসনের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে কেবল নবাগতদের আকৃষ্ট করলেই হবে না, ধরেও রাখতে হবে তাদেরকে। দক্ষ অভিবাসীদের প্রতি চাকরীদাতাদের মনোভাবও পাল্টাতে হবে যা অভিবাসী ও নিয়োগদাতা উভয়ের জন্য ভালো এবং শেষ পর্যন্ত তা অভিবাসীদের ধরে রাখার কাজে সহায়ক হতে পারে। অভিবাসী ও তাঁদের পরিবারের জন্য ব্যক্তিগত ও ক্যারিয়ার গড়ে তোলার সুযোগ নিশ্চিত করবে এমন নীতি গ্রহণের পাশাপাশি কানাডার সঙ্গে সংযোগ ও একাত্মতা বোধ বৃদ্ধির বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হলে তা আরও বেশি সংখ্যক অভিবাসীকে কানাডায় থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করতে পারে। বিষয়টি কানাডার নীতি নির্ধারকদের ভাবতে হবে জরুরী ভিত্তিতে।