কানাডার অর্ধেকেরও বেশি দক্ষিণ এশীয় নারী চাকরি ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক॥ ২ মার্চ ২০২২: মহামারির সময় কানাডার দক্ষিণ এশীয় নারীরা চাকরির ক্ষেত্রে কিছু খুবই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। নতুন এক সমীক্ষায় এই জনগোষ্ঠীর ওপর গভীরতর পর্যবেক্ষণ এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতার বিষয়ে অন্তর্দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।

কালচারাল কিউ এবং দ্য পিঙ্ক অ্যাটিটিউড ইভোলিউশনের সমীক্ষায় বলা হয়, এতে অংশ নেয়া অর্ধেকেরও বেশি দক্ষিণ এশীয় নারী অন্য কোনও সুযোগ পাবার জন্য চাকরি ছেড়ে দেবার কথা ভাবছেন।

এই সংখ্যা কানাডার অন্য যে কোনও নারী গ্রুপের চেয়ে বেশি। খবর দি কানাডিয়ান প্রেস এর। রিপোর্ট করেছেন এরিকা ইব্রাহিম। 

কালচারাল কিউ হলো টরন্টোভিত্তিক একটি সাংস্কৃতিক বাজার গবেষণা সংস্থা। আর ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত পিঙ্ক অ্যাটিটিউড ইভোলিউশন কানাডার একটি অলাভজনক সংগঠন যা বিভিন্ন শিল্পে দক্ষিণ এশীয় নারীদের সহায়তা দিয়ে থাকে।

মহামারির সময় কানাডার দক্ষিণ এশীয় নারীরা চাকরির ক্ষেত্রে কিছু খুবই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। ছবি: সিবিসি

দক্ষিণ এশীয় নারীদের বর্তমান কর্মস্থল ত্যাগের পেছনে যেসব কারণ রয়েছে তার মধ্যে ৪৮ শতাংশ নারী চাকরি সন্তোষজনক না হওয়ার বিষয়টিকে মুখ্য কারণ হিসাবে উল্লেখ করেন। সেই তুলনায় সব শ্রেণীর নারীদের ৩৫ শতাংশ এবং সব শ্রেণীর পুরুষদের ৩২ শতাংশের মধ্যে চাকরি নিয়ে অসন্তোষ আছে। চাকরি ছেড়ে দেবার দ্বিতীয় যে প্রধান কারণ তা হলো, ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। ৩৭ শতাংশ নারী চাকরি ছাড়বেন ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে।

“চাকরি ছেড়ে দেয়াটা পরিবর্তনের জন্য, এটি কেবল দক্ষিণ এশীয় নারীদের নয়, সবারই করা উচিৎ।” বলেন পুনীত মান। তিনি চাকরি পাল্টানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন এবং আগামী সপ্তাহে লরেন্টিয়ান ব্যাংকে ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসাবে নতুন পদে যোগদান করবেন।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পরিচারিত সমীক্ষায় বিভিন্ন পটভূমির ২২০০ নারী ও পুরুষের জবাব গ্রহণ করা হয়, যার মধ্যে ছিলেন ৭০০ জন দক্ষিণ এশীয় নারী ও ৪০০ জন শ্বেতাঙ্গ নারী এবং ১৫৮ জন দক্ষিণ এশীয় পুরুষ ও ৩০০ শ্বেতাঙ্গ পুরুষ।

৬৫ শতাংশ দক্ষিণ এশীয় নারী বলেন, তারা নিজেরাই ব্যবসায় শুরুর কথা ভাবছেন, সেই তুলনায় সব শ্রেণীর নারীদের ৪৬ শতাংশ এমন চিন্তার করেন।

বিভিন্ন ধরণের পাত্র ও রান্না ঘরের সরঞ্জামের অটোয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডালসিনির সিইও নীতা ট্যান্ডন বলেন, ওই সংখ্যাটি একজন উদ্যোক্তা হিসাবে তার নিজের অভিজ্ঞতার কথাই বলছে।

ট্যান্ডন বলেন, “আপনি অনেক চাকরিদাতার সঙ্গে কাজ করতে পারেন, কিন্তু সবখানেই শুধু এই অনুভূতিটুকুই অর্জন করবেন যে, আপনার কোনও মূল্যায়ন হচ্ছে না।” তিনি আরও বলেন, তার নিজের ব্যবসায় শুরুর পেছনে অংশত কাজ করেছে এই শিক্ষা যে, তাদের শ্বেতাঙ্গ সহকর্মীদের তুলনায় তার নিজের এবং অন্যান্য অশ্বেতাঙ্গ কর্মীদের বেতনের পরিমাণে ছিল বিপুল ব্যবধান।

“তখনই এর ভেতরের অন্যায্যতা অনুভব করতে শুরু করবেন।”

ট্যান্ডন বলেন, উদ্যোক্তা হবার পথে তার জন্য আকর্ষণীয় বিষয় ছিল নিজের কাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার সক্ষমতা। “আমাকে আমার পছন্দের কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করে নিতে এবং কাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই সেটা বাছাই করার মত পরিবেশ সৃষ্টি করে নিতে দিন।”

সমীক্ষায় একথাও বলা হয় যে, মহামারি দক্ষিণ এশীয় নারীদের ক্ষেত্রে অধিকতর চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছিল।

সমীক্ষায় অংশ নেওয়া নারীদের প্রায় অর্ধেকই বলেন, মহামারির কারণেই তারা চাকরি ছেড়ে দেবার কথা ভাবছেন। এই সংখ্যা সব শ্রেণীর নারীদের তুলনায় অনেক বেশি।

৬৫ শতাংশ নারী বলেছেন, মহামারি শুরুর পর তাদের ঘরের কাজের পরিমাণ বেড়েছে। এটিও সমীক্ষায় অংশ নেওয়া অন্য সব গ্রুপের নারীদের চেয়ে বেশি।

সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দক্ষিণ এশীয় নারী বলেছে যে, গত কয়েক বছরে তারা তাদের প্রত্যাশিত বেতনের পরিমাণ কমিয়েছেন। এ ধরণের বক্তব্য দেন ৬৪ শতাংশ নারী। অথচ সব শ্রেণীর নারীদের গড়ে ৫০ শতাংশ এবং সব শ্রেণীর পুরুষদের ৪৫ শতাংশ এমনটা বলেছেন।

পিঙ্ক অ্যাটিটিউডের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও রুবি ধিলন বুধবার বলেন,  কানাডার শ্রমশক্তি যখন অব্যাহতভাবে পাল্টে যাচ্ছে এবং দেশটি যখন তার জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধির জন্য প্রায় পুরোপুরিই অভিবাসীদের ওপর নির্ভর করছে তখন এই গ্রুপের দিকে মনোযোগ দেওয়া বিশেষভাবে জরুরী।

স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা বলছে, কানাডার অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর (ারংরনষব সরহড়ৎরঃু মৎড়ঁঢ়) বৃহত্তম অংশ হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশীয়রা। দেশটির কাজ করার বয়সী সব অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্ব করে দক্ষিণ এশীয়রা।

২০১৬ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, সব অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মধ্যে দক্ষিণ এশীয় নারীরা হলো অন্যতম সর্বোচ্চ শিক্ষিত গোষ্ঠী।

২০২১ সালের এপ্রিল মাসে চাকরিতে নিয়োজিত দক্ষিণ এশীয় নারীর হার ছিল ৫৯.৭ শতাংশ, যা একই জনগোষ্ঠীর পুরুষ তুলনায় শতকরা ১৫ শতাংশ কম। পুরুষদের হার ছিল ৭৫.৫ শতাংশ।

স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার ২০২০ সালের জুলাই মাসের তথ্যে দেখা যায়, অন্য সব কমিউনিটির লোকেদের চেয়ে দক্ষিণ এশীয় নারীদের বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ, যা ছিল ২০.৪ শতাংশ।

কর্মসংস্থান মন্ত্রী কারলা কুয়ালথ্রো বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার বিশ্বাস করে, শ্রমশক্তিতে আরও বেশি সংখ্যক নারীর অন্তর্ভুক্তি ও টিকে থাকার নিশ্চয়তা বিধান করা শক্তিশালী অর্থনীতির জন্য জরুরী।

কুয়ালথ্রোর দপ্তর বলেছে যে, নারীর কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে একটি পরীক্ষামূলক কর্মসূচির জন্য ২০২০ সালের শরৎকালীন অর্থনৈতিক বিবরণীতে দুই বছর মেয়াদে ৫ কোটি ডলারের তহবিল রাখা হয়েছে। এই কর্মসূচির অধীনে বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হওয়া নারীদের কর্মসংস্থানের আগে দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন সংগঠনকে সহায়তা দেয়া হয়। এছাড়া অশ্বেতাঙ্গ নারীদের সহায়ক কর্মসূচিতে সহায়তা দেওয়াও উল্লেখিত কর্মসূচির অন্যতম অগ্রাধিকার।