৯/১১-এর দুই দশক : প্রতিশোধে ধ্বংস পাঁচ দেশ

২০ বছরে নিহত ৯ লাখ ২৯ হাজার মানুষ

২০ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ করছে মার্কিন সেনাবাহিনী * খরচ ৮ ট্রিলিয়ন ডলার, ৮০ দেশে বোমা হামলা * যুদ্ধ ব্যয় প্রতি ঘণ্টায় ৩ কোটি ২০ লাখ ডলার * সেই আল-কায়দাকেই ধ্বংস করতে পারেনি ওয়াশিংটন * ১৭৪১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৮৪টি দেশে সরাসরি আগ্রাসন * জাতিসংঘ স্বীকৃত মাত্র ৩টি দেশ ছাড়া বাকি ১৯০ দেশেই সামরিক হস্তক্ষেপ

 জামির হোসেন , ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১

নাইন ইলেভেন হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশোধমূলক আগ্রাসনে অন্তত পাঁচটি দেশ একেবারেই ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশগুলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে আফগানিস্তান।

মার্কিন ও পশ্চিমা বাহিনীর গত দুই দশক ধরে চালানো হামলায় দেশটি এখন কার্যত ধ্বংসস্তূপ। একই অবস্থা ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া ও ইয়েমেনেরও।

নাইন ইলেভেন হামলার এক মাস পরই (৭ অক্টোবর) ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’র নামে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায় মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী।

এরপর প্রতি বছরই এই তালিকায় যোগ হয়েছে নতুন নতুন দেশের নাম। এশিয়ার ফিলিপাইন থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বহু দেশই এই তালিকায় রয়েছে।

‘বিধ্বংসী মারণাস্ত্র’ রাখার অভিযোগে ২০০৩ সালে হামলা চালানো হয় ইরাকে। ২০০৬ সালে আক্রমণ চলে লিবিয়ায়। ২০১১ সালে সিরিয়ায় ও ইয়েমেনে।

নাইন ইলেভেন হামলার পরই এর কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’র ঘোষণা দেন তৎকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। চরমপন্থি গোষ্ঠী আল কায়দার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে মার্কিন সেনারা। যা শেষ হওয়ার কোনো নামগন্ধ নেই। অসীম এই যুদ্ধে অসংখ্য স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশে আগ্রাসন চালানো হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক সব মারণাস্ত্র আর যুদ্ধবিমান। ফেলা হয়েছে হাজার হাজার টন ক্ষেপণাস্ত্র আর বোমা। কিন্তু যে আল কায়দার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধের আয়োজন সেই সশস্ত্র গোষ্ঠীকে আজও ধ্বংস করতে পারেনি ওয়াশিংটন।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ‘কস্টস অব ওয়ার প্রোজেক্ট’র এক গবেষণা প্রতিবেদন মতে, গত ২০ বছরে ৮০টি দেশে বোমা হামলা ও গোলাবর্ষণ করেছে অথবা সরাসরি যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রের এসব আগ্রাসনে গত দুই দশকে নিহত হয়েছে ৯ লাখ ২৯ হাজার মানুষ। মানুষ নিহত হয়েছে।

আর এসব আগ্রাসন পরিচালনার জন্য খরচ হয়েছে আট ট্রিলিয়ন ডলার (১ ট্রিলিয়ন=১ লাখ কোটি)। আফগানিস্তান, ইরাক, পাকিস্তান এবং সিরিয়ায় পরিচালিত আগ্রাসনে আমেরিকা আট ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।

এর মধ্যে ২.৩ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে আগ্রাসন পরিচালনার জন্য। ক্যাথেরিন ল্ৎুজ বলেন, ‘মার্কিন কেন্দ্রীয় বাজেটের বিরাট অংশ পেন্টাগন এবং মার্কিন সামরিক বাহিনীতে খরচ করা হয়। কিন্তু আমেরিকার জনগণ তা জানে না।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন নেতারা বারবার এই ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’র ইতি টানার ঘোষণা দিলেও (সর্বশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আর অন্য দেশে সেনা পাঠাবে না) তাদের এই যুদ্ধ এখনো চলমান। কার্যত বিশ্বব্যাপীই ছড়িয়ে রয়েছে মার্কিন সেনারা।

মার্কিন কংগ্রেসওম্যান ও হাউজ অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস কমিটির সদস্য বারবারা লি এক নিবন্ধে বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সন্ত্রাসবিরোধী এখনো চলছে।

আর এর পেছনে প্রতি ঘণ্টায় তিন কোটি ২০ লাখ ডলার ব্যয় হচ্ছে যা মার্কিন জনগণের পকেট থেকে মেটানো হচ্ছে। বারবারা লি একমাত্র কংগ্রেস সদস্য যিনি মার্কিন কংগ্রেসে ২০০১ সালে আফগানিস্তান যুদ্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন।

দেশে দেশে যুক্তরাষ্ট্রের এই যুদ্ধ ও আগ্রাসন নতুন নয়। মার্কিন ইতিহাসবেত্তা ক্রিস্টোফার কেলি ও ব্রিটিশ ইতিহাসবেত্তা স্টুয়ার্ট লেইকক তাদের গবেষণা গ্রন্থে বলেছেন, ১৭৪১ সাল আমেরিকা সৃষ্টি হওয়ার বহু আগে থেকেই এমন আগ্রাসন চালিয়ে আসছে আমেরিকা।

গত প্রায় তিনশ’ বছরে ৮৪টি দেশে সরাসরি আগ্রাসন চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এ ছাড়া জাতিসংঘ স্বীকৃত মাত্র তিনটি দেশ ছাড়া বাকি ১৯০টি দেশেই সামরিক হস্তক্ষেপ করেছে। – যুগান্তর