আমার কাছে এখনও আইপিএলেই সেরা ক্রিকেট হয় বলে মনে হয়

বিগ ব্যাশে খেলে ফেরার ভেতর দিয়ে একটা বৃত্ত পূরণ করে ফেললেন বলা যায় বিশ্বের নামকরা প্রায় সব টি-টোয়েন্টি লিগেই খেলা হয়ে গেল সাকিব আল হাসানের!

তবে বিগ-ব্যাশে সংক্ষিপ্ত এই সফর শেষ করে এসেও বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব মনে করে, আইপিএলই এই ঘরানার এখনও সেরা আসর। এই কথা বলার ভেতর দিয়ে অবশ্য বিগ ব্যাশকে ছোট করছেন না। ক্রিকেটীয় মান, খেলার অস্ট্রেলিয়ার আতিথ্য নিয়ে সন্তোষই প্রকাশ করলেন তিনি। শুধু নিজের সন্তোষ-অসন্তোষ নয়, সামগ্রিকভাবে অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন সাকিব আল হাসান সম্প্রতি দেয়া এক সাক্ষাত্কারে। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন দেবব্রত মুখোপাধ্যায়

প্রশ্ন : একটা লিগকে চেনার জন্য যতো সময় পাওয়া দরকার, তা ঠিক পাননি। তারপরও বিগ ব্যাশ কেমন লাগল?

উত্তর : ভালো। এক কথায় ভালো। এমনিতে এই পর্যায়ের বাকি সব টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের মতোই। তারপরও অনেক গোছানো আয়োজন, বেশ ভালো লেগেছে।

প্রশ্ন : অনেকগুলো ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের অভিজ্ঞতা হল। বিগ ব্যাশের সঙ্গে বাকিদের কোনো পার্থক্য টের পেলেন?

উত্তর : না, খুব একটা পার্থক্য নেই। উপমহাদেশের টুর্নামেন্টগুলো বাদ দিলে বাকি সবগুলো প্রায় একইরকম হয় বিগ ব্যাশ, সিপিএল বা ফ্রেন্ডস লাইফ।

প্রশ্ন : উপমহাদেশের টুর্নামেন্টগুলোর সঙ্গে এদের পার্থক্যটা কোথায়?

উত্তর : মূলত কন্ডিশন আর দর্শক। কন্ডিশনের পার্থক্যটা তো থাকবেই। উপমহাদেশের মতো এই কন্ডিশন ওসব জায়গায় হবে না, এটাই স্বাভাবিক। দর্শকের ব্যাপারটাও খুব ভিন্ন। আমাদের এখানে আইপিএল বা বিপিএলে যেরকম মাঠ ভর্তি দর্শক থাকে, বাইরের এসব টুর্নামেন্টে সেরকম থাকে না। এটাই যা পার্থক্য।

প্রশ্ন : টি-টোয়েন্টির ক্রিকেট মান নিয়ে নানান সমালোচনা আছে। এর মধ্যেও বলা হয়, বিগ ব্যাশে বেস্ট ক্রিকেটটা খেলা হয়। এই সময়ে তাই মনে হল?

উত্তর : বেস্ট বলবো না। খুব ভালো ক্রিকেট হয় বলেই মনে হল। যদিও এই অল্প সময়ে বোঝা কঠিন। তারপরও আমার কাছে এখনও আইপিএলেই সেরা ক্রিকেট হয় বলে মনে হয়। আইপিএলে তো বিশ্বের সেরা মোটামুটি সব খেলোয়াড়ই থাকে। ফলে ক্রিকেটটাও অনেক উঁচু মানের হয়।

প্রশ্ন : আপনার নিজের শুরুটা তো অসাধারণ হল। ব্যাটে-বলে অমন পারফরম্যান্সে কী নিজেই একটু সারপ্রাইজড হয়েছিলেন?

উত্তর : ঠিক সারপ্রাইজড হয়েছিলাম, তা বলা যাবে না। কারণ ভালো পারফরম্যান্স তো আশা করিই। কিন্তু ওই পারফরম্যান্স করতে পেরে খুব ভালো লেগেছে। কারণ কাজটা সোজা ছিল না। লম্বা জার্নি করে গেছি। তারপর আপনারা জানেন, একেবারে ভিন্ন কন্ডিশন, অপরিচিত প্রতিপক্ষ। ফলে ওরকম একটা পারফরম্যান্স দিয়ে শুরু করাটা খুবই কঠিন ছিল এবং ভালো লেগেছে সেটা করতে পেরে।

প্রশ্ন : যাওয়ার আগেও বলেছেন। আরেকবার বলুন, আপনার কাছে এই বিগ ব্যাশে খেলে আসার অর্থটা কী?

উত্তর : আরেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে খেলা। বিশ্বের বড় সবগুলো টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলে ফেলা।

প্রশ্ন : এমসিজিতে প্রথম খেললেন এখানে গিয়ে। এটা নিয়ে আলাদা কোনো আবেগ ছিল?

উত্তর : আবেগ…। না, ঠিক ওইরকম না। তবে এতো নামকরা একটা ভেন্যু এই মেলবোর্ন। সেখানে আগে খেলা হয়নি। এবার খেললাম। একটু তো অন্যরকম লাগেই। অনেক নাম শুনেছি। এবার নিজে সেখানে খেলে এলাম।

প্রশ্ন : এডিলেডের সতীর্থরা কিভাবে নিয়েছিল আপনাকে?

উত্তর : ভালোভাবেই নিয়েছিল। এই পর্যায়ে টিমগুলোতে বাইরের খেলোয়াড়দের খুব ভালোভাবে নেয়া হয়। তবে সেভাবে মেশার সুযোগ হয়নি। মাত্র অল্প কটা দিন ছিলাম তো। আরও কিছুদিন থাকলে হয়তো ভালো ঘনিষ্ঠটা তৈরি হতো।

প্রশ্ন : এমনিতো তো বিগ ব্যাশে বিদেশি কম। তারওপর অল্প দিনের জন্য খেলতে গেলেন। একটু আউটসাইডার মনে হয়েছে নাকি নিজেকে?

উত্তর : হুম…। কখনো কখনো। অল্প সময়ের জন্য গেছি বলে এমন মনে হয়েছে হয়তো।

প্রশ্ন : আপনি বিগ ব্যাশে যাওয়ায় বাংলাদেশি দর্শকরা রাতারাতি এডিলেট স্ট্রাইকার্সের সমর্থক হয়ে গিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশিরাও ফেসবুকে দেখা গেছে খুব উচ্ছ্বসিত। আপনি টের পেয়েছেন?

উত্তর : খুব। অনেকেই তো দেখা করতে এসেছেন, আপ্যায়ন করেছেন। মাঠেও টের পাওয়া যেত। আসলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সব জায়গার মতোই দারুণ সাপোর্ট করেছেন এখানেও।

প্রশ্ন : এই যে একা একা ফ্রেন্ডস লাইফ, সিপিএল, আইপিএল, বিগ ব্যাশ খেলতে চলে যান। নিঃসঙ্গ লাগে না কখনো?

উত্তর : নাহ। এবার তো অল্প সময় ছিলাম, তেমন অনুভূতি তৈরি হওয়ার সময়ই হয়নি। তবে নিঃসঙ্গ না লাগলেও টিম মেটদের খুব মিস করেছি; সবসময়ই করি। এবারও মনে হয়েছে, বিগ ব্যাশে আমাদের আরও কিছু খেলোয়াড় থাকলে ভালো হত। এটা দেশের ক্রিকেটের জন্যও ভালো হত।

প্রশ্ন : আপনি এটা ওখানে বসেও বলেছেন, দেশের আরও ক্রিকেটার বিগ ব্যাশে যাক, সেটা চান। কী মনে হল, সেটা হবে?

উত্তর : আমার পক্ষে তো বলা মুশকিল। তবে আমি তাই আশা করি। এরকম যতো বেশি হবে, আমাদের জন্য ততোই ভালো।