অন্টারিওতে বিনামূল্যে ওষুধ প্রদানের পরীক্ষামূলক কর্মসূচি স্বাস্থ্যসেবা খাতে সামগ্রিক ব্যয় সাশ্রয় করেছে
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : অন্টারিওতে যে পরীক্ষামূলক কর্মসূচিতে শত শত মানুষকে বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হয় তার ফলাফল বলছে, ওষুধের ব্যয় সরকার বহন করলে সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা খাতের ব্যয় সাশ্রয় হয়। নতুন এক সমীক্ষায় এটি জানা গেছে। খবর বেথানি লিন্ডসে ও ক্রিস্টাইন বিরাক – সিবিসি নিউজ।
জামা হেল্থ ফোরামের (JAMA Health Forum) সাময়িকীতে বুধবার প্রকাশিত গবেষণায় ৭৪৭ জন রোগীর ওপর পর্যবেক্ষণ চালানো হয় যারা জানিয়েছেন যে, ওষুধের বেশি দামের কারণে তারা প্রেসক্রিপশনের সব ওষুধ কিনতে পারেননি অথবা দুটি ডোজের মধ্যে সময়ের ব্যবধান বাড়িয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
তিন বছর পর গবেষকরা দেখতে পান, রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ দেয়ার ফলে প্রত্যেক রোগীর জন্য বছরে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের ব্যয় গড়ে ১,৪৮৮ ডলার করে সাশ্রয় হয়েছে। এক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে রোগীদের হঠাৎ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মত ঘটনা কমে যাওয়ায়।
টরন্টোর সেন্ট মাইকেলস হাসপাতালের স্টাফ ফিজিশিয়ান এবং গবেষণাপত্রে অন্যতম রচয়িতা ডা. ন্যাভ পারসৌদ বলেন, “যে ব্যাপক হারে অর্থ সাশ্রয় হয়েছে তাতে আমি অবাক।”
“মনে হচ্ছে যেন চিকিৎসার জন্য অর্থ নেওয়া বাদ দেয়া হলে রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, ইমার্জেন্সি রুমে দৌড়ানো ইত্যাদি এড়ানোর মাধ্যমে খরচ বাঁচায় এবং একইভাবে এটি জনগণকে স্বাস্থ্যবান করার মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে অসাম্যের সমাধান করেÑ এটি স্বাস্থ্যসুবিধা পাওয়ার বিষয়টিকে আরও ন্যায্যতা দেয়।”
কানাডীয়রা যখন ২০২৩ সালের মধ্যে সার্বজনীন ফার্মাকেয়ার পরিকল্পনা সম্পর্কিত কোনও আইন পার্লামেন্টে উপস্থাপন করা হয় কিনা সে বিষয়ে অপেক্ষমান ঠিক তখনই এই গবেষণার তথ্য প্রকাশ পেলো। কেন্দ্রের লিবারেল দল ও নিউ ডেমোক্র্যাট দলের মধ্যে কনফিডেন্স-অ্যান্ড-সাপ্লাই চুক্তিতে এ ধরণের আইন করার অঙ্গীকার করা হয়।
গবেষণায় যে ১২৮টি ওষুধ রাখা হয়েছিল সেগুলির মধ্যে কিছু ছিল কানাডায় সবচেয়ে বেশি প্রেসক্রাইব করা হয় এমন। এর মধ্যে রয়েছে এমন কিছু ওষুধ যেগুলি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে ডিপ্রেশন ও স্কিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। ডা. ন্যাভ পারসৌদ বলেন, এইসব চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থাপত্র পেতে যে কোনও জায়গায় দৈনিক এক পেনি থেকে শুরু করে ১,০০০ ডলারের বেশি ব্যয় করতে হয়। এ ধরণের চিকিৎসায় সাধারণ রোগীদের মাসে ৩০ থেকে ৪০ ডলার পর্যন্ত ব্যয় হয়।
সংশ্লিষ্ট রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা খাতের ব্যয় হিসাব করা হয় টরন্টোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রশাসনিক উপাত্ত ব্যবহার করে। এতে ডাক্তারের ভিজিটসহ ইমার্জেন্সি রুমের ব্যয় ও বিভিন্ন ধরণের টেস্টের ব্যয় সমন্বয় করা হয়।
দাম বেশি বলে লাখো মানুষ প্রেসক্রিপশনের সব ওষুধ সেবন করে না
যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ জিল্যান্ড সরকারি পরিকল্পনার আওতায় নাগরিকদের জন্য ওষুধ পাওয়ায় সার্বজনীন কাভারেজ দেয়। ফ্রান্স, জার্মানি ও নেদাল্যান্ডসসহ ইউরোপের কিছু দেশ বাধ্যতামূলক বীমা করার মাধ্যমে সার্বজনীন কাভারেজ দেয়।
কানাডায় বর্তমানে প্রাদেশিক সরকারের পরিকল্পনার অধীনে সীমিত আকার ওষুধের ব্যয় বহন করা হয়।
কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের ফার্মাকেয়ার সম্পর্কিত উপদেষ্টা পরিষদের তথ্যমতে, দাম বেশি বলে ৩০ লাখ কানাডীয় নাগরিক প্রেসক্রিপশনের সব ওষুধ কেনে না, আরও ১০লাখ মানুষ ওষুধ কেনার জন্য খাদ্য ও বাড়ির উষ্ণতা রক্ষার ব্যয় কর্তন করেন।
উপদেষ্টা পরিষদ তার ২০১৯ সালের রিপোর্টে উল্লেখ করে যে, বর্তমানে কানাডাবাসী প্রেসক্রিপশনভিত্তিক চিকিৎসা খাতে শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ড ছাড়া অন্য সব দেশের মানুষের চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করেন।
রিপোর্টে বলা হয়, “দুঃখজনক যে, আধুনিক ওষুধ ধরাছোঁয়ার বাইরে বলে খুব বেশি সংখ্যক কানাডীয়কে অকালে মৃত্যুবরণ করতে হয় অথবা অসুস্থতা বা নিম্নমানের জীবনযাপনের মত ভয়ানক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।”
সমালোচকরা বলেন সার্বজনীন ফার্মাকেয়ার অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য
২০২৩ সালের কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটে প্রতিশ্রুত ফার্মাকেয়ার বিলের কোনও উল্লেখ নেই। যদিও এনডিপির দেয়া সময়সীমা এ বছরই ফুরিয়ে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জিন-ইভেস ডুকলো শুক্রবার বলেন, সময়সীমা রক্ষা করা এখনও সরকারের পরিকল্পনার অংশ। তিনি অন্টারিওর গবেষণার ফলাফলকে “বিস্ময়কর নয়” বলে উল্লেখ করে বলেন, এ বিষয়ে বহু গবেষণার তথ্যের সাথে এর সামঞ্জস্য আছে।
সিবিসি নিউজকে তিনি বলেন, “লোকেদের যখন প্রয়োজনীয় ওষুধ কেনার সামর্থ্য থাকে না কিংবা পাবার কোনও সুযোগও থাকে না তখন তাদেরকে স্বাস্থ্যগত খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়, এই অবস্থায় পরে তাদের চিকিৎসা আরও জটিল, আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে।”
সরকারীভাবে সার্বজনীন ফার্মাকেয়ার চালুর বিরোধিতাকারীদের মধ্যে কেউ কেউ, যার মধ্যে ফ্রেসার ইন্সটিটিউট এবং কানাডার ট্যাক্সপেয়ার্স ফেডারেশনও আছে, যুক্তি দেখাচ্ছেন যে, এটি হবে খুবই ব্যয়বহুল এবং তারা বলেন, কানাডার বেশিরভাগ মানুষ এখন চাকরির সূত্রে অথবা প্রাদেশিক কর্মসূচির আওতায় ওষুধের ভালো কভারেজ পাচ্ছেন।
কিন্তু এমনকি ফ্রেসার ইন্সটিটিউটের ফেলো নাইজেল রসন, যিনি সাসকাচুনের একজন ফার্মাকোএপিডেমিওলজিস্ট, বলেন, অন্টারিওর নতুন গবেষণা এটাই তুলে ধরছে যে, দেশে কোনও এক ধরণের জাতীয় ফার্মাকেয়ার প্ল্যান থাকা দরকার।
তিনি বলেন, “এমন দামী ওষুধ আছে যেগুলি কেনার সাধ্য আসলে কারোরই নেই, তা তাদের আয় যথেষ্টই হোক বা স্বল্প। আমাদের এমন ব্যবস্থা থাকা দরকার যাতে লোকেরা প্রয়োজনের সময় ওইসব ওষুধ পেতে পারে।”
ক্যালগেরি ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির প্রফেসার এইডান হোলিস আশা করেন, অন্টারিওর গবেষণায় বিনামূল্যে ওষুধ দেয়ার ফলে স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে এটি কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর সক্রিয় হতে চাপ হিসাবে কাজ করবে।
সবার জন্য ওষুধের কভারেজকে তিনি প্রতিরোধমূলক প্রযত্নের মুখ্য উপাদান বলে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, “জনগণের সেবাযত্ন করা বাড়ির দেখাশোনা করার মতই। আপনাকে সব ধরণের মেইনটেনেন্স করতেই হবে, আর যদি না করেন তাহলে শেষে এমন বিপুল ব্যয়ের মুখে পড়বেন যা আপনার পরিকল্পনায় ছিলো না।”