“পহেলা বৈশাখ: সেকাল-একাল”
গোলাম দস্তগীর
আমি ভেবে পাই না কোনো সাত-পাঁচ
যখন শুনি বিশ হাজার টাকার জিলাপির প্যাঁচ |
সোনার নতুন আহ্বান আমারে এবার চিবিয়ে খাও
কোথায় সোনা কোথায় জিলাপি সব নিমেষে উধাও |
দুদকের ভয়ে না কি মোবাইল কোটের ধর-পাকড়ে
নাকি টাকার গরমেই সবই গেছে অতি লোভীর ভাড়ে |
এ কী দেখি চারিদিকে এ কোন পতনের ডঙ্কা
নেই কোনো জেল-জুলুম বা শাস্তির শংকা |
এরই মাঝে এলো ১৪৩০ এর শুভ নববর্ষ
কেমনে ডাকি ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ |
বৈশাখ মানে মেলার আসর আর যাত্রা গানের পালা
দোলনা চড়া, পুতুল নাচ, আর হরেক রকমের খেলা |
আজকে সবাই অনলাইনে, নববর্ষের শুভেচ্ছা শোনে
কোথায় মেলা কোথায় খেলা, ব্যস্ত সবাই মোবাইল ফোনে |
শত বছরের মঙ্গল শোভাযাত্রার চারুকলার কত আয়োজন
কেউ বলে ওটা হিন্দু সংস্কৃতি বাঙালির নেই কোনো প্রয়োজন |
কেউ বলে হিন্দুর কেউ বলে মুসালমানের এই নিয়ে দ্বন্ধ এবার
কিন্তু হিন্দু-মুসলিম সকলে বাঙালি, সংস্কৃতি আমাদের সবার |
কত বাঙালি আজও খায় নিত্যদিনের পান্তা আর মরিচ
আবার বার্গার-বিরিয়ানি খাওয়া বাবু বৈশাখে খায় পান্তা ইলিশ |
সারা বছর স্যুট-প্যান্ট আর বৈশাখে পাজামা-পাঞ্জাবির বাহার
আবার কেউ ফাইভ-স্টারে ঢোকে দশ হাজার টাকার বৈশাখী অফার |
আগের দিনে বৈশাখ এলে আশায় থাকতাম হালখাতার
বছরের পাওনা মিটিয়ে দিলে মিষ্টি দিতো দোকানদার |
কোথায় সেই মন্ডা-মিঠাই আর কোথায় সেই সংস্কৃতি
এখন দেখি বিকাশ আর সোশ্যাল মিডিয়ার বিস্তৃতি |
আগের দিনের বৈশাখে কার্ডে লিখতাম শুভেচ্ছা বাণী
এখন ইন্টারনেটে একই ছবি ফরওয়ার্ড করতে জানি |
আগের দিনের বৈশাখে দেখা করতাম জনে জনে
এখন একই বার্তা হাজার জনে পৌঁছে যায় অনলাইনে |
কোথায় মানবপ্রেম, কোথায় দেশপ্রেম, কোথায় মাঙ্গলিক আয়োজন
কোথায় সংস্কৃতি কোথায় আচার-অর্চনা কেবলই আধুনিকতার উপকরণ |
আগে ছিল উৎসব আয়োজন রীতি-রেওয়াজের উৎযাপন
এখন দেখি দলা দলি আর ধর্মান্ধতার কড়া অনুশাসন |
এবার ১৪৩০ -এর নববর্ষ আসে ঈদের ঠিক সামনে
মধ্যবিত্তের কত আহাজারি ঈদ করি কেমনে |
যার হাতে-গোনা বেতন-ভাতা তারই অর্থের টানাটানি
কত অসহায়, হয়ে নিরুপায়, কেবলি করে হানাহানি |
কত দুঃস্থ হত-দরিদ্রের বিবর্ণ বস্ত্রে কতই না কাতর
ওদিকে দেখি বিশ হাজার টাকার বিদেশী জামার আসর |
মঙ্গল আসে না মঙ্গল শোভাযাত্রায় বা পান্তা-ইলিশের বাহারে
কল্যাণ আনে পুন্য কর্মে দুঃখী মানুষের জন্য দু’মুঠো আহারে |
–গোলাম দস্তগীর
টরন্টো, এপ্রিল ১৪, ২০২৩