মহামারিকালে অন্টারিও’র বেশিরভাগ তরুণ বিষন্নতায় আক্রান্ত

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, জুলাই ৮, ২০২১ : প্রাথমিক গবেষণায় জানা যাচ্ছে, কোভিড-১৯ সঙ্কট অন্টারিও’র তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর স্থায়ী ও উল্লেখযোগ্য প্রভাব রেখে যাচ্ছে।

টরন্টোর ‘সিক কিডস হাসপাতালের’ গবেষকরা বৃহস্পতিবার যে প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করেছেন তাতে আভাস পাওয়া যায় যে, মহামারির দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় শিশু ও টিনএজ তরুণদের বেশিরভাগেরই মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। খবর দি কানাডিয়ান প্রেসের।

এর আগের তথ্য-উপাত্তের কোনও তুলনামূলক পর্যালোচনার সুযোগ ছিলো না। কিন্তু তা থেকে দেখা যায়, গত ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে আট থেকে ১২ বছর বয়সী ৭৫৮টি শিশুর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যক জানিয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিষন্নতার লক্ষণ দেখা দেয়।

এই মনস্তাত্ত্বিক পরিণতি টিনএজারদের মধ্যে আরও বেশি স্পষ্ট। ১৩ থেকে ১৮ বছরের ৫২০ জন বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছা তরুণের মধ্যে ৭০ শতাংশই যথেষ্ট পরিমাণে বিষন্নতার লক্ষাণাক্রান্ত হয় বলে জানিয়েছে।

অন্টারিওর মোটামুটি ১,৫০০ পরিবার ও শিশুর মধ্যে পরিচালিত জরিপ থেকে এই উপসংহারে পৌঁছা গেছে। এই জরিপ ছিল মহামারিকালে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা জানতে পরিচালিত ধারাবাহিক সমীক্ষার অংশ।

প্রাথমিক গবেষণায় জানা যাচ্ছে, কোভিড-১৯ সঙ্কট অন্টারিও’র তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর স্থায়ী ও উল্লেখযোগ্য প্রভাব রেখে যাচ্ছে। ছবি : দি কানাডিয়ান প্রেস

‘সিক-কিডস’ হাসপাতাল এর চলমান সমীক্ষার মুখ্য গবেষক ড. ড্যাফনি করজ্যাকবলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, অন্টারিও’র কঠোর লকডাউন ব্যবস্থা সেই সঙ্গে কিছু এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকার বিষয়টি তরুণদের ওপর মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়েছে এবং তা দীর্ঘস্থায়ী পরিণতি রেখে যেতে পারে।

ড. কারজ্যাক বলেন, ‘এক বছর সময়ে বাচ্চাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে, তারা খাপ খাইয়ে নিচ্ছে বা সহনশীল হয়ে উঠছে এমন কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।’ ড. কারজ্যাক হলেন ‘সিক-কিডস’ এর স্নায়বিক ও মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচির সহযোগী বিজ্ঞানী।

তিনি বলেন, ‘যখন আমাদের সমাজ আবারও মুক্ত হতে যাচ্ছে তখন শিশু ও তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে কীভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া যায় সে বিষয়ে আমাদের অর্থবহ আলোচনা করতে হবে।’

১,৪৯৪ জন অংশগ্রহণকারীর কাছ থেকে সংগৃহীত উপাত্ত অনুযায়ী, স্কুলগামী শিশুরা যত বেশি সময় অনলাইনে শিক্ষায় ব্যয় করে তত বেশি তাদের মধ্যে বিষন্নতা ও উদ্বেগের লক্ষণ দেখা যায়।

আক্রান্ত হয়।

করজ্যাক বলেন, এমনকি যখন সশরীরে উপস্থিত  হয়ে ক্লাস করে তখনও অনেকে একই রকম বোধ করে। কারণ ‘এটা স্কুলের মত মনে হয় না।’ এমনটা ঘটে মেলামেশায় বিধি-নিষেধ এবং পাঠ্যসূচিবহির্ভূত শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে।

তিনি বলেন, ‘বাচ্চারা তাদের স্কুলকে সশরীরে উপস্থিত কোন প্রতিষ্ঠানের (brick-and-mortar buildings) চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেয়। আমরা যদি শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি দেখতে চাই তাহলে আমাদের উচিৎ হবে স্কুলগুলো খোলা রাখা এবং যতটা সম্ভব স্বাভাবিকভাবে পরিচালনার চেষ্টা করা।’

‘সিক-কিডস’ হাসপাতাল পুরো মহামারির সময়কালজুড়েই অব্যাহতভাবে সুপারিশ করে আসছে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিত রেখে স্কুল চালানোর। কোভিড-১৯  শুরুর পর থেকে তারা শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট ভাগে ক্লাস নেয়া এবং অঞ্চলভিত্তিক স্কুল বন্ধ রাখার সুপারিশ করে আসছে।

আসন্ন শরতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে স্কুল চালানোর যে পরিকল্পনা অন্টারিও নিতে যাচ্ছে সেজন্যে গণহারে টিকাদান মুখ্য বিষয়। যদিও

এই পরিকল্পনার বিস্তারিত এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

প্রদেশের কর্তৃপক্ষ প্রতিটি শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের আগামী সেপ্টেম্বরের আগেই দুই ডোজ টিকা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। 

কিন্তু মিজ. করজ্যাক বলেন, এই কাজটি শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে ফিরিয়ে নেওয়ার মত এত সহজ নয়। তিনি বলেন, শিশুদের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই শিশুদের বাবা-মাকে সহায়তা দিতে হবে।

প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, মহামারির আগে যেসব পরিবার কষ্টেসৃষ্টে জীবনযাপন করছিলো তারা মহামারির অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়ায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে শিশু এবং তাদের দেখাশোনায় নিয়োজিতরাও একইভাবে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক লক্ষণাক্রান্ত হয়েছে।

ডালহৌসি ইউনিভার্সিটির ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির পিএইচডি শিক্ষার্থী লিডিয়া মুয়িঙ্গো বলেন, সিক-কিডস-এর সমীক্ষার প্রাথমিক ফলাফল তার ক্লিনিক্যাল কাজের ক্ষেত্রে দেখা পরিষেবার বাড়তি চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। মুয়িঙ্গো বলেন, কানাডার তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য সঙ্কট মহামারিরও আগে থেকে চলে আসছে, তাই এর সমাধানও নিছক ‘স্বাভাবিকতায় ফেরার’ মত সহজ হবে না।

তিনি বলেন, ‘এমনটা বলা হয়ে থাকে যে, শিশুরা সবই সয়ে নিতে পারে এবং তারা যে কোনও পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যেতে পারে। হ্যাঁ, এটা ঠিক, শিশুরা সয়ে নিতে পারে, কিন্তু তারা তো মানুষও।’

‘আমার মনে হয়, আমরা যখন মাস্ক খুলে ফেলবো কোভিডের প্রভাব সেই সময়ের চেয়েও দীর্ঘকাল ধরে টিকে থাকতে পারে… কারণ, একবার শৈশবে কারও মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা হলে পরিণত বয়সেও তার মধ্যে এই সমস্যা দেখা দেয়ার বিরাট ঝুঁকি থেকে যায়।’