অভিবাসীদের নিয়ে কানাডিয়ানদের উদ্বেগ রক্ষণশীলদের অপপ্রচারেরই ফল

মার্চ 3, 2019

জরীপ প্রতিষ্ঠান Ipsos -এর এক নতুন সমীক্ষায় দেখা গেছে, অভিবাসন নিয়ে কানাডীয়দের মধ্যে উদ্বেগ ২০১৭ সালে যে পর্যায়ে ছিলো ২০১৮ সালে তা আরও জোরালো হয়ে ওঠে। ইপসস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড্যারেল ব্রিকার এর মতে, “অভিবাসনের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে যে নেতিবাচক মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে তার কারণ সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনিয়মিতভাবে কানাডায় প্রবেশ করা আশ্রয়প্রার্থীদের বিপুল স্রোত। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে উদ্বাস্তুরা যে প্রক্রিয়ায় কানাডায় ঢুকছেন সেই প্রক্রিয়ার ব্যাপারে কানাডীয়রা অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন বলে মনে হয়।

উল্লে­খ্য যে, ২০১৭ সালে শুরু হবার পর থেকে ৩৬ হাজারেরও বেশি আশ্রয়প্রার্থী কানাডায় এসেছেন। কনজার্ভেটিভ পার্টি অব কানাডার নেতৃবৃন্দ এটিকে একটি ‘সঙ্কট’ হিসাবে অভিহিত করে জাস্টিন ট্রুডোর সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার এক গবেষণা পত্রে দেখা গেছে কানাডায় যারা ১৯৮০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে প্রবেশ করেছেন তাদের মধ্যে শতকরা ৯৩ ভাগেরই কানাডার প্রতি খুবই শক্তিশালী বা শক্তিশালী অনুভূতি রয়েছে। শুধু তাই নয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নে অভিবাসীদের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। অন্য এক তথ্যে জানা যায়, কানাডা বর্তমান বিশ্বে একটি অন্যতম শিক্ষিত দেশ। আর এর কৃতিত্ব প্রধানত অভিবাসীদের প্রাপ্য। অভিবাসীদের মধ্যে বেকারত্বের হারও অনেক কম এখন। গত ২০১৭ সালে এই হার সর্বনিন্মপর্যায়ে নেমে এসে দাড়িয়েছিল ৬.৪ শতাংশে। অন্যদিকে ২০১৮ সালে কানাডায় সার্বিক বেকারত্বের হার ছিল গড়ে ৫.৬% যা গত ৪৩ বছরের মধ্যে সর্বনিন্ম।

অভিবাসীরা কানাডার অর্থনীতি উন্নয়নে ভূমিকা রেখে আসছেন। ছবি : ন্যাশনাল পোস্ট

এখন ইপসস-এর জরীপে অভিবাসীদের নিয়ে কানাডিয়ানদের মধ্যে উদ্বেগের যে তথ্য উঠে এসেছে সেটা কতটুকু বাস্তবসম্মত তা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে সন্দেহ নেই। আমরা আরো দেখেছি কানাডায় অভিবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও সেটা কানাডার জন্য সার্বিক দিক দিয়ে মঙ্গলই বয়ে আনছে। ইতিপূর্বে Environics Institute Ges Canadian Race Relations Foundation এর এক যৌথ জরীপে দেখা গেছে কানাডায় অধিকাংশ নাগরিক মনে করেন এখানে অভিবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে না। জরীপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৯০% ই মনে করেন কানাডায় জন্ম নেয়া একজন ব্যক্তি যতটা ভাল নাগরিক হতে পারবেন, কানাডার বাইরে জন্ম নেয়া একজন ব্যক্তিও এই দেশে এসে ততটা ভাল নাগরিক হতে পারবেন।

ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর সিন রেহাগ বলেন, কানাডীয়দের মনে অভিবাসীদের সম্পর্কে যে ভীতি বিরাজ করছে তার পেছনে বিশ্বজুড়ে চরম ডানপন্থী উত্থানের সম্পর্ক থাকতে পারে।

তিনি আরও বলেন, কানাডায় কিছু দায়িত্বহীন রাজনীতিক নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্যে কানাডার সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট হওয়া বা কানাডার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে মিথ্যা ও উদ্বেগজনক প্রচারণা চালিয়ে অভিবাসী ও উদ্বাস্তু হিসাবে আবেদনকারীদের বিষয়টিকে দানবীয় রূপ দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে।

মূলত রক্ষণশীলদের অপপ্রচারের কারণেই আজকে কানাডায়ও অভিবাসী ও উদ্বাস্তু বিরোধী একটি মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে যা প্রফেসর সিন রেহাগের ভাষায়, “কানাডীয়রা শেষপর্যন্ত বুঝতে সক্ষম হবেন যে, আকাশ ভেঙ্গে পড়ছে না, তারা বুঝতে পারবেন যে, উদ্বাস্তু হিসাবে যতো লোক আসছে সেটা নিয়ন্ত্রণের অযোগ্য নয় এবং অভিবাসী ও উদ্বাস্তুরা কানাডার সমাজের জন্য বিরাট অবদান রেখে চলেছে।”

আমরাও মনে করি শত বাধা বিপত্তির মধ্যেও অভিবাসী ও উদ্বাস্তুরা কানাডার অর্থনীতি উন্নয়নে যে ভূমিকা রেখে আসছেন, শিক্ষায় কানাডার ভাবমূর্তি উন্নয়নে যে ভূমিকা রেখে আসছেন তা আজ দিনের আলোর মতই জাজ্বল্যমান। এই ধারা অব্যাহত থাকুক এটাই আমাদের কামনা।