করোনার প্রভাব : ১৯৯৮ সালের পর কানাডায় অভিবাসনের পরিমাণ সর্বনিম্নে পৌঁছেছে

২০২০ সালে কানাডা এক লাখ ৮৪ হাজার নতুন অভিবাসী গ্রহণ করেছে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডার নতুন সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশটি ২০২০ সালে এক লাখ ৮৪ হাজার নতুন পারমানেন্ট রেসিডেন্টকে গ্রহণ করেছে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে নতুনদের আসার হার কমে যাবার প্রেক্ষিতে এমনটি ঘটে।

১৯৯৮ সালের পর অভিবাসী আগমনের এটিই হচ্ছে নিম্মতম স্তর। ওই বছর কানাডায় এসেছিলো এক লাখ ৭৪হাজারের কিছু বেশি অভিবাসী। খবর পরপহবংি.পড়স এর। রিপোর্ট করেছেন করীম আল-আসাল।

২০২০ সালের মার্চে কানাডার অভিবাসন মন্ত্রী মার্কো মেনডিসিনো ঘোষণা করেন, কানাডা তিন লাখ ৪১ হাজার নতুন অভিবাসীকে বরণ করতে ইচ্ছুক, যেমনটা করেছিলো ২০১৯ সালে। কিন্তু কয়েকদিন পরেই প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ঘোষণা করেন, কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়া রোধের জন্য কানাডা ভ্রমণের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপে বাধ্য হচ্ছে।

কানাডার অভিবাসন, উদ্বাস্তু ও নাগরিকত্ব বিভাগের (আইআরসিসি) প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে অভিবাসনের হার ঠিক তখন থেকেই কমেছে যখন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করা হয়। ছবি : শংকর দে

কানাডার অভিবাসন, উদ্বাস্তু ও নাগরিকত্ব বিভাগের (আইআরসিসি) প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে অভিবাসনের হার ঠিক তখন থেকেই কমেছে যখন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করা হয়। আর তার পর থেকে এখনও অভিবাসীর স্রোত মহামারির আগের পর্যায়ে ফেরেনি। তারপরও কানাডা তার কোভিড-উত্তর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য উচ্চ হারে অভিবাসী গ্রহণের বিষয়ে তার অঙ্গীকারে অবিচল রয়েছে।

মহামারি শুরুর পরও আইআরসিসি এবং সারাদেশের প্রদেশ ও টেরিটোরিগুলো অভিবাসনের নতুন ও বিদ্যমান আবেদনগুলো অব্যাহতভাবে প্রক্রিয়াকরণ করে আসছে। যতগুলো সম্ভব আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করা হবে যাতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও অন্যান্য বিধিনিষেধ থাকা অবস্থায়ও যোগ্য প্রার্থীরা স্থায়ী বা অস্থায়ী আবাসিকের মর্যাদা পেতে পারে। কানাডা সরকারের অভিবাসীদের আবেদন প্রত্রিয়াকরণের কাজ অব্যাহত রাখার দ্বিতীয় কারণ হলো, মহামারির পর দেশটির অভিবাসন ব্যবস্থাকে যত দ্রুত সম্ভব সক্ষম করে তোলা।

২০২০ সালের অক্টোবরের শেষদিকে মেনডিসিনো কানাডার ইতিহাসের সবচেয়ে উচ্চাভিলাসী অভিবাসন লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেন। ২০২১-২০২৩ অভিবাসন স্তর পরিকল্পনার আওতায় কানাডা প্রতি বছর কমপক্ষে চার লাখ এক হাজার নতুন অভিবাসী গ্রহণ করার লক্ষ্য নিয়েছে।

সম্প্রতি এক টিভি সাক্ষাৎকারে মেনডিসিনো বলেছেন, তিনি আশাবাদী যে, এমনকি চলমান মহামারিকালেও এই লক্ষ্য বাস্তবসম্মত। এর কারণ হলো, আইআরসিসি এক্সপ্রেস এন্ট্রি সিস্টেমের আওতায় এই মুহূর্তে কানাডায় বাসবাসরত ব্যক্তিদের কাছ থেকে অভিবাসী হবার আবেদন আহবান করেছে। প্রদেশ ও টেরিটোরিগুলো এবং কুইবেকও প্রভিনশিয়াল নমিনি প্রোগ্রামের অধীনে একইরকম উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।

এছাড়াও, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় নির্দিষ্ট কিছু ছাড় দেয়া হয়েছে, যেমন কানাডার নাগরিক বা পারমানেন্ট রেসিডেন্টদের ঘণিষ্ঠ স্বজনদের মহামারিকালেও কানাডায় অভিবাসী হবার সুযোগ দেয়া হচ্ছে।

ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য রেখে আইআরসিসি মহামারিকালের জন্য যেমনটা নির্ধারণ করেছিলো কানাডার অভিবাসন স্তর ২০২১ সালে দুই লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। গত বছর অভিবাসন স্তর দুই লাখের চেয়ে কম হবার অন্যতম কারণ ২০২০ সালের মার্চ ও মে মাসের মধ্যে এখানে স্থায়ী আবাসিকের আগমনে ধস নামে। এটা ঘটেছিলো কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তারাও মহামারিজনিত লকডাউন ও অন্যান্য ব্যবস্থার কারণে প্রভাবিত হন। মেনডিসিনো তার সাম্প্রতিক টিভি সাক্ষাৎকারে যেমনটা আভাস দিয়েছেন, আইআরসিসি তখন দূরবর্তী অবস্থান থেকে কাজ চালিয়ে নেওয়া এবং আবেদন প্রক্রিয়াকরণের জন্য তার কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ করে। এসব ব্যবস্থা অভিবাসন স্তর আগের পর্যায়ে নেয়ার ব্যাপারে সংস্থার সক্ষমতা অব্যাহত রাখতে সহায়ক হয়। কানাডার অভিবাসন স্তর সম্পর্কিত পরিকল্পনায় মহামারির বিরূপ প্রতিক্রিয়া অব্যাহত থাকবে তবে বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মহামারি রোধ করা সম্ভব হলে আমাদের অভিবাসন স্তর বছরে চার লাখ এক হাজারের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করতে পারি। এই সময়ের মধ্যে, আইআরসিসি এবং প্রদেশ ও টেরিটোরিগুলি অভিবাসনের আবেদন অনুমোদন করা অব্যাহত রাখবে। আইআরসিসি গতকাল এক্সপ্রেস এন্ট্রি পদ্ধতিতে অভিবাসন অনুমোদনের একটি ড্র করেছে। চলতি সপ্তাহেই আরেকটি ড্র হবে বলে আশা করা হচ্ছে।