মহামারিকালে বর্ণবাদী ঘটনা বেড়েছে এমনটা বলার সম্ভাবনা বেশি এশীয়-কানাডীয়দের

দৃশ্যমান সংখ্যালঘুরা কানাডার জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশ হলেও অন্যদের চেয়ে তারা বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে

আগস্ট 7, 2020

৮ জুলাই ২০২০ : টরন্টো — কোভিড-১৯ মহামারির সময় নিজ নিজ এলাকায় বর্ণবাদী বা জাতিগত পরিচয়ের কারণে হয়রানি অথবা সহিংসতার শিকার হওয়ার বিষয়ে রিপোর্ট করার সম্ভাবনা বেশি এশীয় অঞ্চল থেকে আসা এশীয়-কানাডীয়দের। নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য জানা যাচ্ছে।

এছাড়া, পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নিজেদের এলাকায় নিয়মিতভাবে বর্ণবাদী হামলা বা হয়রানির ঘটনা ঘটে কিংবা বর্তমান মহামারি শুরুর পর থেকে তা বেড়েছে শ্বেতাঙ্গ কানাডীয়রাও অন্তত এটুকু বিশ্বাস করে বলে মনে হয়। খবর সিটিভি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন রাইয়ান ফ্লানাগ্যান।

কানাডীয়রা কীভাবে এই মহামারির মোকাবিলা করছে সেবিষয়ে জণগণের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য স্ট্যাটক্যান-এর উদ্যোগের অংশ হিসবে সম্প্রতি এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। যদিও স্ট্যাটক্যান এই উদ্যোগে বিপুল সংখ্যক অংশগ্রহণকারীর কাছে পৌঁছাতে পেরেছে এবং ৪৩ হাজার মানুষ এই বিশেষ গবেষণায় যুক্ত হয়েছেন তবুও এই জরিপ পুরো জনগোষ্ঠীর অবস্থার প্রতিফলন ঘটায় না অর্থাৎ এর ফলাফল দিয়ে সার্বিকভাবে সব কানাডীয়র ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্তে আসা যাবে না।

কোভিড-১৯ মহামারির সময় নিজ নিজ এলাকায় বর্ণবাদী বা জাতিগত পরিচয়ের কারণে হয়রানি অথবা সহিংসতার শিকার হওয়ার বিষয়ে রিপোর্ট করার সম্ভাবনা বেশি এশীয় অঞ্চল থেকে আসা কানাডীয়দের। ছবি: বিবিসি

সংখ্যার ভেতরের অবস্থা

সমীক্ষায় অংশ নেয়া লোকেদের মধ্যে যারা চীনা তাদের ৩০ শতাংশেরও বেশি সংখ্যক বলেছেন, মহামারি শুরুর পর তাদের এলাকায় জাতি, গোষ্ঠী বা বর্ণের ভিত্তিতে হয়রানি বা হামলার ঘটনা বেড়েছে। এরপর সর্বোচ্চ সংখ্যক যারা একই ধরণের কথা বলেছেন তারা হলেন কোরীয়, ২৭ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে বিভিন্ন অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর সদস্য ২২ শতাংশ এবং এরপর দক্ষিণ এশীয় ১৯ শতাংশ।

সবচেয়ে কম যারা এধরণের কথা বলেছেন তাদের মধ্যে আছেন যারা নিজেদেরকে অশ্বেতাঙ্গ বা দৃশ্যমান সংখ্যালঘুর মর্যাদায় দেখেন না এবং যারা দৃশ্যমান সংখ্যালঘু হিসাবে বিবেচিত হন না। এই উভয় গ্রুপের লোকেদের হার হলো আনুমানিক ৬ শতাংশ।

স্ট্যাটক্যান জানায়, অশ্বেতাঙ্গ বা দৃশ্যমান সংখ্যালঘু গ্রুপের অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা যারা নিজেদেরকে দৃশ্যমান সংখ্যালঘু মনে করেন না তাদের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি। তারা মনে করে এই মহামারি শুরু হবার পর থেকে বৈষম্যমূলক হামলা বেড়ে গেছে।

এসব ফলাফল হলো সর্বশেষ প্রমাণ যে মহামারিকালে কানাডায় এশীয়রা ক্রমবর্ধমান হারে বর্ণবাদী হামলা এবং গালাগালির শিকার হচ্ছে।

মার্চের মাঝামাঝি সময়ে যখন মহামারি কেবল ছড়িয়ে পড়ছিলো সেই সময় মন্ট্রিলে দক্ষিণ কোরীয় কনস্যুলেট ওই শহরের কোরীয় বংশোদ্ভূতদেরকে সম্ভাব্য বর্ণবাদী হামলার ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়। তখন থেকেই মন্ট্রিলের এশীয়দের বিরুদ্ধে সংঘটিত বেশ কিছু বর্ণবাদী ঘটনা প্রকাশ পায়।

মে মাসে ভ্যাঙ্কুভার পুলিশ জানায়, তারা এশীয়দের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য ২৯টি হেট ক্রাইমের তদন্ত করছে। আগের বছরের একই সময়ে এধরণের অপরাধের ঘটনা ছিলো মাত্র চারটি। প্রায় একই সময়ে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় বসবাসরত পূর্ব এশীয় বা দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত নাগরিকদের ২৪ শতাংশই বলেছেন যে, মহামারি শুরুর পর তারা গালমন্দ ও অপমানের মুখোমুখি হয়েছেন।

চলতি বছর কানাডায় জাতিগত বিদ্বেষপ্রসূত হামলার ঘটনার কোনও সমন্বিত পরিসংখ্যান এখনও নেই, তবে এশীয়দের বিরুদ্ধে হয়রানির ঘটনার খোঁজখবর রাখার একটি কমিউনিটি-ভিত্তিক উদ্যোগ প্রজেক্ট ১৯০৭ গত মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এধরনের ১২০টি ঘটনার রিপোর্ট পেয়েছে।

এসব রিপোর্টের পাঁচভাগের চারভাগই (৮০ শতাংশ) ছিল মৌখিক অর্থাৎ গালাগালি, দোষারোপ করা ইত্যাদি। বাকি ২০ শতাংশের ক্ষেত্রে শারীরিক সম্পৃক্ততা ছিল যেমন, থুতু ছিটানো, কাউকে লক্ষ্য করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাশি দেয়া এমনকি সরাসরি সহিংসতা ঘটানো। সবগুলো ঘটনাই ঘটেছে প্রকাশ্যে জনসমক্ষে। অর্ধেকের বেশি ঘটনা ঘটে কোনও সড়কে অথবা ফুটপাতে।

নিরাপত্তাহীনতার বোধ

স্ট্যাটক্যান সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চেয়েছে যে, নিজেদের এলাকায় এবং সাধারণভাবে সবখানে বর্ণবাদী ও জাতিগত কারণে হয়রানি ও হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাদের ধারণা কি?

নিজেদের এলাকায় প্রায়ই বা কখনও কখনও এধরণের বৈষম্যমূলক ঘটনা ঘটে বলে বিশ্বাস করেন এমন জবাব সবচেয়ে বেশি দিয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ ও কোরীয় অংশগ্রহণকারীরা। উভয় গ্রুপেরই এমন জবাব দিয়েছেন ২৬.৫ শতাংশ মানুষ। ২৫ শতাংশের বেশি লোক একই ধরণের জবাব দিয়ে পরের অবস্থানে চীনারা। ফিলিপিনোদের মধ্যে এমন জবাব দিয়েছে ২২ শতাংশ লোক।

নিজেদের এলাকায় এধরণের ঘটনা ঘটে বলে সবচেয়ে কম বিশ্বাস করে লাতিন আমেরিকান এবং দৃশ্যমান সংখ্যালঘু হিসাবে চিহ্ণিত নয় এমন লোকেরা। এই উভয় শ্রেণির মাত্র ১০.৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছে, এমন ঘটনা কখনও কখনও বা মাঝেমধ্যে ঘটে।

সার্বিকভাবে দৃশ্যমান সংখ্যালঘুদের মধ্যে ২১ শতাংশ বলেছে তারা বিশ্বাস করে যে, তাদের এলাকায় বৈষম্যমূলক হয়রানি বা হামলার ঘটনা মাঝেমধ্যে বা প্রায়শ ঘটে। দৃশ্যমান সংখ্যালঘু নয় এমন লোকেদের মধ্যে যতজন অংশগ্রহণকারী একইরকম জবাব দিয়েছে তাদের চেয়ে ওই হার দ্বিগুণ।

দৃশ্যমান সংখ্যালঘুদের মধ্যে তাদের সংখ্যাও কিছুটা বেশি যারা মনে করে যে, মহামারীকালে তাদের এলাকায় অপরাধ বেড়েছে। জাপানি ও চীনারা এধরনের ধারণা পোষণ করে বেশি।

পরিসংখ্যানের সঙ্গে প্রকাশিত এক মন্তব্যে স্ট্যাটক্যান বলেছে, “কানাডার জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশ হলেও দৃশ্যমান সংখ্যালঘুরা অন্যদের চেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।”

মন্তব্যে বলা হয়, “নিরাপত্তাহীনতার বোধ সামাজিক সংশ্লিষ্টতা কমিয়ে দিয়ে এবং তার ফলে কল্যাণ এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ব্যক্তিগত ও সামাজিক উভয় ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে।”