প্রতি তিনজনে একজন কানাডিয়ান নাগরিক রাজনীতিকদের ধর্মীয় প্রতীক পরা নিষিদ্ধ করার পক্ষে

জুলাই ১৭, ২০১৯

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : অটোয়া – কানাডার বেশিরভাগ মানুষ স্বাধীনতা ও অধিকারের সনদের প্রতি দৃঢ়ভাবে আস্থাশীল এবং বৈচিত্রের ধারণার জোরালো সমর্থক হলেও নতুন এক জরীপে দেখা গেছে যে, এক-তৃতীয়াংশ কানাডীয় তাদের নির্বাচিত রাজনীতিকদের ধর্মীয় প্রতীক পরিধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা চায়।

জরিপে অংশ নেওয়া কুইবেকবাসীর বেশিরভাগই একমত যে, কেন্দ্রীয়, প্রাদেশিক ও স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতিকদের দায়িত্বে থাকার সময় হিজাব, ক্রুসিফিক্স বা পাগড়ির মত ধর্মীয় প্রতীক পরতে দেওয়া উচিৎ নয়। খবর কানাডিয়ান প্রেস এর।

সারাদেশের ৪৯ শতাংশ মানুষ অবশ্য মত দিয়েছেন যে, তারা এধরণের নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করবেন না। তবে ৩৭ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তারা সমর্থন করবেন।

লেগার মার্কেটিংয়ের এই জরিপ চালানো হয়, কুইবেকে একটি প্রস্তাবিত ধর্মনিরপেক্ষ আইনের ব্যাপারে জনগণের অনুভূতি জানার জন্য। প্রস্তাবিত আইনে সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় ধর্মীয় প্রতীক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

এই আইন অবশ্য নির্বাচিত কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। তবে তাদেরও এই আইনের আওতায় আনা উচিৎ কিনা এমন একটি প্রশ্ন জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ ধর্ম ও ধর্মীয় প্রতীকের ব্যাপারে কী ধরণের মনোভাব পোষণ করে সেটা জানার জন্যই এটা করা হয়।

এক-তৃতীয়াংশ কানাডীয় তাদের নির্বাচিত রাজনীতিকদের ধর্মীয় প্রতীক পরিধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা চায়। ছবিতে ধর্মীয় প্রতীক পাগড়ী পরিহিত কানাডার এনডিপি নেতা জাগমিত সিং দেখা যাচ্ছে। ছবি : অনলাইন

কানাডীয়দের মধ্যে ‘বিস্ময়কর বৈপরীত্য’

জরিপের আয়োজক কানাডিয়ান স্টাডিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি  জ্যাক জেডওয়াব বলেন, জরিপে যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে তা গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরকে যারা হুমকি বলে মনে করেন প্রধানত তারাই এ ধরণের নিষেধাজ্ঞার পক্ষে। তারা ইসলাম ও  মুসলিমদের সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন এবং হিজাবের ব্যাপারে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখান।

জরিপে অংশ নেওয়া যেসব মানুষ বলেছেন যে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সঙ্গে তাদের ওঠাবসা আছে এবং তাদের ব্যাপারে সচ্ছন্দ বোধ করেন তাদের ধর্মীয় প্রতীক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবের পক্ষে থাকার সম্ভাবনা কম।

এদিকে, ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বলেছেন যে, তারা স্বাধীনতা ও অধিকার সম্পর্কিত সনদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন এবং বহুসংস্কৃতিবাদও সমর্থন করেন।

জরিপের ফলাফলকে জেডওয়াব বলছেন, কানাডীয়দের মধ্যকার ‘বিস্ময়কর বৈপরীত্য’।

তার ভাষায়, “(মানুষ) বৈচিত্রের ব্যাপারে ব্যাপক প্রশংসাসূচক মনোভাব প্রকাশ করেছে এবং বলেছে যে, আমাদের সমাজ হচ্ছে সহিষ্ণু এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রথা ও ঐতিহ্যের ব্যাপারে গ্রহণযোগ্যতা আছে, অথচ একই সঙ্গে তারা বলছে… আমরা একটা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় রাজনীতিকদের ধর্মীয় প্রতীক বা নিদর্শন পরিধানের ধারণা পছন্দ করি না।”

জরিপের ফলাফল থেকে বোঝা যাচ্ছে, বহু আসন বিশিষ্ট কুইবেক প্রদেশ যখন নিজস্ব ধর্মনিরপেক্ষ আইন করতে যাচ্ছে এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলি আসন্ন শরতের নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত তখন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে কুইবেকে ধর্মীয় প্রতীক সম্পর্কিত বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে এগুতে হবে।

জেডওয়াব বলেন, নিষ্ঠাবান শিখ এনডিপি নেতা জাগমিত সিং সব সময় উজ্জ্বল রঙের পাগড়ি পরেন এবং সেজন্যে কুইবেকে তাকে রীতিমত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। তিনি বলেন, “তিনি সম্ভবত এমন কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন যেটা লোকেরা প্রকাশ্যে বলে না কিন্তু একান্তে লালন করে।”

“এধরণের অনুভূতি মানুষের মধ্যে আছে… এটা কি তার নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে? বলা কঠিন। এটা নতুন এক আচ্ছাদনের সৃষ্টি করেছে এবং তা সত্য।”

উল্লেখ্য, নাগরিকত্ব প্রদানের অনুষ্ঠানে নেকাব পরা নিষিদ্ধ করে সাবেক রক্ষণশীল সরকারের আদেশ নাকচ করে নি¤œ আদালতের দেওয়া একটি রায় কেন্দ্রীয় আদালত বহাল রাখার পর বিগত সাধারণ নির্বাচনের প্রচারণায় ধর্মীয় প্রতীকের বিষয়টি প্রাধান্য পায়।

এনডিপির সাবেক নেতা টম মুলকেয়ার কনজারভেটিভ সরকারের ওই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নেন যার খেসারত তাকে নির্বাচনে দিতে হয়েছে বলে পরে জানান তিনি। কারণ কুইবেকে নিষেধাজ্ঞার পক্ষে জোর সমর্থন ছিলো। আর সেখানেই এনডিপির অবস্থান সবচেয়ে শক্তিশালী।

জেডওয়াব বলেন, নেকাব নিয়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে এবং কুইবেকবাসীর মনে যে উদ্বেগ ছিলো তার সিংহভাগ পীড়া মুলকেয়ার বহন করার কারণেই প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ২০১৫ সালে সাফল্যের সঙ্গে নির্বাচনী বৈতরণী তীরে নিয়ে আসতে পেরেছেন।

ট্রুডোর জন্য আরও সঙ্কট

এবার ট্রুডোর জন্য নির্বাচনী সাফল্য অর্জন আরও বেশি সঙ্কটজনক হতে পারে কারণ তিনি কুইবেকের ধর্মনিরপেক্ষ আইনের বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন এবং অভিবাসী ও সংখ্যালঘুদের স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা গ্রহণ করেছেন।

জেডওয়াব বলেন,“তার জন্য এটা খুবই চ্যালেঞ্জিং হতে যাচ্ছে কারণ কুইবেকে তার ভিত্তি খুব জোরদার নয়। এটা চ্যালেঞ্জিং হবে কারণ সেখানে এ ধরণের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে যথেষ্ট জনসমর্থন আছে।”

জেডওয়াব আরও বলেন, কনজারভেটিভ দলের নেতা এন্ড্রু শিয়ারসকেও ধর্মীয় প্রতীক ও অভিবাসন বিষয়ে ভারসাম্যপূর্ণ পথে চলতে হবে।

এই জরিপটি চালানো হয়েছে গত ৩ মে থেকে ৭ মে’র মধ্যে এবং এতে জনমত নিয়ে কাজ করা একটি অনলাইন প্যানেল থেকে বাছাই করা ২,২১৫জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির মতামত গ্রহণ করা হয়েছে।