কানাডার স্কুলগুলোতে বুলিইং সমস্যা
আপনার সন্তানকে কি ভাবে রক্ষা করবেন?
জানুয়ারী ১২, ২০১৬
প্রবাসী কন্ঠ : কানাডার স্কুলগুলোতে বুলিইং একটি বড় ধরনের সমস্যা। প্রতি তিনজন শিশু-কিশোরের মধ্যে একজন বুলিইং এর শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কানাডার বিভিন্ন স্কুলে বুলিইং এর শিকার হচ্ছে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত অনেক শিশু-কিশোরও। বুলিইং এর শিকার হয়ে অনেক শিশু-কিশোর শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগছে। আত্মহত্যার চেষ্টাও করে কেউ কেউ। ঘুম হারাম হয়ে যায় অনেক শিশু-কিশোরের বাবা-মায়ের।
স্কুল বা খেলার মাঠে বিনা প্ররোচনায় এক বা একাধিক শিশু-কিশোর কর্তৃক অন্য শিশু বা কিশোরের উপর শারীরিক বা মানসিক আক্রমন চালানোকে বুলিইং হিসাবে বিবেচনা করা হয়। একসময় শুধু শারীরিক আক্রমনকেই বুলিইং হিসাবে বিবেচনা করা হতো। এর মধ্যে ছিল আঘাত, পদাঘাত ও ঘুসি মারা ইত্যাদি। কিন্তু এখন মানসিক আক্রমন বা নির্যাতনকেও বুলিইং এর অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে কারণ এগুলোর পরিনতিও শারীরিক আক্রমনের চেয়ে কম নয়।
তবে স্কুল বা খেলার মাঠে যে সমস্ত শিশু-কিশোর বুলিইং করে তারা সবাই খারাপ ছেলে-মেয়ে তা বলা যায় না। দেখা গেছে যারা বুলিইং করে তাদের বেশীরভাগই ব্রোকেন ফ্যামিলি থেকে আসা। ঘরে তারা যে তিক্ত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে তার প্রতিফলনই ঘটে তাদের আচার-আচরনে। সমাজে বাস করতে হলে যে সামাজিক আচার-আচরণ শিখতে হয় সেটি থেকে তারা বঞ্চিত থাকে বা সেই কুশলতার শিক্ষা তারা বাবা-মায়ের কাছ থেকে পায় না পারিবারিক সমস্যার কারণে। এগুলো তাদের মধ্যে একসময় তৈরী করে হতাশা, বদমেজাজ, ধ্বংসাত্মক চিন্তা-ভাবনাসহ আরো নানান জটিলতা। আর এগুলোরই প্রতিফলন ঘটে স্কুল বা খেলার মাঠে অন্য শিশুর উপর বিনা প্ররোচনায় হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে।
তবে হামলা পরিচালনাকারী ঐ শিশুদের পক্ষে এটি ওজর হিসাবে দাড় করানোর কোন অবকাশ নেই। তাদের পারিবারিক সমস্যা রয়েছে এ জন্য এ বুলিইং এর দায়িত্ব বা দোষ থেকে তাদেরকে অব্যাহতিও দেয়া যায় না। তাদের দুর্দশা বা অসন্তোষের কারণে অন্যেরা ভুক্তভুগি হবে তা কখনোই মেনে নেয়া যায় না।
সাম্প্রতিক কালে সাইবার বুলিইং নামে আরেক আপদ এসে হাজির হয়েছে। সাইবার বুলিইং এর শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে এমন ঘটনার নজীরও ইতিমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। সাইবার বুলিইং পরিচালিত হয় অনলাইনের মাধ্যমে।
স্মরণ করা যেতে পারে যে রিটেয়া পারসনস্ নামে এক কানাডিয়ান টিনএজ ছাত্রী সাইবার বুলিইং এর শিকার হয়ে গত ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা এটি। সাইবার বুলিইং এর শিকার হওয়ার আগে সেই মেয়েটি তার এক বন্ধু ও সেই বন্ধুর আরো তিন সহযোগী কর্তৃক গণধর্ষণের শিকার হয়। পরে সেই ধর্ষণের চিত্র অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।
উল্লেখ্য যে, কানাডায় ইমিগ্রেন্ট পরিবারের শিশু-কিশোররা যখন স্কুল বা খেলার মাঠে বুলিইং এর শিকার হয় তখন তাদের বাবা-মায়ের বাড়তি কিছু ঝামেলা দেখা দেয়। এর মধ্যে আছে ভাষাগত সমস্যা। আরো আছে সময়ের সমস্যা। যে সমস্ত বাবা-মায়ের ভাষা সমস্যা রয়েছে তারা স্কুলে গিয়ে শিক্ষক বা কাউন্সিলরকে ঠিকমত বুঝাতে পারেন না সমস্যার মাত্রাটা কতটুকু প্রভাবিত করছে তাদের শিশুদেরকে। সমস্যাটি যদি মানসিক হয় তবে সেটি বুঝিয়ে বলার বেলায় আরো বেশী জটিলতা তৈরী হয়। আর সময়ের সমস্যাটি হলো, বাবা-মা দুজনেই যদি চাকরী করেন তবে সময় করে স্কুলে যাওয়াটা কঠিন হয়ে উঠে নালিশ করার জন্য। এদিকে তাদের শিশুটি হয়তো প্রতিনিয়তই বুলিইং এর শিকার হয়ে যাচ্ছে স্কুলে।
অনেক শিশু আবার বুলিইং এর শিকার হলেও বাবা-মায়ের কাছে তা গোপন করে যায়। এমনকি স্কুলের শিক্ষকদের কাছেও তারা নালিশ করতে ভয় পায়। তাদের ভয় – নালিশ করার পর যদি বুলিইং এর মাত্রা আরো বেড়ে যায়? কোন কোন শিশু আছে যারা বুলিইং এর শিকার হওয়াটাকে লজ্জাজনক বলে মনে করে এবং এই লজ্জা তারা প্রকাশ করতে চায় না।
কানাডায় ইমিগ্রেন্ট পরিবারের শিশু-কিশোরদের বেলায় আরো কিছু বাড়তি সমস্যা দেখা দেয়। আনাত্মীয় পরিবেশে বড় হওয়ার কারণে অনেক শিশু-কিশোরের মনের মধ্যে নিরাপত্তার অভাব বিরাজ করে। অধিকাংশ পরিবারের বাবা-মা উভয়েই পরিবারের ভরণ-পোষন চালাতে গিয়ে বাড়ির বাইরে ব্যস্ত থাকেন চাকরী বা ব্যবসা নিয়ে। শিশুরা সবসময় তাদের কাছে পায় না। এটিও নিজেকে নিরাপত্তাহীন বা অরক্ষিত ভাবার পিছনে একটি কারণ হিসাবে কাজ করে। ফলে স্কুল বা খেলার মাঠে বুলিইং এর শিকার হলে এরা আরো বেশী করে মৃয়মান হয়ে পড়ে যা একসময় মানসিক জটিলতা বা ব্যাধি তৈরী করার পিছনে প্রভাব বিস্তার করে। আর এর প্রভাব কোন কোন শিশু-কিশোরের বেলায় অনেকদূর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। দেখা গেছে, পরবর্তী কর্ম জীবনেও এর প্রভাব থেকে যায়। হতাশা, উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা এবং নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার মত ঘটনা ঘটতে পারে। বছর শেষে পরীক্ষার ফলাফলও খারাপ হতে পারে।
কানাডায় ইমিগ্রেন্ট পরিবারের শিশু-কিশোররা স্কুলে কি পরিমান বুলিইং এর শিকার হয় সে ব্যাপারে আলাদা কোন তথ্য পাওয়া দুস্কর। পার্শ্ববর্তী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এই ব্যাপারে আলাদা কোন তথ্য পাওয়া যায় না। কারণ, এ বিষয়ে এখনো তেমন কোন জরীপ চালানো হয়নি। কানাডা এবং আমেরিকায় গত কয়েক দশকে ইমিগ্রেন্ট পরিবারের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে স্কুলগুলোতেও বৃদ্ধি পেয়েছে ইমিগ্রেন্ট স্টুডেন্ট। আর বুলিইং এর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে সকল শিশু-কিশোর শারীরিকভাবে একটু দুর্বল বা যারা সংখ্যালঘু বা যাদের গাত্রবর্ণ ভিন্ন, যাদের ধর্ম ভিন্ন তারাই বুলিইং এর শিকার হয় বেশী। সে হিসাবে ইমিগ্রেন্ট শিশু-কিশোরদের বুলিইং এর শিকার হওয়ার কথা বেশী।
আমেরিকান সাইকোলোজিকাল এসোশিয়েশন এর ওয়েবসাইট থেকে স্বল্পমাত্রায় যে তথ্য পাওয়া যায় তাতে দেখা গেছে, এশিয়ান-আমেরিকান স্টুডেন্টরা অন্যান্য এথনিকগ্রুপের চেয়ে অনেক বেশী মাত্রায় বুলিইং এর শিকার হয়। শতকরা ৫৪ জন এশিয়ান-আমেরিকান স্টুডেন্ট বলেছে তারা ক্লাশরূমে বুলিইং এর শিকার হয়েছে। সাইবার বুলিইং এর ক্ষেত্রেও এশিয়ান-আমেরিকান স্টুডেন্টরা বেশী মাত্রায় ভুক্তভুগি। শতকরা ৬২ ভাগ এশিয়ান-আমেরিকান স্টুডেন্ট বলেছে তারা সাইবার বুলিইং এর শিকার হয়েছে।
উপরের চিত্রটি কানাডার ক্ষেত্রে খুব একটা ভিন্ন হওয়ার কথা নয়। উল্লেখ্য যে, গত নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহটি ছিল “এন্টি বুলিইং এওয়ারনেস উইক”। ঐ সময় ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায় কানাডায় বুলিইং রেট অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশের তুলনায় অনেক খারাপ অবস্থায় রয়েছে। ৩৫ দেশের মধ্যে কানাডার অবস্থান ২৬ তম।
হাফিংটন পোস্টের এক রিপোর্টে বলা হয়, “দুঃখজন হলেও সত্যি যে গত কয়েক বছর ধরেই বিরাজ করছে এই অবস্থা যদিও বিভিন্ন মহল থেকে ক্রমাগত দাবী উঠেছে এ পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী। ”
বুলিইং সম্পর্কে এখানে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো :-
– বুলিইং সামাজিক, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। যে সকল শিশু-কিশোর বুলিইং এর শিকার হয় তারা মাথা ব্যাথ্যা, পেটে ব্যাথা, ডিপ্রেশন, এংজাইটি ইত্যাদিতে ভুগতে পারে। বুলিইং এর কারণে সৃষ্ট মানসিক সমস্যা ছাত্রজীবনের পরেও অব্যাহত থাকতে পারে।
– যারা বুলিইং করে এবং যারা বুলিইং এর শিকার হয় তারা উভয়ই অধিকতর মাত্রায় আত্মহত্যার ঝুঁকিতে থাকে।
– যারা বুলিইং করে এবং যারা বুলিইং এর শিকার হয় তাদের উভয়ের ক্ষেত্রেই স্কুলে উপস্থিতির হার কমে যেতে পারে, লেখাপড়ায় মনোযোগ কমে যেতে পারে এবং বছর শেষে পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হতে পারে।
– যারা বুলিইং করে তাদের ক্ষেত্রে ড্রাগ ও এ্যালকোহল আসক্ত হয়ে উঠার ঝুঁকি বেশী। নানান অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও এদের ক্ষেত্রে বেশী। এক জরীপ তথ্যে দেখা যায় যারা স্কুল জীবনে বুলিইং করে বেড়ায় তারা ২৪ বছর বয়সের মধ্যেই কোন না কোন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জাড়িয়ে পড়ে।
– বাধাপ্রাপ্ত না হলে এই শিশু বা কিশোর যখন যৌবনপ্রাপ্ত হবে বা তারও পরে কর্মজীবন ও সংসার জীবনে প্রবেশ করবে তখনো তার এই বুলিইং করার অভ্যাস থেকে যায়। নতুন নতুন কৌশলে তখন তারা তাদের বুলিইং চালিয়েই যেতে থাকে। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, প্রতিবেশীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ডেটিং ভায়োলেন্স, সেক্সচুয়াল হ্যারেসমেন্ট, ম্যারিটাল এবিউজ, চাইল্ড এবিউজ, এল্ডার এবিউজ এই সকল অপকর্মই তারা করে যেতে থাকে জীবনভর।
বুলিইং একটি মানবাধিকার ইস্যু। যারা বুলিইং এর শিকার হয় তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। জাতি সংঘের শিশু অধিকার সনদে কানাডা সাক্ষরকারী দেশগুলোর একটি। সুতরাং বুলিইং এর কারণে কোন শিশুর মানবাধিকার যাতে লঙ্ঘিত না হয় সেটি দেখার দায়িত্ব রয়েছে সরকারের।
সূত্র : www.prevnet.ca/bullying.
কানাডায় বুলিইং সম্পর্কে কিছু পরিসংখ্যান : –
– প্রতি ৭ জন শিশুর মধ্যে ১জন শিশু (যাদের বয়স ১১ থেকে ১৬) বুলিইং এর শিকার হয়।
– ৪ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে শতকরা ২৫ ভাগই বুলিইং এর শিকার হয়।
– খেলার মাঠে প্রতি ৭ মিনিটে একটি বুলিইং এর ঘটনা ঘটছে এবং ক্লাশ রুমে প্রতি ২৫ মিনিটে একটি বুলিইং এর ঘটনা ঘটছে।
– বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ১০ সেকেন্ডের মাথায় বুলিইং থেমে যায় যখন অন্য শিশুরা হস্তক্ষেপ করে বা বুলিইংকে তারা সমর্থন না করে।
– শিশুকালে যারা বুলিইং এর শিকার হয় তারা বয়সকালে ডিপ্রেশনে ভুগতে পারে।
– হাইস্কুলের ১০ থেকে ১৫ পার্সেন্ট স্টুডেন্ট বুলিইং এর শিকার হয়।
– ১১ পার্সেন্ট সেকেন্ডারী স্কুলের স্টুডেন্ট বছরে অন্তত একবার অন্য স্টুডেন্টদেরকে বুলিইং এর শিকার বানায়।
সূত্র : Craig &. Pepler.
সাইবার বুলিইং বিষয়ে পরিসংখ্যান:-
– ৯০% বাবা-মা সাইবার বুলিইং এর বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত। ৭৩% বাবা-মা বিষয়টি নিয়ে খুব অথবা খানিকটা হলেও চিন্তিত।
– প্রতি ৫ জন বাবা-মা’র মধ্যে ২ জন জানান তাদের সন্তানেরা সাইবার বুলিইং এর ঘটনার সঙ্গে জড়িত। প্রতি ৪ জন স্টুডেন্টের মধ্যে ১জন সাইবার বুলিইং এর শিকার।
– ৭৩% স্টুডেন্ট সাইবার বুলিইং এর ব্যাপারে অবহিত এবং ৭৬% স্টুডেন্ট মনে করে সাইবার বুলিইং তাদের স্কুলে খুব অথবা কিছুটা হলেও গুরুতর সমস্যা।
– সাইবার বুলিইং এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী মাত্রায় যেটি ঘটে সেটি হলো, কারো ব্যক্তিগত ইমেইল বা টেক্সট্ ম্যাসেস অন্যকে ফরোয়ার্ড করে দেয়া বা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া।
– ৩০% মেয়ে জানায় তারা সাইবার বুলিইং এর শিকার। অন্যদিকে ২৬% ছেলে জানায় তারা সাইবার বুলিইং এর শিকার।
– প্রতি ১০ জন স্যোশাল নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীর মধ্যে ৪ জন সাইবার বুলিইং এর শিকার (৩৯%)।
সূত্র : www.stopabully.ca/bullying.
.
শিশুরা বুলিইং এর শিকার হচ্ছে কি না সে বিষয়ে বিশেষ নজর রাখার দায়িত্ব রয়েছে বাবা-মা’র। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, শিশুরা অনেক সময় লজ্জায় বা আরো বুলিইং এর শিকার হতে পারে এই ভয়ে বিষয়টি বাবা-মা অথবা শিক্ষকের কাছে প্রকাশ করে না। তাই নিচের বিষয়গুলোর উপর বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে : –
১. তারা কি স্কুলে যেতে অনিহা প্রকাশ করছে?
২. পেটে ব্যাথা করে এরকম অভিযোগ করছে?
৩. শরীরের কোন স্থানে আঘাতের চিহ্ন বা চোখের নিচে কাল দাগ অথবা কাপড়ের কোন অংশ ছিন্ন থাকলে সে সম্পর্কে অদ্ভুত বা আজব ব্যাখ্যা দিচ্ছে?
৪. তাদের ব্যক্তিগত কোন জিনিষ খোয়া গেছে কিনা?
৫. নিজের প্রতি বিতৃষ্ণা বা বিরাগ প্রকাশ করে কি না?
শিশুরা বুলিইং এর শিকার হচ্ছে কি না সে বিষয়ে নজর রাখা যেমন বাবা-মা’র কর্তব্য, তেমনি কর্তব্য শিশুরা অন্য শিশুর উপর বুলিইং করছে কি না সে বিষয়ে নজর রাখা । কারণ সুস্থ স্বাভাবিক কোন বাবা-মাই চায় না এমন শিশুকে লালন পালন করতে যে বুলিইং করে বেড়ায়। তাই নিচের বিষয়গুলোর উপর বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে : –
১. কোন শিশু কি কাউকে নির্দেশ দিচ্ছে কি না বা বসী আচরণ করছে কি না।
২. অল্পতেই কোন বিষয়ে হতাশ হয়ে পড়ছে কি না বা রাগান্বিত হয়ে পড়ছে কি না।
৩. হিংসাত্মক বা উগ্র কোন খেলা অথবা টিভি শো দেখে চমৎকৃত হচ্ছে কি না।
৪. অন্যের প্রতি সহানুভূতির কমতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে কি না।
৫. বাবা-মা, ভাই-বোন বা অন্য কোন ব্যক্তি কিংবা গৃহপালিত কুকুর বিড়াল ইত্যাদির প্রতি নির্দয় আচরণ করছে কি না।
– তথ্য সূত্র হাফিংটন পোস্ট।
উপরে বর্ণিত কোন লক্ষণের সঙ্গে যদি দেখা যায় শিশুর আচরনের মিল রয়েছে তবে এ ব্যাপারে তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ নিতে হবে। বুলিইং এর শিকার কোন শিশুর বেলায় কোন রকম অবহেলা করা চলবে না। অথবা এরকম ভাবার কোন অবকাশ নেই যে, স্কুলে বা খেলার মাঠে শিশুরা একটু আধটু মারামারি করেই থাকে। প্রথমেই আলোচনা করুন শিশুটির সঙ্গে। জানতে চেষ্টা করুন বুলিইং কে করছে, প্রতিদিন অথবা প্রায়শই শিশুটি বুলিইং এর শিকার হচ্ছে কি না। আর ভুলেও শিশুকে পাল্টা বুলিইং এর পরামর্শ দেয়া যাবে না। কারণ এতে করে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। শিশুর মুখে ঘটনা বিস্তারিত জেনে তার ক্লাস টিচারের সঙ্গে কথা বলতে হবে। ক্লাশ টিচার যদি বিষয়টি হ্যান্ডেল করতে না পারেন বা কোন কারণে অপারগতা প্রকাশ করেন তবে স্কুলের প্রিন্সিপালের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে হবে। শিশুর গায়ে যদি কোন আঘাতের চিহ্ন থাকে তবে তার ডাক্তারী পরীক্ষা করিয়ে তার ডকুমেন্ট প্রিন্সিপালের কাছে জমা দিতে হবে পরিস্থিতির ভায়াবহতা প্রমান করার জন্য।
স্কুলের প্রিন্সিপাল বা কাউন্সিলর এরকম পরিস্থিতিতে উভয় শিশু অর্থাৎ বুলিইং এর শিকার ও বুলিইংকারী শিশুকে এক সঙ্গে নিয়ে বসবেন এবং বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। বুলিইং সম্পর্কে স্কুলের কি পলিসি তা জানাবেন উভয় শিশু বিশেষ করে বুলিইংকারী শিশুটিকে। এর পরও যদি বুলিইং চলতেই থাকে তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ বুলিইংকারী শিশুটির বাবা-মা’র সঙ্গে বসবেন এবং এটি যে ক্রিমিনাল অফেন্স বা দন্ডযোগ্য অপরাধ সেটি তাদেরকে জানাবেন। পরবর্তীতে এ ধরণের ঘটনা ঘটলে শিশুটিসহ বাবা-মা’ও দায়ী থাকবেন এ তথ্য ও হুশিয়ারীটুকু তাদেরকে জানানো হবে।
আর একটি বিষয় বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে। বুলিইং বন্ধ হলেও কিন্তু এর প্রভাব থেকে যেতে পারে শিশুর মনে। এ বিষয়ে রেজিস্টার্ড কাউন্সিলর ড. ফাইজাল শাহুখানের পরামর্শ হলো, “বুলিইং বন্ধ হওয়ার পরও বুলিইং এর শিকার শিশুটির উপর নজর রাখতে হবে। কারণ শারীরিক বা মানসিক আঘাতের বিষয়গুলো খুব ধীরে ধীরে হলেও শিশুর মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। তাই শিশুকে সবসময় আশ্বাস দিতে হবে এবং সাহস দিতে হবে এই বলে যে ভবিষ্যতে এমন হলে আপনি সর্বদাই তার পাশে থাকবেন এবং যে কোন ধরণের সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দিবেন। প্রয়োজনে আপনি আপনার শিশুকে এসার্টিভ ট্রেনিং ক্লাসে ভর্তি করাতে পারেন যেখানে চাইল্ড বুলিইং এর শিকার যারা তাদেরকে নানাভাবে সাহায্য করা হয়। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য যোগার করার জন্য স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।”