ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তন : চাকরীর বাজারে নতুন পরিস্থিতি

কানাডায় ইমিগ্রেন্টদের আত্মতুষ্টির সুযোগ কম

কানাডায় চাকরীর বাজারের উন্নতি ও বিকাশের জন্য চাকুরীদাতাগণ এখন সম্পূর্ণভাবে ইমিগ্রেন্ট নির্ভর হয়ে পড়েছেন। অর্থাৎ কানাডার অর্থনৈতিক উন্নতি বা অগ্রগতির জন্য এখন ইমিগ্রেন্ট ছাড়া গতি নেই। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় গত এক বছরে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত চাকরীর বাজারে ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা কানাডায় জন্ম নেয়া নাগরিকদের সংখ্যার চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে চাকরীর বাজারে কানাডায় জন্ম নেয়া নাগরিকদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। স্টাটিসটিক্স কানাডার সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষন করে এ খবর জানিয়েছে হাফিংটন পোস্ট।

এই পরিস্থিতি সৃষ্টির পিছনে মূল কারণ এই যে, কানাডায় জন্ম নেয়া বয়স্ক লোকেরা ক্রমশ চাকরী থেকে অবসরে যাচ্ছেন এবং সেই স্থানগুলো দখল করছেন তরুন ইমিগ্রেন্টরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই পরিস্থিতি এমনটাই ইঙ্গিত করছে যে, কানাডার ডেমোগ্রাফিক বা জনতত্ত্বিক পরিবর্তন একটা বিশেষ অবস্থায় পৌঁছে গেছে। আর এই অবস্থার কারণে এখন ইমিগ্রেন্ট কর্মীবাহিনী ছাড়া কানাডার অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। কানাডায় তরুন এবং যুবক বয়সী ইমিগ্রেন্ট কর্মীর সংখ্যা এখন আগের তুলনায় বেশী।

কানাডায় ইমিগ্রেন্টদের জন্য এটি একটি বিরাট গুরুত্বপূর্ণ খবর। কারণ আমরা দেখেছি, কানাডায় আসার পর সিংহভাগ ইমিগ্রেন্ট বিশেষ করে প্রফেশনাল ইমিগ্রেন্টদেরকে কঠিন সময় পার করতে হয়। আর বস্তুত এই কঠিন সময় অধিকাংশ ইমিগ্রেন্টের বেলায় পার হতে চায় না। বা বলা ভাল কখনোই পার হয় না। এরকম পরিস্থিতিতে যদি আমরা দেখি কানাডার চাকুরীদাতাগণ এখন সম্পূর্ণভাবে ইমিগ্রেন্ট নির্ভর হয়ে পড়ছেন তবে তা নিশ্চিতভাবেই চাকরীর ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার ইমিগ্রেন্টদের জন্য একটি বড় ধরণের সুখবর।

তবে এই খবরে এখনি পুলকিত হবার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলেই আমাদের ধারণা। কারণ আমরা দেখেছি, কানাডায় নতুন আসা পুরুষ ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে শতকরা ৩৫ ভাগই চলে গেছেন তাদের নিজ নিজ দেশে। এদের মধ্যে অনেকেই চলে গেছেন কানাডায় আসার এক বছরের মধ্যেই। আর এই চলে যাওয়ার পিছনে মূল কারণ প্রফেশনাল জব না পাওয়া।

ইমিগ্রেশন রিফুজি এন্ড সিটিজেনশীপ কানাডার এক অভ্যন্তরীন সমীক্ষায় সম্প্রতি এই তথ্য উঠে এসেছে। সমীক্ষায় যে বিষয়ের উপর নজর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে তা হলো দ্রুত পরিবর্তনশীল শ্রমবাজার পরিস্থিতি, যেখানে এখন ক্রমবর্ধমান হারে অস্থায়ী চাকরীর সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি ইমিগ্রেশন প্রার্থীদের জব স্কিল শ্রমবাজারের ডিমান্ডের সঙ্গে বনাবনী হচ্ছে না এই তথ্যটিও উঠে এসেছে সমীক্ষায়।

এর আগে ইউনাইটেড ওয়ে টরন্টো এবং ম্যাক্মাস্টার ইউনিভার্সিটির আরেকটি গবেষণায় দেখা যায় যে, গ্রেটার টরন্টো এলাকায় শ্রমিকদের অর্ধেকই অনিশ্চিত চাকরিতে নিয়োজিত। আর এদের বেশির ভাগই ইমিগ্রেন্ট। অনেক টরন্টোবাসী ইমিগ্রেন্ট পরিবারের জন্যই অনিশ্চিত কর্মসংস্থানের বিষয়টি দ্রুত জীবনধারার অংশ হয়ে উঠছে। অন্য এক হিসাবে দেখা গেছে জিটিএর ৪০ শতাংশ মানুষ তাদের চাকরির ক্ষেত্রে কোন না কোন ধরণের অনিশ্চয়তায় ভোগেন।

অর্থাৎ আমরা একদিকে দেখছি, কানাডায় চাকরীর বাজারের উন্নতি ও বিকাশের জন্য চাকুরীদাতাগণ এখন সম্পূর্ণভাবে ইমিগ্রেন্ট নির্ভর হয়ে পড়েছেন। আবার অন্যদিকে দেখতে পাচ্ছি ইমিগ্রেন্টদের অনেকেই কানাডা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। যারা আছেন তাদের মধ্যে আবার অনেকেই চাকরীর ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন অথবা স্বল্প আয়ের চাকরী করতে বাধ্য হচ্ছেন কিংবা খন্ডকালীন চাকরী করছেন পূর্ণকালীন চাকরী পাচ্ছেন না বলে। সুতরাং ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তনের কারণে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে ইমিগ্রেন্টদের আত্মতুষ্টির সুযোগ কম। তবে ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তন এখনকার মত আগামীতেও অব্যাহত থাকলে চাকরীর বাজারে ইমিগ্রেন্টদের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে সন্দেহ নেই। আর তখন সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ইমিগ্রেন্টরা কানাডা অর্থনীতিতে আরো বেশী অবদান রাখতে পারবে এমনটা আশা করা যায়।

জুলাই ৯, ২০১৬