প্রথমবারের মত বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে শাশ্বত

একটা মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি দেশের বাইরে কাজ করছি

অনলাইন ডেস্ক : মুক্তি পেল গুণী পরিচালক শাওকীর ‘গুলমোহর’। দর্শকেরাও অপেক্ষায় ছিলেন, কবে নতুন সিরিজ আনবেন এই নির্মাতা। গত ১৫ মে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে মুক্তি পেয়েছে সিরিজটির প্রথম সিজন। সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘গুলমোহর’ এই সিজনে থাকছে আটটি পর্ব।

সিরিজটি জমাতে ভূমিকা রাখছেন বেশ কয়েকজন গুণী অভিনেতা ও অভিনেত্রী। এদের মধ্যে আছেন সারা যাকের, ইন্তেখাব দিনার, মোস্তাফিজুর নূর ইমরান, সুষমা সরকার, মীর নওফেল আশরাফী জিসান, সারিকা সাবাহ, তৌফিকুল ইসলাম ইমন, মোস্তফা মনওয়ার। এছাড়াও রয়েছে আরও এক চমক! সিরিজে অভিনয় করেছেন ওপার বাংলার অভিনেতা শাশ্বত চ্যাটার্জি। এই সিরিজ দিয়ে প্রথমবারের মত বাংলাদেশের কোনো কাজে দেখা যাবে শাশ্বতকে।

পশ্চিমবঙ্গের অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। ছবি: অভিনেতার ফেইসবুক থেকে নেওয়া

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানায় সিরিজটি মুক্তি উপলক্ষে সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল আড্ডায় যুক্ত হন শাশ্বত। সেখানে জানিয়েছেন, প্রথমবার বাংলাদেশে আসার অভিজ্ঞতা, গুলমোহরে কাজের অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশের লোকেশন ও আতিথেয়তায় মুগ্ধ হওয়ার কথা।

ঢাকায় বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া স্মৃতি মনে করে শাশ্বত বলেন, “এর আগে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে উড়ে গেছি, কিন্তু নামা হয়নি কখনও। ইমিগ্রেশনে গিয়ে দাঁড়িয়েছি, সেখানে যিনি ছিলেন তিনি ‘ক্যামেরার দিকে তাকান’ বলে আমার দিকে তাকিয়ে ফিক্সড হয়ে গেলেন। সঙ্গে একগাল হাসি।”

এয়ারপোর্টে নামার আগে এক মজার অভিজ্ঞতার কথাও শোনান শাশ্বত। বলেন, “বাংলাদেশে ঢোকার একটু আগে, আপনাদের এয়ারপোর্টে আর্মির একটা বেইজ আছে, ছোট অফিস গোছের। সেখানে দুজন ইউনিফর্ম পরা ভদ্রলোক এসে বললেন, ‘কোথায় যাচ্ছেন?’ আমি বললাম, শুটিং করতে। বললেন, ‘দেশে তো ঢুকতে দেব না’। আমি বললাম, ‘মানে? আমি এত দূর থেকে আসছি’। বললেন, ‘এখানে তো এক কাপ চা না খেয়ে আপনি দেশে ঢুকতে পারবেন না’। এভাবে বাংলাদেশে আমার এন্ট্রি হলো। এরপর পুরো সময়টা স্বপ্নের মত কেটেছে।”

ছোটবেলায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে নাটক দেখতেন শাশ্বত।

বাংলাদেশের নাটকের প্রশংসা করে এই অভিনেতা বলেন, “ছোটবেলায় অ্যান্টেনার সঙ্গে বুস্টার লাগিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশন দেখা যেত। সেই সূত্রে নাটকের সঙ্গে পরিচয় ছিল। সুন্দর সুন্দর নাটক হত, সেগুলো দেখতাম।”

‘গুলমোহরে’ কাজ করা প্রসঙ্গে শাশ্বত বলেন, “খুবই সুন্দর একটা সাবজেক্ট। এমন গল্প আমাদের এখানে খুব একটা হয় না। পুরনো পারিবারিক ঐতিহ্য, ব্যাকগ্রাউন্ড সব মিলে অন্যরকম অভিজ্ঞতা।”

গুলমোহর এর সহশিল্পীদের নিয়ে এই অভিনেতার ভাষ্য, “শুটিংয়ে প্রথমে একটু গুটিয়ে ছিলাম। কিন্তু সবাই এত আপন করে নিলেন, একটা মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি দেশের বাইরে কাজ করছি।”

শুটিংয়ের ফাঁকে অভিনেতা ঘুরে দেখেছেন বাংলাদেশের প্রকৃতি। বলেন, “বাংলাদেশে এত পুরনো সুন্দর সুন্দর লোকেশন দেখলাম! এত সবুজে ঘেরা জায়গা! এত ওয়ার্ম হার্টেড মানুষজন! আমরা গিয়েছিলাম মাওয়া বলে একটা জায়গায়। জ্যান্ত ইলিশ দেখে পছন্দ করে একদিন সন্ধ্যাবেলা খাওয়াদাওয়া করেও এসেছি। যে পদ্মা নদীর কথা আমরা এতদিন শুনে এসেছি, চোখের সামনে অত বড় একটা নদী! অদ্ভুত লাগছিল! এ অভিজ্ঞতা বলে বোঝানো যাবে না।”

তবে একটা ইচ্ছা পূরণ হয়নি শাশ্বতর। বলেন, “আমার খুব ইচ্ছা ছিল, বাংলাদেশে গিয়ে মঞ্চনাটক দেখব। এবার সম্ভব হলো না, দেখা যাক পরে কী হয়,” জানালেন সেই অপূর্ণ ইচ্ছার কথা।

সৈয়দ আহমেদ শাওকীর নির্মাণে মিস্ট্রি-ড্রামা ঘরানার গুলমোহর সিরিজে একটি পরিবারের গল্প দেখা যাবে। যেখানে একটি বাড়িকে ঘিরে তৈরি হয় নানা রকম দ্বন্দ্ব, অপহরণ, অবিশ্বাস। সাথে দেখা যাবে পূর্বপুরুষের অন্ধকার দিকটাও, যা উত্তরাধিকারীদের বয়ে বেড়াতে হয়।

এর আগে সিরিজটি নিয়ে শাশ্বত বলেন, “এতে অনেককিছু আছে, তবে আমার চরিত্রে আছে ইমোশন। এমন কাজ খুব কমই হচ্ছে আজকাল। এর সঙ্গে আরেকটা বিষয় আমাকে খুব আগ্রহী করেছে, সেটা হলো, বাংলাদেশে শুটিং। কাজের আগেই আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, শুটিং কোথায় হবে? ওরা বলল বাংলাদেশে। কাজ করতে রাজি হয় গেলাম।”

পরিচালককে নিয়ে অভিনেতা বলেছেন, শাওকী তার কাজের ব্যাপারে খুব ‘স্পষ্ট’।

“তিনি জানেন কী করতে চান, কীভাবে করতে চান।”

সিরিজে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন সারা যাকের। আর ভাই-বোনের চরিত্রে আছেন ইন্তেখাব দিনার, সুষমা সরকার এবং মীর নওফেল আশরাফী জিসান। বড় ভাইয়ের ভূমিকায় আছেন ইন্তেখাব দিনার।

বাবা, স্বামী, সন্তান, ভাই এবং রাজনৈতিক নেতাসহ নানা মাত্রার চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোস্তাফিজুর নূর ইমরান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *