কানাডায় নবাগতরা কি কিনছেন এবং কিভাবে কিনছেন?

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডার জনসংখ্যা সম্প্রতি চার কোটিরও বেশি হয়ে গেছে। ২০২২ সালে দেশটি ১০ লাখের বেশি নতুন বাসিন্দাকে স্বাগত জানিয়েছে, এই বৃদ্ধির ৯৮% ভাগই ঘটে অভিবাসনের মাধ্যমে। ইতিপূর্বের আরেক হিসাবে দেখা গিয়েছিল- ২০১১ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে কানাডার জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধির দুই-তৃতীয়াংশই এসেছে অভিবাসনের মাধ্যমে। দেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য নবাগতদের ওপর এই নির্ভরতা আগামী দিনেও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার তথ্য অনুযায়ী, ২০৫৬ সালের মধ্যে অভিবাসনই হবে কানাডার জনসংখ্যা বৃদ্ধির একমাত্র চালিকা। খবর কানাডাবাউন্ডইমিগ্রেন্ট.কম এর।

ইতিপূর্বে জনসংখ্যার এই অংশটির বিকাশের ধারার সূচনায় গ্রুপ এম-এর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ওথ (ঙঅঞঐ) নামে একটি সংস্থা নবাগতদের সম্পর্কে ভালো করে জানাবোঝা এবং তারা গণমাধ্যমে তাদের অংশভাগ, তাদের সাংস্কৃতিক মানসগঠন, কেনাকাটার প্রবণতা এবং আচরণ ইত্যাদি সম্পর্কে শিক্ষালাভের উদ্যোগ নেয়।

এই গবেষণায় কানাডার চারটি প্রদেশের ৯৩৫ জন নবাগতের ওপর সমীক্ষা চালানো হয় যেখানে তাদের কানাডায় আসা, গণমাধ্যমের ব্যবহার এবং অভ্যাসের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা হয়।

মুখ্য উদ্ভাবনসমূহ:

গণমাধ্যমের ব্যবহার। টেলিভিশন সম্প্রচারের চেয়ে তাদের জন্য সর্বোচ্চ সুলভ হলো ডিজিটাল মাধ্যম এবং তারা বিনামূল্যের সংবাদ উপকরণ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন। নবাগত কানাডীয়রা যখন এদেশে বসবাস শুরু করেন তখন তাদের সর্ব প্রথম কাজগুলোর একটি হলো একটি মোবাইল ফোন সেট সংগ্রহ করা। বস্তুত, নবাগতদের শতকরা ৪৮ ভাগই তাদের স্মার্টফোনে দিনে তিন ঘণ্টার বেশি সময় কাটায় যেখানে নব্য কানাডীয় নয় এমন লোকদের মধ্যে স্মার্টফোনে এতটা সময় কাটানো লোকের সংখ্যা শতকরা ৩৭ ভাগ।

নবাগতরা ব্রান্ড সম্পর্কে জানতে বিজ্ঞাপন দেখে তারপর সেট কেনার সিদ্ধান্ত নেয়।

নব্য কানাডীয়রা- (ইয়াহুর সমীক্ষার তথ্য) পণ্যের দামের ব্যাপারে খুবই অনুভূতিপ্রবণ। দামই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যার ওপর ভিত্তি করে তারা কোনও পণ্য কেনার সিদ্ধান্ত নেয়।

ভ্রমণ :  এক বছর বসবাসের পর প্রায়শ ভ্রমণে যায়, তবে সেটা কানাডার ভেতরে। নব্য কানাডীয়রা বেশিরভাগ সময় ট্রেনে বা বাসে ভ্রমণ করে। তারা যানবাহনের ভাড়া এবং মালপত্রের ভাড়ার পরিমাণ দিয়ে খুবই প্রভাবিত।

অটোমোবাইল : নব্য কানাডীয়রা সাধারণত ব্যবহৃত গাড়ি কেনে এবং তাদের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রভাবিত হবার সম্ভাবনা দ্বিগুণ। কানাডায় গাড়ি বেছে নেবার ব্যাপারে ৯১ শতাংশ নব্য কানাডীয়ই সন্তুষ্ট।

ব্যাংকিং : নবাগতরা কানাডায় আসার আগেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে গবেষণা করে এবং ৭৮ শতাংশই বলেন, ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট খোলাই ছিলো তাদের প্রথম কাজ। এছাড়াও, ৬৫ শতাংশ নবাগতের কানাডার ব্যাংকিং অ্যাপস আছে যেখানে নব্য কানাডীয় নয় এমন লোকেদের অ্যাপস আছে ৫০ শতাংশের।

টেলিকম : নবাগতদের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয় হলো স্মার্ট ফোন। তাদের ৭৯ শতাংশই কানাডার বাইরে অবস্থানরত তাদের আত্মীয় ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য মেসেঞ্জার অ্যাপ ব্যবহার করে। বেশিরভাগই বলেছেন, দেশে থাকতে তারা যত সময় স্মার্টফোনে কাটাতেন এখানে তার চেয়ে বেশি সময় কাটান। নব্য কানাডীয়র কাছে আন্তর্জাতিক কলের সময়, দ্রুত একটি ফোন পাবার সক্ষমতা এবং পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্যভাবে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

সাংস্কৃতিক মানসগঠন : এদেশে আসার ব্যাপারে যুক্তির চেয়েও যেটা বেশি কাজ করে সেটি হলো কানাডাকে দেখা হয় অবারিত সুযোগের দেশ হিসাবে। এখানে এসেও সংগ্রাম করতে হয়, তবে কানাডায় আসার ব্যাপারে সার্বিকভাবে সবার মনোভাব ইতিবাচক।

নবাগতদের অর্ধেকই কানাডীয় জীবনযাত্রাপ্রণালী ও নিজের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলে।  ২৫ শতাংশ কানাডার জীবনযাত্রা বেছে নেয়। ২৫ শতাংশ তাদের নিজ দেশের জীবনযাত্রাপ্রণালী/ঐতিহ্য ধরে রাখে।

কেনাকাটা : নব্য কানাডীয়রা দামের ব্যাপারে খুবই সংবেদনশীল। পণ্যের দামই হলো সেটি কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রভাবশালী বিষয়। তথ্যগুলো জানা গেছে যে আকারে:

রূপচর্চা : কানাডায় আসার পর ৯৪ শতাংশ নবাগত সৌন্দর্য চর্চার নতুন পণ্য ব্যবহার করতে শুরু করে। এক্ষেত্রে মর্যাদাসম্পন্ন ব্রান্ডই তাদেরকে স্থায়ীভাবে প্রভাবিত করে।

খাবার : ৬০ শতাংশ নবাগত তাদের নিজ দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার রান্না করে। অবশ্য, ৪২ শতাংশ নতুন কোনও ব্রান্ডের খাবার চেখে দেখতে পছন্দ করে (নবাগত নয় এমন অভিবাসীদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা হলো ২৪ শতাংশ)।

গবেষণায় বিভিন্ন জাতিগত নব্য কানাডীয়র সঙ্গে অনলাইনে আলোচনা এবং একটি অনলাইন সমীক্ষার ফলাফলেরও সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে।

নব্য কানাডীয়দের সঙ্গে তুলনা করার জন্য ওথ (ইয়াহুর মাধ্যমে) কানাডায় জন্মগ্রহণকারী ভোক্তাদের ওপরও সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষায় অংশ নেয়া নব্য কানাডীয়রা ছিলো বিভিন্ন এলাকা ও অঞ্চলের, যার মধ্যে রয়েছে: চীন, দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, ইউরোপ, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা এবং ফিলিপাইন।