সিনোপ্সিস ৫৮/৫৯
ফয়জুল হক দুলা, ccp
সিনোপ্সিস ৫৮ :
বাংলাদেশের উপর কর্তৃত্ব হারিয়ে মোদী -অমিত শাহ’র মাতন!
(এক) বাইডেনের সাথে সাক্ষাতে মোদী বাংলাদেশের হিন্দুদের নিরাপত্তায় উদ্বিগ্নতা জানিয়ে বিচার প্রার্থী হয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে- তার নিজ দেশে সংখ্যালঘুরা ( মুসলিম , খ্রিষ্টান, শিখ , জৈন , নিম্ন বর্ণের হিন্দু) আজ ৩য়/৪র্থ শ্রেণির সিটিজেনের মর্যাদাও পাচ্ছে না-কদিন পর পরই জ্বলে উঠছে বিভিন্ন রাজ্য। গুজরাটে মুসলিম হত্যার জন্য মোদী সরাসরি দায়ী-সেই কারণে আমেরিকা তাকে ভিসা দেয় নাই। দিল্লিতে মুসলিম হত্যার জন্য অমিত শাহ-মোদী সরাসরি জড়িত। তার নিজ দেশের সংখ্যালঘুরা অন্য দেশের নাগরিকত্ব নিয়েও রেহাই পাচ্ছে না। আমেরিকা কানাডাতে ‘র’ এর এজেন্ট পাঠিয়ে শিখ সংখ্যালঘুদেরকে হত্যা করেছে মোদী-অমিতের বিজেপি। অথচ বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নিয়ে তাদের মায়াকান্নার শেষ নেই। সরকার পতনের পর সংখ্যালঘু নির্যাতনের যে ভিডিওগুলো ভাইরাল হয়েছে তার বেশির ভাগই ছিল ভুয়া এবং ভারত থেকে আসা। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করছি-গেল বছর মন্ট্রিয়লে বসবাসরত আমার এলাকার এক ছোট ভাই (সে হিন্দু) আমাকে একটি ভিডিও শেয়ার করে। তার মনে খুব দুঃখ ও ক্ষোভ আমি অনুভব করি -আমার ও প্রচন্ড রাগ হয়। শুধু হিন্দু বলে একজন মানুষকে দুইটি ছেলে পিটিয়ে হত্যা করছে আর সবাই দাঁড়িয়ে দেখছে। ২ দিন পর সরকারি ভাবে জানা গেল – এই ভিডিওটা ছিল মীর পুরে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত একজন মুসলমানের। ওটাকে এডিট করে কোলকাতা থেকে হিন্দু নির্যাতন হিসাবে প্রচার করা হয়। আমি ছোট ভাইকে সান্ত্বনা দিয়ে ঘটনাটা বলেছি। সুতরাং মায়া কান্না দেখিয়ে লাভ নেই। আমাদের দেশের সংখ্যা লঘুরা বিজেপীর মায়া কান্নাকে আর গিলছে না। আমাদের দেশে আমরা সবাই সংখ্যা গুরু-দেশ গড়তে আমরা বদ্ধপরিকর।
(দুই) ঝাড়খন্ডে অমিত শাহ ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদেরকে উল্টো করে টাঙ্গিয়ে রাখা হবে। একটি বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কথা শুনে মনে হচ্ছে কোন এক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পালিত গন্ডারের আওয়াজ। এই বেয়াক্কল খুনিদের বোঝা উচিত এই দেশ চালাচ্ছে একজন নোবেল লরিয়েট-তাদের মত খুনি চা বিক্রেতা না। রৌমারীর কথা মনে আছে? ভারতীয় বিএস এফকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে এসে চিকিৎসা করে স্ব-সম্মানে ভারতে ফেরত পাঠানোর কথা ? ভারতের জনগণ আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী দেশের নাগরিক -কাছের বন্ধু। আমাদের রূটস ও ভারতে। সুতরাং আমরা সকল ভারতের নাগরিককে শ্রদ্ধা ও বিনয়ের সাথেই কাছে টেনে নিব। কিন্তু বিজেপির মত / আর এস এস র মত কোন সাম্প্রদায়িক শক্তি আমাদেরকে চোখ রাঙ্গালে ক্ষতি তাদেরই হবে।
(তিন) পরিশেষে মোদী-অমিত শাহকে বুঝতে হবে-এই দেশ হায়দ্রাবাদ কিংবা সিকিম না। এখানে কোনো লেন্দুপ দর্জি তৈরি করার চেষ্টা করে লাভ নেই। এখানে ছুরি চাকু চালানোর চেষ্টা করলে পরিণতি ভাল হবে না।
সিনোপ্সিস ৫৯:
প্রয়োজন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন?
শেখ হাসিনার বিচার?
(এক) জিওপলিটিক্যাল অবস্থানের দিক থেকে বাংলাদেশ অন্যের কাছে যেমন গুরুত্ব বহন করে ঠিক তেমনি নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বদাই এক সেন্সেটিভ এবং ব্যালেন্সিং নীতির প্র্যাক্টিস অপরিহার্য। একটি দেশ তার বন্ধু বদলাতে পারে কিন্তু প্রতিবেশী বদলাতে পারে না। ভারতের মত একটি বৃহৎ দেশ ও শক্তির দেহের ভিতরে অবস্থান করেও বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম-স্বাধীন ও বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী হিসাবে প্যারালাল ভাবে সাসটেইন করতে হলে রাষ্ট্র ও সরকারের চরিত্র হতে হবে এক্সট্রাঅর্ডিনারী। ১৯৭১ সালের পর থেকে অদ্যাবধি রাষ্ট্রের চরিত্র ঠিক করা যায় নাই। সরকারের কাঠামোগুলো দুশ্চরিত্র-করাপ্ট রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের ঘাড়ের উপর ছিল দণ্ডায়মান। সুতরাং পররাষ্ট্রনীতিতে দালালি আর পদলেহন ভিন্ন অন্য কিছু দেখা যায় নাই। ভারত বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ হলেও তার রাষ্ট্র ক্ষমতায় রয়েছে সাম্প্রদায়িক দুশ্চরিত্র-আগ্রাসী সরকার। একটার পর একটা আগ্রাসী পদক্ষেপ (জম্মু কাশ্মীরকে কেন্দ্রে নিযুক্তি, সিটিজেনশীপ আইন, ভিন্ন মত ও পথের উপর আক্রমণ) মূলত বাংলাদেশকে ক্রমান্বয়ে জম্মু কাশ্মির স্টাইলে দিল্লির কন্ট্রোলে নিয়ে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে শেখ হাসিনার ঘাড়ে আছড় করেছিল যা শেখ হাসিনা ও সংশ্লিষ্ট ও ঘনিষ্ঠজন ব্যতিরেকে আওয়ামী লীগের মিড লেভেলের নেতা কর্মী বা সদস্যদেরকে বিশ্বাস করানো ছিল কঠিন এবং এখনও কঠিন। আমরা যারা আওয়ামী রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট না থেকেও শুধু “বঙ্গবন্ধুর মেয়ের দ্বারা দেশের ক্ষতি হতে পারে না” এই বিশ্বাসের উপর ভরসা করে শেখ হাসিনার সরকারকে “মন্দের ভাল” বলে সাপোর্ট দিয়ে গিয়েছিলাম তাদেরও সম্বিত ফিরতে সময় লেগেছে। তবে এটা ঠিক, দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক জংঙ্গী সরকার না থেকে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকলে হয়ত বাংলাদেশের সম্পর্কের এত ক্ষতি হত না এবং শেখ হাসিনা নিজেকে ও তার দলকে ইতিহাসের আস্থাকুড়ে ফেলে যেতে হত না। শেখ হাসিনা যে বাংলাদেশের ইতিহাস আর বঙ্গবন্ধুর কি ক্ষতি করেছেন সেটা একমাত্র ভবিষ্যতই বলতে পারবে।
সাধারণত কোন বিপ্লবের পর দেশ আর পুরোনো কাসুন্দি দেখতে চায় না। বাপ বেটী আর বাপ বেটা’র রাজনীতির অবসান হওয়া উচিত। অথচ মনে হচ্ছে আমরা সেই দিকেই যাচ্ছি। এতে লাভ কিছুই হবে না; শুধু বেটির জায়গায় বেটা আসবে। সুতরাং প্রশ্ন হচ্ছে সল্যুশন-টা কি? সমস্যার সমাধান তো অবশ্যই আছে। বৃহত্তর ও শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে সু সম্পর্ক বজায় রেখে নিজ দেশের সার্বভৌমত্ব ও ডিগনিটি সমুন্নত রেখে চলতে হলে একটি চরিত্রবান সরকারের বিকল্প নাই। ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল একটি বিকল্প প্রস্তাবনা হতে পারে। তবে শুধুই ধর্মভিত্তিক দল (অতি প্রগতিশীলদের ভাষায় মৌলবাদী) নিয়ে সরকার গঠিত হলে পশ্চিমা দেশগুলোর কোপানলে পড়বে তা নিশ্চিত। রাতের মধ্যেই একটি মৌলবাদী রাষ্ট্র – তালেবানী রাষ্ট্রের খেতাব দিয়ে ব্যর্থ করার সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রায় ১৮ কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষের দেশে একটি মডার্ন, মডারেট – অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞান ভিত্তিক এবং ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলই ভবিষ্যতের সুসংগঠিত বাংলাদেশ গড়ার কারিগর হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব। জ্ঞান নির্ভর ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলই দেশ প্রেম, সততা, প্রতিরক্ষা আর সু শাসনের নিশ্চয়তা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
(দুই) পররাষ্ট্র উপদেষ্টা শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থান জানার চেষ্টা করছেন-উদ্দেশ্য হচ্ছে নিয়ে এসে বিচার করা। ভালো কথা। কিন্তু শেখ হাসিনাকে নিয়ে আসা কি এতই সহজ? ১৫ বছর সর্বশক্তি নিয়োগ করেও শেখ হাসিনা তারেক জিয়াকে বা বঙ্গবন্ধুর খুনীদেরকে দেশে নিয়ে আসতে পারে নাই। যদি প্রধান উপদেষ্টার ক্যারিস্ম্যাটিক ইমেজ ও ইনফ্লুয়েন্স দিয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হন-তারপরও কি বিচার করতে পারবেন? তার আগেই তো দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে চলে যাবে- সাড়ে ৫ কোটি আওয়ামী সদস্যরা কি বসে বসে শেখ হাসিনার ফাঁসি দেখবে? মনে আছে- দোর্দণ্ড প্রতাপে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিতে সমর্থ হলেও শেখ হাসিনাকে সাঈদীর ফাঁসি বাতিল করতে হয়েছে। এই দেশের মানুষ কি কম্মিনকালেও চিন্তা করেছিল যে বঙ্গবন্ধুর মেয়ের দ্বারা দেশ এভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে আর তাকে দেশ থেকে পালাতে হবে? তাই-এই মুহূর্তে দেশকে নতুন করে গড়ার উপর নজর দিন – বিচারের দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে দিন। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার “ঝুপ বুজে কোপ মারা’র সময় কোনটি তা বের করে নিবে।”
ফয়জুল হক দুলা ccp
টরন্টো