কানাডায় তরুণদের ক্রমবর্ধমান হারে সেক্সটরশনের শিকার হবার সংখ্যা বাড়ছে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : বিশেষজ্ঞরা কানাডায় শিশুদের বিরুদ্ধে ‘সেক্সটরশন’ বা যৌন ছবির ভিত্তিতে হুমকি প্রদান ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে যাবার বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছেন। খবর জেসিকা বেরাইল – সিটিভি নিউজ।

কানাডিয়ান সেন্টার ফর চাইল্ড প্রোটেকশন-এর (C3P) সহযোগী নির্বাহী পরিচালক সিগনি আরনাসন বলেন, “সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় সেক্সটরশনের শিকার হচ্ছে ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সের শিশুরা। তবে গত কয়েক মাসে আমরা দেখছি এর চেয়েও অনেক কম বয়সী শিশু সেক্সটরশনের শিকার হচ্ছে। আমরা দেখছি, আমাদের কাছে আসা অভিযোগের ২০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ১৩ বছর বা তার চেয়েও কম বয়সী শিশু জড়িত।”

শিশুদের অনলাইনে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ জানানোর টিপ লাইন বা নির্দিষ্ট টেলিফোন নম্বরে এখন প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১০টি করে অভিযোগ আসছে। এসব অভিযোগের মধ্যে ৯১ শতাংশ ভিকটিমই ছেলেরা।

আরনাসন বলেন, “নিপীড়করা একটি কৌশল নিয়ে এগোয় যা কার্যকর। তাদের সঙ্গে দ্রুত কথাবার্তা সেরে নেয়। এটি উচ্চ মাত্রার যৌনতায় ভরপুর। বালকেরা এর প্রতি অসহায় থাকে।”

আরনাসন বলেন, বাবা-মায়েদের উচিৎ অনলাইনের কর্মকাণ্ডের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে বাচ্চাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা।

তিনি বলেন, “আপনি বালুতে মাথা গুঁজে থেকে এটা ভাবতে পারবেন না যে, আমার বাচ্চার সঙ্গে কখনই এমনটা ঘটবে না। কারণ এটি ঘটে অতি দ্রুত, বিশেষ করে সেক্সটরশনের ঘটনা।”

১৭ বছর বয়সী ড্যানিয়েল গত বছর অনলাইনে সেক্সটরশনের শিকার হন এবং তিন ঘন্টার মধ্যে নিজের জীবন নেন। ছবি: জন উডস-দি কানাডিয়ান প্রেস

আরনাসন সতর্ক করেন যে, “আমরা ক্রমশই আরও বেশি সংখ্যক বাচ্চাকে এই নিপীড়নের শিকার হয়ে নিজের জীবন শেষ করতে দেখছি। এটি প্রতিটি বাবা-মায়ের জীবনে সবচেয়ে ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন।”

সেক্সটরশন বেড়ে যাবার সঙ্গে তথাকথিত “পুনরুদ্ধার কেলেঙ্কারির” আবির্ভাব যুক্ত, যেখানে প্রতারকরা এমন দাবির মাধ্যমে তাদের শিকার ধরে যে, তারা অর্থের বিনিময়ে অন্তরঙ্গ ছবি উদ্ধার করে দিতে পারে।

কিন্তু, সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট স্টিভ ওয়াটারহাউস সতর্ক করেন যে, ছবি একবার অনলাইনে দেয়া হলে সেটি সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলতে পারার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

তিনি বলেন, “ছবিগুলি কোথায় তোলা হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে আজকের দিনে, ২০২৩ সালে আমরা অনুমান করতে পারি যে, সেগুলি সমগ্র ইন্টারনেটে বারবার কপি করা হয়েছে। সুতরাং, হ্যাঁ, একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বলাই যায় যে, তারা কারো কাছে সংরক্ষিত ছবির একটি কপি পেতেই পারে। কিন্তু ইন্টারনেটের অন্য প্রান্তে কোথাও না কোথাও, কেউ না কেউ সে ছবির কপি রেখে দিতে পারে।”

মন্ট্রিলের ইংলিশ স্কুল বোর্ড (EMSB) বলছে, তারা বিষয়টি নিয়ে সচেতন এবং তা তাদের যৌন শিক্ষা পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই বোর্ড কানাডার শিশু সুরক্ষা কেন্দ্র এবং লাভ কুইবেক-এর মত সংগঠনগুলির সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে অনলাইন ও অফলাইনে নিরাপত্তা সম্পর্কিত পাঠ্য বিষয় প্রণয়ন করেছে।

বোর্ডের শিক্ষা বিষয়ক পরামর্শক জেমি কুইন বলেন, “তারা বাচ্চাদের শেখাচ্ছেন, কীভাবে অনলাইনে নিরাপদ থাকা যায় এবং তুমি যা কিছুই অনলাইনে রাখো না কেন সেটি আর তোমার নয়। আমরা তাদের যতই শেখাবো, আশা করা যায় তারা ভালো করবে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা আরও বেশি তথ্যাভিজ্ঞ পছন্দ নির্ধারণ করতে পারবে।”

নিরাপত্তার টিপস

মন্ট্রিলের পুলিশ জানায়, নির্দিষ্ট করে গত গ্রীষ্মকালের শুরু থেকে সেক্সটরশনের ঘটনা বেড়ে গেছে। পুলিশের ইন্টারনেট চাইল্ড সেক্সচুয়াল এক্সপ্লয়টেশন ইউনিট ২০২৩ সালে শতাধিক অভিযোগ পেয়েছে, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে পেয়েছিল মাত্র ৩০ টি অভিযোগ।

পুলিশ বলছে, এই টিপসগুলি টিনএজারদের নিরাপদ থাকতে সাহায্য করবে:

– ছদ্মনাম ও ছদ্ম প্রোফাইল পিক ব্যবহার করো যা তোমার বয়স ও বাসস্থান অথবা আগ্রহের বিষয় প্রকাশ করে না

–  পোস্ট, ছবি ও ভিডিও দেখতে পাবে এমন দর্শকদের প্রতিহত করার জন্য কন্ট্রোলস অ্যান্ড অ্যাডজাস্ট অ্যাপ্লিকেশনের প্রাইভেসি সেটিংস অ্যাক্টিভেট করো, এবং প্রোফাইল প্রাইভেট করে রাখো

–  কখনই ক্যামেরার সামনে কাপড় ছাড়বে না (ছবি বা ভিডিও), এমনকি তোমার সঙ্গীর জন্যও না

–  অন্তরঙ্গ ছবি একবার সেন্ড করলেই সেগিুলোর ওপর তোমার কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না

–  তোমার ভিডিও প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে এমন যে কারও সঙ্গে তৎক্ষণাৎ সব ধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দেবে, এবং একজন প্রাপ্তবয়স্ককে বিষয়টি জানাবে। ইন্টারনেটে অথবা বাস্তব জীবনেও কাউকে হুমকি দেওয়া অবৈধ

–   কখনও টাকাপয়সা, নতুন ছবি কিংবা ভিডিও পাঠাবে না

–   সতর্ক থাকার জন্য কিছু লক্ষণ সব সময় খেয়াল করবে, যেমন, ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে থাকার জন্য চাপাচাপি করা এবং কথোপকথনের সময় দ্রুতই যৌন বিষয়ে চলে যাওয়া

সেক্সটরশনের শিকার হলে কী করতে হবে

– দ্রুত একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে পরিস্থিতি জানাও

– স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করো অথবা ৯১১ নম্বরে কল করো

– মূল কপি সংরক্ষণ করো (ই-মেল, টেক্সট মেসেজ, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি)। এগুলি হলো প্রমাণপত্র যাতে একজন ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য থাকতে পারে।

উপায় উপকরণ

– ইন্টারনেটে কোনওরকম অনুচিৎ কিছু ঘটলে তুমি সাইবারটিপ.সিএ-তে (cybertip.ca) অভিযোগ করতে পারো অথবা ১-৮৬৬-৬৫৮-৯০২২ নম্বরে কল করতে পারো।

– বাবা-মায়েদের জন্য অভিযোগের লাইন, প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা খোলা, নম্বর ১-৮০০-৩৬১-৫০৮৫ অথবা ligneparents.com