টরন্টোতে বয়োজ্যেষ্ঠদের আবাসনে ভাষাগত সমস্যা আছে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি খুব জরুরী বিষয় হয়ে উঠছে
সামাজিক আবাসনে বসবাসরত বয়োজ্যেষ্ঠদের এক-তৃতীয়াংশের দ্বিতীয় ভাষা ইংরেজি
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : ২০০৯ সালে টরন্টোর কমিউনিটি হাউজিং থেকে ৮২ বছর বয়স্ক আল গসলিংকে উচ্ছেদ করা হয়। কয়েক মাসের মধ্যে গৃহহীনদের একটি কেন্দ্রে রোগাক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়।
নগর কর্তৃপক্ষের এক তদন্তে প্রকাশ পায় যে, দীর্ঘদিনের ওই বাসিন্দার উচ্ছেদের পেছনে মূল কারণ ছিল ভাষা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা।
গসলিংয়ের মৃত্যু জনগণের মধ্যে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি করে। এই ঘটনা স্বল্প আয়ের বয়োজ্যেষ্ঠদের চিকিৎসা বিষয়ে অনেক ধারাবাহিক আলোচনা পর্যালোচনারও সৃষ্টি করে। এর ফলশ্রুতিতে ২০২২ সালে টরন্টো সিনিয়রস হাউজিং করপোরেশনের (TSHC) প্রতিষ্ঠা হয়। বৃদ্ধদের সেবা নিশ্চিত করতে বিশেষভাবে তাদের জন্যই এই হাউজিং প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গসলিংয়ের মৃত্যুর পর গত ১৪ বছরে প্রভূত অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে, কিন্তু যোগাযোগের বিষয় নিয়ে এখনও লড়তে হচ্ছেÑ যেটিকে তারা বলছেন, এই সমস্যার দিকে জরুরী ভিত্তিতে নজর দেয়া দরকার যেহেতু কানাডার অভিবাসী জনগোষ্ঠী বয়স্ক হয়ে পড়ছে এবং টরন্টোর সামাজিক আবাসনে বয়োজ্যেষ্ঠদের সংখ্যায় বৈচিত্র্য আসছে।
“আমাদের দরজায় একটি সাইন বা সঙ্কেত লাগানো আছে, কিন্তু সেটি ইংরেজিতে। আমি সেটি দেখেছি। তাতে আসলে লেখা আছে, ‘আপনার চুলা নিভিয়েছেন তো?’” ওয়েলেসলি ইন্সটিটিউটের গবেষকদেরকে বলেন একজন চীনাভাষী নারী। ওই গবেষকরা টরন্টোর সামাজিক আবাসনে ভাষার বাঁধা সম্পর্কিত ২০২২ সালের শরৎকালীন রিপোর্ট প্রণয়নের কাজ করছিলেন।
“আমি নিজেই সাইনটি পাল্টে দিয়েছি সাইনের ভাষা কেটে দিয়ে সেখানে আগুনের শিখার ছবি বসিয়েছি।”
টিএসএইচসির বাসিন্দা ৫০০০ এর বেশি বয়োজ্যেষ্ঠর দ্বিতীয় ভাষা ইংরেজি
ওয়েলেসলির রিপোর্টে দেখা যায়, বাসিন্দারা যখন তাদের আবাসন সুবিধা ধরে রাখার জন্য প্রায়শ প্রয়োজনীয় প্রচুর পরিমাণ লিখিত নথি বুঝতে পারেন না অথবা যখন তারা কেবল ইংরেজিভাষী কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না তখনই আবাসন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
গবেষক ক্রিস্টিন শেপার্ড বলেন, “যখন কেউ নথিপত্রের কাজ নিয়ে সঙ্কটে পড়েন, তখন উচ্ছেদের ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে, প্রধানত বকেয়া ভাড়া নিয়ে এমনটা ঘটে।”
তিনি বেশ কয়েকটি রিপোর্টের সহ-লেখক। এর মধ্যে একটি রিপোর্টে দেখা গেছে,
উচ্ছেদের শিকার স্বল্প আয়ের বয়োজেষ্ঠ্যরা গৃহহীন হয়ে পড়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন।
টিএসএইচসির একজন মুখপাত্র ই-মেলে জানান, “উচ্ছেদ হলো সর্বশেষ উপায়। আমরা নিবাসীদেরকে তাদের আবাসনে থাকার ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য উচ্ছেদ এড়াতে একসঙ্গে কাজ করি।”
এই করপোরেশন ৮৩টি ভবনের ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত। সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের নিবাসীদের মধ্যে ৫০০০ এর বেশি বয়োজ্যেষ্ঠ নিবাসীর দ্বিতীয় ভাষা ইংরেজি।
টিএসএইচসি বলেছে, তাদের লক্ষ্য ভাড়াটেদের দেখাশোনা করা এবং অনুবাদ কাজের বিষয়ে প্রাধান্য দেয়া। যেসব বয়োজ্যেষ্ঠ নিবাসী ভাড়া সম্পর্কিত ও অন্যান্য নথিপত্র হালনাগাদ রাখতে সমস্যায় পড়েন তাদের সহায়তার লক্ষ্যে সংস্থার ভাড়াটিয়া সম্পর্কিত একটি জটিল টিমও আছে।
এক বিবৃতিতে টিএসএইচসি জানায়, কিছু নীতিমালার মাধ্যমে ভাড়াটেরা এখন সুরক্ষিত। এর মধ্যে রয়েছে, উচ্ছেদের নোটিশ দেবার আগে সংস্থাকে সংশ্লিষ্ট ভাড়াটেকে দুবার হাউজিং ইকুইটি কমিশনারের দফতরের কাছে পাঠাতে হবে। এই দফতরের কাজ দুঃস্থ এবং ভাড়া বকেয়া পড়া ব্যক্তিদের সহায়তা করা।
দফতরের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, তাদের নিষ্পত্তি করা বেশিরভাগ ঘটনাই বয়োজ্যেষ্ঠদের নিয়ে। সংস্থার ২০২০ সালের বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ভাড়া বকেয়া পড়া সংক্রান্ত ৪২৫টি ঘটনার মধ্যে ৬৬টিতেই বয়োজ্যেষ্ঠদের সংশ্লিষ্টতা ছিল।
শেপার্ড বলেন, তিনি মনে করেন হাউজিং করপোরেশন অনেকগুলো চ্যালেঞ্জই আন্তরিকতার সঙ্গে নিচ্ছে। অবশ্য, এটা অনস্বীকার্যভাবেই সহজ কোনও দায়িত্ব নয়। তিনি বলেন, ভাষা সম্পর্কিত সহায়তা দেয়া খুব জটিল, কারণ, এজন্যে প্রতিটি ভবনের দিকে খুব মনোযোগ রাখতে এবং কেমন নিবাসী আসছে সেটি বুঝতে পারতে হয়।
আরও বেশি সংখ্যক ভাষায় সহায়তা দরকার
শেপার্ড ও তার দল বয়োজ্যেষ্ঠদের সামাজিক আবাসনের ৫৮ জন নিবাসী এবং ৫৮জন স্থানীয় কমিউনিটি স্বাস্থ্য সেবাদানকারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে যারা ওয়েলেসলি ইন্সটিটিউটের ২০২২ সালের শরৎকালীন রিপোর্ট প্রণয়নে সাহায্য করেছেন।
তারা দেখেছেন যে, ওইসব নিবাসীরা আবাসন সংস্থার কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং কাগজপত্র ব্যবস্থাপনায় উভয় ভাষা বলতে পারে এমন সন্তান অথবা প্রতিবেশীদের ওপর নির্ভর করেন।
নগর কর্তৃপক্ষের একটি কৌশল অনুযায়ী, টরন্টো ধারণা করছে যে, ২০১৬ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠদের সংখ্যা দ্বিগুণ হবে যে সময় তাদের সংখ্যা হবে আট লাখ ২৮ হাজার এবং তারা হবেন নগরীর মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ।
সামাজিক সংগঠন নেইবারহুড গ্রুপের ইন্ডিপেন্ডেন্ট লিভিং অ্যান্ড সিনিয়রস-এর প্রেসিডেন্ট ভেরোনিকা ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ইংরেজি ছাড়াও অন্য ভাষা জানা সহায়তাকর্মীরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, “ব্যক্তিগত সহায়তাকর্মীদের একটি দল আছে… যারা সচেতন যে, তারা যদি নির্দিষ্ট দিনে অমুক অমুক ব্যক্তিকে দেখতে না যান তাহলে চলুন আমরা তাদের দেখে আসি।”
শেপার্ড বলেন, তার দলটি স্টাফ ও নিবাসীদের একসঙ্গে ঘরোয়া পরিবেশে সময় কাটানোর মাধ্যমে উভয়ের মধ্যে জোরালো যোগাযোগ সৃষ্টির উপায় খুঁজে দেখছে।
তিনি বলেন, “এটি সামাজিক বোধ সৃষ্টি এবং ভবনের ভেতরে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা ও উন্নত মানের জীবন গড়ে তুলতে সত্যিকারের সহায়ক হতে পারে।” -সূত্র : সিবিসি নিউজ