মনের আয়নাতে

সাইদুল হোসেন

প্রেম-ভালবাসা ও বিয়ে

অফিসের এক সহকর্মিণী আমার ডেস্কের সামনে দিয়ে সকাল ১১টার কফি-ব্রেকে যাওয়ার পথে হাত উঠিয়ে বললো : হাই সাইদ, হাউ আর ইউ?

ওর মুখের দিকে তাকালাম, দেখলাম বরাবরকারের মত উজ্জ¦ল হাসিটা মুখে নেই। বললাম : ভালই আছি, ধন্যবাদ। কিন্তু তোমার সুন্দর মুখটা আজ এত মেঘাচ্ছন্ন কেন? কি হয়েছে?

জবাবে অতি সহজ কন্ঠে সে বললো : When you are married you can’t expect a rose everyday.

তারপর ‘সী ইউ লেটার’ বলে কফি শপের দিকে হাঁটা দিল।

ঘটনাটা আমার অতীতের অন্য একটা ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দিল। সেদিনও ঠিক একই কথার পুনরাবৃত্তি শুনেছিলাম অন্য এক সহকর্মিণীর মুখে। দুই সন্তানের মা। প্রেম-ভালবাসা-বিয়ে নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে সে আমাকে বলেছিল : Forget about the days of romance and courtship. Once you are married, you dont’t get a rose everyday.

রাজা ও রাণীর গল্প

পাঞ্জাবী শিখ যুবতী, বয়স ৩০ বছর। ওর সঙ্গে আমার পরিচয় আরো বছর চারেক আগে যখন ওর বয়স ছিল ২৬। একটা পোস্টাল আউটলেটে কাজ করত তখন, তাই মাঝে মাঝে দেখা সাক্ষাৎ হতো। মিশুক প্রকৃতির মেয়ে, আমাকে বেশ শ্রদ্ধা করত। নিজের জীবনের কথাও বলত কখনো কখনো। নাম রাণী। একদিন হাসতে হাসতে জানতে চাইলাম : রাণীজী, আপকি রাজাজী কাঁহা হ্যায়? (রাণী, তোমার রাজা কোথায়?) বলল : এক ফিয়ান্সে আছে বটে কিন্তু এখনো বিয়েশাদী হয়নি তাই পুরোপুরি রাজাজী বনতে পারেনি দুনিয়ার চোখে তবে হৃদয়ের রাজা তো বটেই। জিজ্ঞেস করলাম : বিয়েটা সেরে ফেলছ না কেন? বলল : মা -বাবার পছন্দ নয় এই সম্পর্ক, তাঁরা নিজের পছন্দমত ছেলের তালাশে আছেন। আমি তাঁদের বলেছি যে আমার চাকরী আছে, কোয়ালিফিকেশন আছে, আমার ফিয়ান্সেও শিক্ষিত এবং ভাল কাজ করে, আমাদের টাকাপয়সার অভাব নেই, আমরা বিয়ে করতে চাই, তোমাদের সেজন্য এক পয়সাও খরচ করতে হবে না। আমরা দু’জন শুধু তোমাদের আশীর্বাদটুকু চাই। কিন্তু মা-বাবা নারাজ, তাঁদের পছন্দমত ছেলে না পাওয়া পর্যন্ত আমাকে অপেক্ষা করতে বলেছেন। মা-বাবা তো ভগবান সমান, তাঁদের মনে কষ্ট দিতেও মন চায় না, ওদিকে আমাদের যৌবন বৃথা যাচ্ছে দু’জনেরই। সে-ই বা আমার জন্য আর কতদিন বসে থাকবে?

তারপর একদিন খবর পেলাম রাণী পোস্ট অফিসের কাজটা ছেড়ে দিয়ে অন্য কোথাও কাজ নিয়েছে।

আবার যখন দেখা হলো তখন একে একে চারটি বছর চলে গেছে, রাণীর বয়স তখন ৩০ বছর। সেদিন দেখা হলো এক সুপারমার্কেটের এন্ট্রেন্সে। সঙ্গে দুই বুড়োবুড়ি ও একট ছোট বাচ্চা। বললাম : রাণীজী, তোমাকে আজকাল আর দেখতে পাই না। কেমন আছ?

মলিন হেসে বলল : সো-সো, এই আছি একরকম। তারপর বুড়োবুড়ির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল, বলল : পিতাজী-মাতাজী। নমস্তে, সশ্রীকাল বলে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করলাম তাঁদের। জানতে চাইলাম : কেমন আছেন? বললেন : গুরুজীকা কৃপা, ঠিক হুঁ।

এক ফাঁকে রাণীকে জিজ্ঞাসা করলাম : তোমার রাজাজীর কি খবর? সন্ত্রস্ত হয়ে গলা নামিয়ে বলল : এই প্রশ্ন এঁদের সমানে করবেন না, প্লিজ। নো রাজাজী yet. মা-বাবার অভিমতের কোন পরিবর্তন হয়নি আজো। বলে দিয়েছেন আমাকে তাঁদের পছন্দসই লাড়কা না মিলা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সাফ বলে দিয়েছেন যে যদি তাঁদের পছন্দের বাইরে কিছু করি তহলে জানকা খৎরা অ-যা সাকতি হ্যায়, অর্থাৎ আমার প্রাণের আশঙ্কা দিখা দিতে পারে। কাজেই আগের মতই চুপ করে আছি এখনো। বলেই ‘বা-ই’ বলে কেটে পড়ল।

ভালবাসা কারে কয়?

আমার বয়স যখন দশ বছর তখন জ্ঞাতিশত্রুরা আমার বাবাকে হত্যা করে। প্রাণের ভয়ে আমার মা, বড় তিন ভাই ও আমি বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যাই। ছন্নছাড়া জীবন। কিছুদিন পর অসুখে ভুগে বিনা চিকিৎসায় মা মারা যায়, আমরা ভাইয়েরা মা’কে কোনই সাহায্য করতে পারিনি। তারপর আমরা এক অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি, অবস্থার গতিকে কেউ কারো দিকে তাকানোর পরিস্থিতি ছিল না আমাদের। আমি ঠিকানাবিহীন হয়ে ভেসে বেড়াতে লাগলাম এই শহর থেকে ঐ শহরে। থাকার জায়গা নেই, খাবার নেই, স্কুলে পড়াশোনা ছড়তে হলো। পরের জমির ফসল ও গাছের ফল চুরি করে খেয়ে এখানে-সেখানে রাত কাটিয়ে অমানুষিক কষ্টে বড় হতে লাগলাম। রাখালের কাজ করে, মোট বয়ে, রাস্তা ঝাড়ু দিয়ে দিন কাটতে লাগল।

মাথাটা ভাল ছিল, যা দেখি-শুনি চট করে শিখে ফেলি। সুযোগ পেয়ে কিছু টেকনিক্যাল কাজ শিখে ফেলাম তবে বিনা বেতনে, থাকা-খাওয়ার বিনিময়ে, তবুও আমি খুশী।  মাথায়ও বেড়ে গেলাম বেশ, দেখতেও সুপুরুষ। যৌবনের শুরুতেই নারীদের দৃষ্টিতে পড়ে গেলাম, যদিও আর্থিক অনটন আমার নিত্যসঙ্গী। ওদেরই একজনের আর্থিক সাহায্যে বহু কষ্টে কানাডায় পাড়ি জমালাম। বড় ভালোবেসেছিল সে আমাকে, তাই আমাকে সাহায্য করলো যদিও সে ছিল আমারই মত অসহায়। দেহ বিক্রির পয়াসা দিয়ে আমাকে সে কানাডায় পাঠিয়ে দিল, সব ব্যবস্থা সে-ই করে দিল ওর বাঁধাধরা কস্টমারদের কাছে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে বিক্রি করে দিয়ে। আমি তার প্রতিদান কি করে দেব জানি না। 

এখানে আমি বহু চেষ্টার পর পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হয়েছি, ছোটখাট একটা টেকনিক্যাল কাজও করে যাচ্ছি, দু’মুঠো খাবার জুটাতে পারছি, একটা ভবিষ্যতও আছে। কিন্তু মনে বড় জ্বালা, বড় অশান্তি। জীবনটা অর্থহীন, শেকড়হীন, বন্ধনহীন। বেঁচে আছি বটে কিন্তু আমি কি মানুষ? আমি অতি স্বার্থপরের মত ওর টাকাগুলো নিয়ে নিজের মুক্তির দুয়ার খুলছি অথচ ওকে রেখে এসছি নরকে দমবন্ধ হয়ে পচে মরতে। আমি কি মানুষ?

উপরের কথাগুলো এক পেশেন্ট আমাকে বলেছিল হাসপাতালের ফ্র্যাকচার ক্লিনিকে আমার ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে ডাক্তারের কল এর অপেক্ষা করতে করতে। এবং আরো বলেছিল যে আবার যেদিন ক্লিনিকে আসবে সেদিন ওর জীবনের অরো কিছু কথা আমাকে শুনিয়ে যাবে। মনের অস্থিরতাটা, অপরাধ-বোধটা দূর করে মনের ভারটা হাল্কা করতে চায় সে সব কথা বলে আমার কাছে যদিও আমি তার সম্পূর্ণ অপরিচিত।

সেলফোন

বর্তমানে কমিউনিকেশন মিডিয়াতে ইন্টারনেট যেমন অপরিহার্য, হাতের মুষ্টিতে আবদ্ধ ক্ষুদ্রাকৃতি সেলফোনটিও তেমনি অপরিহার্য, অন্ততঃ সেই পর্যায়েই নিয়ে গেছে সেটাকে জনগণ পৃথিবীর দেশে দেশে। ইনফর্মেশন টেকনোলজিতে উন্নত দেশগুলোতে তো বটেই, এমনকি অনুন্নত, দরিদ্র দেশ বাংলাদেশেও ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবার হাতে একটি করে সেলফোন দেখা যায় যার স্থানীয় নাম ‘মোবাইল ফোন’, সংক্ষেপে ‘মোবাইল’। বড়রা তো বটেই, কচি কচি ছেলেমেয়েদের হাতেও নানা আকৃতির আর  নানা রংয়ের একটি করে সেলফোন শোভা পাচ্ছে এই শহর টরন্টোতে, এবং তাতে অনবরত ননস্টপ কথা বলে যাচ্ছে ওরা। স্থানকাল পরিবেশের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে ছোটবড় সবাই আপন মনের কথা বলে যাচ্ছে, প্রকাশ হয়ে পড়ছে অনেক গোপন তথ্য যা ইচ্ছা না থাকলেও শুনতে হচ্ছে অন্যদেরও। টিন-এজ কালচারের একটা বড় স্বাক্ষরই হচ্ছে ওদের হাতে হাতে সেলফোন। ২৩ ডিসেম্বর ২০০৭ এর সানডে সান পত্রিকার এক রিপোর্ট অনুসারে কানাডার সেই সময়কার জনসংখ্যা ৩৩ মিলিয়ন, জনগণের হাতে  সেলফোনের সংখ্যা ১৯ মিলিয়ন। (পৃষ্ঠা৫২)।

টিন-এজ কালচারের একটা বড় স্বাক্ষরই হচ্ছে ওদের হাতে হাতে সেলফোন। ছবি: কুপনরাজা

(এক)

বাসে করে সাবওয়ে স্টেশনে যাচ্ছি এমন সময় আমার সম্মুখে বসা লোকটি তার পকেট থেকে সেলফোনটি টেনে বের করে কানে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপর পক্ষের কথা শোনার পর বলল : তোমাকে সে রাতে পার্টির শুরুতেই বলেছিলাম যে ঐ লোকটা একটা ‘হোমো. গে এ্যান্ড পারভার্ট’, ওর সঙ্গে তোমার মত ইয়ং লেডির মেলামেশা করাটা মেটেই বাঞ্ছনীয় নয়, মনে আছে?

এবং তুমি যদি ভুলে গিয়ে না থাক, আমি আরো বলেছিলাম যে ওর অগাধ অর্থের সোর্সটা লিগ্যাল নয়, সেই অর্থের জেরে সে বেশ কটা মেয়েকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে সর্বনাশ করে ছেড়েছে, দে আর অল্ জাঙ্কিজ্ নাও। হি ইজ এ ডেভিল। আমার ওয়ার্নিং সত্ত্বেও তুমি কি বুঝে ওর সঙ্গে মায়ামী গেলে সেটা আমার বুঝতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। শোন, যা করেছ করেছ, ফান এ্যান্ড প্লেজারের লোভ ছাড়, ঐ ডেভিলের পাল্লায় আর পড়ো না। সে তোমার সর্বনাশ ঘটিয়ে অবশেষে তোমাকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে দেবে, ফিরেও তাকাবে না। তুমি সব হারাবে। থিঙ্ক হোয়াট আই জাস্ট সেড্ এ্যান্ড সেভ্ ইয়োরসেল্ফ ফ্রম দ্য ডিজাস্টার, ওকে? এই বলে ফোনটা অফ্ করে নিজের পকেটে রেখে দিল।

(দুই)

অন্যদিন। কোন এক স্যোশাল অ্যাসিস্টেন্স এজেন্সীতে গিয়েছিলাম একটা প্রয়োজনে, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছিল ওদের রিসেপশন রুমে। তখন কানে এলো আমার পাশে টেবিলে বসা এক মহিলা তার সেলফোনে কাকে যেন বলছে : She is enjoying her newly found freedom by spending her divorce money on guys she takes fancy on!

(তিন)

আরো একদিন। বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলাম। এমন সময় এক মহিলা তার সেলফোনে কথা বলতে বলতে আমার সামনে দিয়ে হেঁটে চলে গেল। মহিলার কথার যে অংশটি আমার কানে স্পষ্টভাবে ধরা পড়ল সেটা ছিল : She is like a bitch on heat! She always runs after guys. No wonder she is in serious trouble.

(চার)

আমি একজন লেখক, আমার কিছু প্রকাশিত বই আছে। নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেই, সঙ্গে কিছু বই নিয়ে যাই, সেখানে ওগুলো বিক্রি করার চেষ্টা করি। তেমনি চেষ্টার একটি হলো প্রতিটি সামারে টরন্টো শহরে বাংলাদেশীদের আয়োজিত পিকনিক। আনন্দময় পরিবেশ। লোকজনের সঙ্গে পরিচয় হয়, ফ্রী লাঞ্চ খাই, নাচগান দেখি-শুনি, এরই ফাঁকে ফাঁকে কিছু বইও বিক্রি হয়, কিছু ডলার পকেটে নিয়ে খুশী মনে ঘরে ফিরি। তেমনি এক পিকনিকের মাঠে বড় একটা গাছের তলায় একটা প্লাস্টিক শীট বিছিয়ে আমার বইগুলো ছড়িয়ে দিয়ে একটা চেয়ারে বসে পিকনিকে শতদল নারীপুরুষ ও শিশুদের আসাযাওয়া দেখছিলাম। এমন সময় কানে এল গাছটির অপর দিক থেকে এক ভদ্রলোকের সেলফোনে আলাপের একতরফা কিছু কথা। বোঝা গেল তিনি কোন এক মহিলার সঙ্গে কথা বলছেন।

‘দেখ লায়লী (ছদ্ম নাম) এইসব সস্তা প্রেম ছাড়। একজন বিবাহিত লোকের সঙ্গে প্রেম করার মাঝে না আছে কোন নূতনত্ব, না আছে কোন বাহাদুরী। এটা একটা নিছক নির্বুদ্ধিতা। তুমি কি তার সেকেন্ড ওয়াইফ হতে চাও? না কি সে তার বর্তমান ওয়াইফকে তালাক দিবে? আমার দৃষ্টিতে তো এর কোনটাই গ্রহণযোগ্য নয়। এক বিবাহিত মহিলাকে ঘরছাড়া, স্বামীহারা করার মতো এত নীচ মানসিকতা কেন তোমার? লোকটা তো স্বার্থপর হীন চরিত্র, ভবিষ্যতে তোমাকে ছেড়ে সে অন্য কোন মেয়ের পিছনে ছুটবে না তার কোন গ্যারান্টি আছে কি? ছিঃ! ওসব ছাড়।

তুমি শিক্ষিতা, সুন্দরী, তোমার বয়স আছে, মোটামুটি একটা চাকরিও করছ। তোমার উচিৎ নতুন একজন unencumbered শিক্ষিত, মার্জিত লোককে বেছে নিয়ে বিয়ে করে নূতন ঘরসংসার শুরু করা, তাতে তোমার সুখী হওয়ার চান্স অনেক বেশী। নিজের উপর কনফিডেন্স হারিও না।

(পাঁচ)

মেয়ের বয়স ১৭ বছর, স্কুলে গ্রেড টুয়েল্ভ- এর ছাত্রী। মা-বাবা দুু’জনেই ভাল কাজ করেন, সচ্ছল পরিবার, নিজেদের বাড়ি-গাড়ি আছে, আর্থিক কোন সমস্যা নেই। তিন সন্তানের মাঝে মেয়েটাই বড় এবং খুব আদরের সন্তান। ফার্স্ট জেনারেশন ইমিগ্র্যান্টস ইন কানাডা। তবে কালচারাল ক্ল্যাশের শিকার সেই পরিবার। মেয়েটি বিদ্রোহী স্বভাবের, নিজের ধর্ম বা সামাজিক রীতিনীতি তার খুব অপছন্দ, অনেক রাত পর্যন্ত ঘরের বাইরে ফ্রেন্ডসদের সঙ্গে আড্ডা মারবে (এদেশীয় ভাষায় hanging out with friends) কিন্তু কোন আপত্তি করা চলবে না। সেলফোন অবশ্যই চাই তবে সেটা বেশ দামী হতে হবে, সস্তাটা চলবে না। পরপর দু’টি সেলফোন হারিয়েছে, আরো একটা চাই, এক্ষুণি চাই, বন্ধুদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে, I am going crazy. মা-বাবার বক্তব্য, তুমি বারবার হারাবে আর আমরা কিনে দিতে থাকব এটা তো হতে পারে না। তোমাকে দায়িত্বশীল হতে হবে।

ওসব বুঝি না, আমার সেলফোন চাই। না হলে আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাব। সেল ফোন কিনে দেয়ার এবং আমাকে শেল্টার দেয়ার মত বন্ধুর অভাব নেই!

ভাবুন একবার মা-বাবার সমস্যাটা কত বেদনাদায়ক।

(ছয়)

টরন্টোর City TV’র Channel 24- এর অক্টোবর ৩০, ২০০৬ এর সকালের (৮টা ১৫ মিনিটের) এক খবর অনুসারে রাশিয়াতে তখন মিলিওনেয়ারের সংখ্যা ৮৮,০০০।

টরন্টো থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক MACLEAN’S পত্রিকায় ছবিসহ খবর বেরিয়েছিল যে রাশিয়ার মস্কো শহরে সুপার রীচ (super rich)-দের জন্য Millionaires Club আছে যেখানে সেইসব অতিশয় ধনবানরা প্রতিদিন মিলিত হয়ে গল্পগুজব করেন, নানাধরনের এন্টারটেনমেন্টে নিয়োজিত থাকেন এবং সেখানে তাদের জন্য অবিশ্বাস্য রকম দামী ওয়াইন, জুয়েলারী ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রির  boutique-ও রয়েছে। সেখানে সোনার নির্মিত হীরা-মনিমুক্তা-খচিত সেলফোনও পাওয়া যায় যার প্রতিটির মূল্য এক লাখ ডলার!

Guns are murder weapons

২০০৫ সনে টরন্টো শহরে murders because of gun violence আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। বহু লোক খুন হয়েছিল, পুলিশ শহরের বিভিন্ন এলাকায় raid চালিয়ে বহু ক্রিমিনালকে গ্রেফতার করেছিল, বহু মারণাস্ত্রও উদ্ধার করেছিল। সে-সব দৃশ্য টিভি-তে বারবার দেখানোও হয়েছিল।

এসব দেখতে দেখতে শুনতে শুনতে পাঁচ বছর বয়সের একটি ছেলে নিতান্তই বিরক্ত হয়ে পুলিশের হাতে তার দুটি toy gun তুলে দিল এই বলে যে There is too much gun violence and killings on the streets. Guns are killers. I am surrendering these guns to you because I don’t want to play with murder weapons anymore!

আমি সেদিন (সেপ্টেম্বর ১৮, ২০০৫) টিভি’র সামনে বসে পুলিশের হাতে ওর toy guns তুলে দেয়া এবং উপরোক্ত মন্তব্য নিজেই প্রত্যক্ষ করেছি।

আমার স্ত্রী কোথায় গেল?

একদিন এক কালো যুবক আমার ডেস্কে এসে আমাকে বলল যে আজ সকালে ওর স্ত্রী হাসপাতালে অ্যাডমিশন নিতে এসেছে। জানতে চাইল কোথায় গেলে সে তার দেখা পাবে?

বলাম : তোমার স্ত্রীর নামটা বলো। সে নামটা বললো। আমি আমার পেশেন্ট লিস্টে সেই নামটা খুঁজে না পেয়ে ওকে রেজিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্টে নিয়ে গেলাম। সেক্রেটারী মহিলা তার কম্পিউটারে চেক করে সেই নাম পেলো না। বললাম : অ্যাডমিশন তো আরো বহু জায়গায় হয় রোগীদের। কোন ডিপার্টমেন্টে অথবা কোন রোগের চিকিৎসার জন্য সে এসেছে সেটা না বলতে পারলে তার দেখা তুমি পাবে না। ভাল করে মনে করে দেখ কোথায় যাবে বলে এসেছে তোমাকে। অথবা অন্য কোন হাসপাতালে নয় তো?

শুনে যুবক বলল : আমার কিচ্ছু মনে নেই। শুধু বলেছে হাসপাতালে যাচ্ছি। তোমাদের এটাই আমার বাসার সবচেয়ে কাছের হাসপাতাল। তাই তোমাদের এখানে এসেছি।

বললাম : দুঃখিত, তোমাকে কোন সাহায্য করতে পারছি না।

যুবক তখন কাঁদো কাঁদো মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল : তাহলে আমার স্ত্রী গেল কোথায়?

আগের মতই আবার বললাম : সেটা আমি বলতে পারছি না, দুঃখিত। (চলবে)

সাইদুল হোসেন।

মিসিসাগা