ডাক্তারের ঘাটতিতে পর্যুদস্ত কানাডায় স্বাস্থ্যকর্মী অভিবাসন জোরদারের ঘোষণা

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কেন্দ্রীয় সরকার গত ২৮ জুন ২০২৩ ঘোষণা করেছে যে, তারা স্বাস্থ্যসেবাকর্মীর ঘাটতি পূরণে কানাডার অভিবাসন কর্মসূচি কাজে লাগাবে। কানাডা স্বাস্থ্যসেবা খাতে পারিবারিক চিকিৎসকের মত কিছু পেশাজীবী কর্মীর মারাত্মক ঘাটতিতে রয়েছে। খবর জন পল তাস্কের  – সিবিসি নিউজ।

নোভা স্কশিয়ার বেডফোর্ডে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় অভিবাসন মন্ত্রী সিন ফ্রেসার ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইভেস ডুক্লোস অর্থনৈতিক অভিবাসন কর্মসূচিতে স্বাস্থ্য খাতের পেশাজীবীদের জন্য নির্দিষ্ট একটি নতুন “এক্সপ্রেস এন্ট্রি” কর্মসূচি উন্মোচন করেন।

টরন্টোতে কোভিড-১৯ মহামারির সময় হাম্বার রিভার হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রোগীদের ওয়ার্ড পরিদর্শন করছেন ডা. সঞ্জয় মানোচা, বাঁয়ে। কানাডা ডাক্তারের ঘাটতিতে হিমশিম খাচ্ছে। (নাথান ডেনেট/কানাডিয়ান প্রেস)

তারা বলেন, খুব শিগগিরই ৫০০ বিদেশি স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে চিঠি পাঠানো হবে যাতে তাদেরকে কানাডায় পারমানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য আবেদন করার আমন্ত্রণ জানানো হবে।

পরের সপ্তাহে আরও ১৫০০ কর্মীকে একই আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেয়া হবে- ব্যাপক জনপ্রিয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে এমন একটি কর্মসূচির এটি হলো টলমলো সূচনা।

আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হবে বিদেশি চিকিৎসক, নার্স, ডেন্টিস্ট, ফার্মাসিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট এবং চক্ষু বিশেষজ্ঞদের। স্বাস্থ্যপ্রযত্ন খাতে বিদ্যমান সঙ্কট তথা কর্মচারীর ঘাটতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগের অংশ হিসাবে এসব আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।

পরিস্থিতি সত্যি ভয়াবহ। এঙ্গুস রেইডের গবেষণার তথ্যমতে, প্রায় ৬০ লাখের মত কানাডীয়র পারিবারিক চিকিৎসক নেই। এছাড়া বিশেষজ্ঞেরও অভাব আছে।

চিকিৎসকের ঘাটতি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আরও গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের উপাত্ত বলছে, ২০২৮ সালের মধ্যে কানাডায় প্রায় ৪৪.০০০ ডাক্তারের ঘাটতি দেখা দেবে, যার মধ্যে ৩০ হাজারের বেশি হবে ফ্যামিলি ডক্টর ও জেনারেল প্র্যাক্টিশনারের ঘাটতি।

ফ্রেসার বলেন, “কানাডাজুড়ে জনগণকে বিশ^মানের সেবা দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য খাতের পেশাজীবীরা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন, কিন্তু এটি কোনও গোপন বিষয় নয় যে, কানাডার জনগণ যে মানসম্মত সেবা পাবার অধিকার রাখেন তা দিতে হলে স্বাস্থ্য খাতে আরও কর্মীর দরকার আছে।”

ডুক্লোস বলেন, “শ্রমিক ঘাটতি স্বাস্থ্যখাতের চেয়ে অন্য কোনও খাতেই এত বেশি মারাত্মক নয়।”

“আজকের ঘোষণা পারমানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য আবেদনের সুযোগ সৃষ্টি করবে, এটি দ্রুততর করবে এবং জোয়ার সৃষ্টি করবে, যা কানাডায় আরও যোগ্যতাসম্পন্ন পেশাজীবীদের নিয়ে আসার মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে জনশক্তি নিয়োগের উদ্যোগ জোরদারে সহায়ক হবে।

ফ্রেসার বলেন, ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে কানাডা প্রায় ২১ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী গ্রহণ করেছে, যা বছরে ছিল চার হাজারের মত।

তিনি বলেন, এখন নতুন লক্ষমাত্রা হলো প্রতি বছর প্রায় ৮,০০০ নতুন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়ে আসা।

ফ্রেসার বলেন, “এটি এক বড় পরিবর্তন, আমরা আরও বেশি কিছু করতে পারি এবং নতুন উপায় ব্যবহার করে আমরা সেটা করতে যাচ্ছি। বহু পরিবারের কাছে স্বাস্থ্যসেবা হলো সর্বপ্রথম চিন্তার বিষয়।”

সরকার যদিও আরও বেশি সংখ্যক অভিবাসী স্বাস্থ্যসেবাকর্মী আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবু স্বাস্থ্য ব্যবস্থার স্বাস্থ্যহানির এটি পুরোপুরি নিরাময় নয়।

বুধবারের ঘোষণায় বিদেশি সনদের (ক্রেডেনশিয়াল) স্বীকৃতির মত চলমান ইস্যু নিরসনের কোনও কথা নেই। এটি এমন একটি ইস্যু অটোয়া যার সমাধারের অঙ্গীকার করেছে প্রদেশ ও টেরিটোরিগুলির এখতিয়ারের আওতায়।

মেডিক্যাল লাইসেন্স দেয়া কঠোরভাবে প্রদেশগুলির দায়িত্ব। তবে কেন্দ্রীয় সরকার অধিকতর জটিল এই প্রক্রিয়াটি প্রবহমান করার কাজে সহায়তার জন্য আরও অর্থ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বিদেশে শিক্ষা নেয়া ডাক্তাররা কানাডায় অভিবাসী হয়ে আসতে পারেন কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তারা আসলে তাদের পেশায় কাজ করতে পারবেন।

সিবিসি নিউজ যেমনটা রিপোর্ট করেছিল যে, কানাডায় জন্ম নেয়া ডাক্তার যারা বিদেশে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন তারাও ডাক্তারি প্র্যাক্টিস করার জন্য নিজ দেশে ফিরে আসতে পারছেন না। কারণ, সেই লালফিতার দৌরাত্ম্য, যা কানাডার মেডিক্যাল স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ না করা ডাক্তারদের লাইসেন্স পাওয়া কঠিন করে তোলে।

মেডিক্যাল রেসিডেন্সি প্রোগ্রামটি পৃথকভাবে সাজানো হয়েছে, যা অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড বা যুক্তরাজ্যের মত দেশের স্কুলে শিক্ষা গ্রহণকারী কানাডীয় ডাক্তারদের স্বদেশে লাইসেন্স পাওয়া কঠিন করে তোলে এবং এ জন্যে তাদেরকে প্রারম্ভিক স্তরের কোনও কাজে যোগ দিতে হয়।

বিদেশে শিক্ষা নেয়া ডাক্তারদের কানাডায় প্র্যাক্টিস করতে হলে তাকে অবশ্যই কোনও স্বীকৃত মেডিক্যাল স্কুল থেকে ডিগ্রি নিতে হবে, নিজের শাখায় স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণ  (রেসিডেন্সি) নিতে হবে, পরীক্ষা দিয়ে কানাডার মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে “লাইসেন্স” পেতে হবে এবং আবার পরীক্ষা দিয়ে রয়েল কলেজ অব

ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জনস অব কানাডা (RCPSC) অথবা

কলেজ অব ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান্স অব কানাডার (CFPC) যে কোনওটি থেকে সনদ পেতে হবে।

এর পরই প্রাদেশিক অথবা টেরিটোরির সংশ্লিষ্ট কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জনস সিদ্ধান্ত দেবে, কোনও প্রার্থীকে লাইসেন্স দেয়া হবে কিনা।

এটি কয়েক বছল ধরে চলা এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল পেশাজীবীদের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

ডুক্লোস বলেন, “শ্রমশক্তি নিয়ে পরিকল্পনা, তা ধরে রাখা এবং বিদেশি সনদের স্বীকৃতির বিষয়টি সহজ করার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্কট সমাধানে আমরা প্রদেশ, টেরিটোরি এবং অংশভাগীদের সঙ্গে কাজ করছি যাতে করে কানাডায় নবাগত স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের দক্ষতা ও বিশেষজ্ঞ জ্ঞান দ্রুত প্রয়োগ করতে পারেন।”