বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দধারা

টরন্টো সংস্কৃতি সংসদ এর বর্ণিল বার্ষিক উৎসব সমাপ্ত

আহমেদ হোসেন: রাত তখন মধ্যভাগে পেরিয়ে অন্যদিনের প্রথম ভাগে। বার তখন শনি ছাড়িয়ে রবিতে। তখনো মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করছেন শোভন গাঙ্গুলী। গলায় তার ” ওম শান্তি ওম শান্তি ” উপনিষৎ থেকে স্তোত্র।

করতালির মধ্যে যবনিকাপাত হয় টরন্টো সংস্কৃতি সংসদ এর বার্ষিক উৎসব ২০২২। টরন্টোস্থ ১৯০ রেলসাইড রোডে অবস্থিত টরন্টো প্যাভিলিয়নের বিশাল মঞ্চে গত ১৬ জুলাই ২০২২, বিকেল ৫ টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে ভরপুর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ফি-বছরের এই অনুষ্ঠান গত দুইবছর করোনার মহামারি কারণে বাধ্য হয়ে ভার্চুয়াল করতে হয়েছে। মুখোমুখি বসার, অনুষ্ঠান উপভোগ করার আনন্দ তো আর ইন্দ্রজালে হয় না। হয় না ভার্চুয়ালি। তাই আবার মঞ্চে ফিরে আসা।

এসময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী শোভন। সব ধরনের গানে সে পারদর্শী। আধুনিক গান, হিন্দি বাংলা সব গান করে মঞ্চ মাতিয়ে রাখবার অপূর্ব গায়কী শক্তি আছে শোভনের। বৃহত্তর টরন্টোর দর্শকশ্রোতার মন জয় করলো শোভন গাঙ্গুলী।



এবছর টরন্টো সংস্কৃতি সংসদ এর  এই অনুষ্ঠানে সব বয়সী শ্রোতার পছন্দের প্রিয় শিল্পী ছিলেন জয়তী চক্রবর্তী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান যেমন অসাধারণ করেন তিনি তেমনি করেন লালন, লোকগীতি, ভক্তিমূলক এবং আধুনিক গান। এক ঘন্টার বেশি সময় ধরে বিভিন্ন মেজাজের গান করে দর্শকশ্রোতাদের তিনি মুগ্ধ করেন।

এই বছর শিশু কিশোরদের দল ওয়ান্ডারকিডস মিউজিক গ্রুপের পরিবেশনা -কয়্যার ছিলো মনোমুগ্ধকর। কৃষ্ণকলি সেনগুপ্ত যথারীতি মেধা প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন তার নির্দেশনায় বৃহত্তর টরন্টোর ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই আলেখ্য অনুষ্ঠানেটিতে। ফিবছর তিনি সুন্দর সব অনুষ্ঠান উপহার দেন তিনি।

ঐকতান এবং টিবিডিজি যৌথভাবে উপস্থাপন করে মোহনবাঁশির রবীন্দ্রনাথ। কাব্যনৃত্যসঙ্গীত নিয়ে এই অনুষ্ঠানের নৃত্য শিল্পীদের বাহবা দিতেই হয়। অসাধারণ ছিলো তাদের পরিবেশনা।

“এই আসরে ইমন তুমি ” – ইমন রাগ এবং এই রাগাশ্রিত হিন্দি, বাংলা, রবীন্দ্র সঙ্গীত নিয়ে অনির্বান বিশ্বাস পরিচালনায় অনুষ্ঠানাটি মধ্যে ভিন্ন কাজের মেজাজ এবং চমৎকারিত্ব পাওয়া গেছে।



পঙ্কজ মিশ্র এবং তার সঙ্গী তিন তারকার যন্ত্র সঙ্গীত ” সুর সংগম” দর্শক শ্রোতাদের অভিনন্দন এবং অকুণ্ঠ ভালবাসা কুঁড়িয়েছে। পঙ্কজ নিজে তুখোড় সারেঙ্গী কালাকার। সাথে ছিলেন প্রখ্যাত তবলা এবং পারকাশন বাজিয়ে তানজির আলম রাজীব। স্যাক্সোফোনে ছিলেন আন্দ্রে কে এবং সন্তুর বাজিয়েছেন হার্দিয়াল সিং। অসম্ভব সুন্দর একটি অনুষ্ঠান। আর হবে না কেন। এই চার তারকা যে দীর্ঘদিন ধরে বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পীদের সাথে সুনামের সঙ্গে সংগত করে আসছেন। জয়তু জাদুকর বাজিয়েদের।

টরন্টো সংস্কৃতি সংসদ এর  অনুষ্ঠানে বক্তার পর বক্তা কখনোই থাকে না। তার ব্যত্যয় নেই এবছর। চলতি প্রেসিডেন্ট ধ্রুব ঘোষ সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন।


অনুষ্ঠানের পর্বের মাঝে মধ্যে পৃষ্ঠপোষকদের দর্শকশ্রোতাদের পরিচয় করে দেন উৎসবের পরিচালকবৃন্দ।

এবছর উপস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন শ্রীজিত চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন অনিন্দিতা , চয়ন দাস, দিলারা নাহার বাবু।


পুনশ্চ  : টরন্টো সংস্কৃতি সংসদ এর  সাথে আমার বন্ধন রাজকুমার দাদার হাত ধরে। প্রকৌশলী রাজকুমার বিশ্বাস তিনবার সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। দেখেছি তিনি কাজের কাজী। ফি-বছর দাদা জানতে চান- কী শ্লোগান দেব রে। পৌঁছে দেই রবীন্দ্রনাথ থেকে একটি দুটি লাইন। যেমন বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দধারা।
এদের প্রেসিডেন্ট বদল হওয়া আমাকে মুগ্ধ করে। অনেক সংগঠন দেখি একবার যাদের কেউ প্রেসিডেন্ট হন তবে আর ছাড়তে চায় না । বছর বছর তিনিই প্রেসিডেন্ট আর সে জেনারেল সেক্রেটারি। যেনবা তারা ছাড়া সংগঠন মৃত। অথচ টরন্টো সংস্কৃতি সংসদ  অন্যরকম। এই যে শান্তনু দা কয়েক বছর আগেও প্রেসিডেন্ট ছিলেন এখন ধ্রুব ঘোষ। এখন প্রিয় সৌরভ চ্যাটার্জী জেনারেল সেক্রেটারি।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে দীপক অধিকারী , ২০০৬ সালে কবি ব্যানার্জি আর ২০১১ অরুন চক্রবর্তী। ২০১৪/১৫/১৬ অরুন (রাজকুমার) বিশ্বাস , ২০১৭/১৮/১৯-এ শান্তনু চৌধুরী ছিলেন টরন্টো সংস্কৃতি সংসদ এর প্রেসিডেন্ট।

সকলের জন্যে শুভ কামনা।
জাগো প্রাতে আনন্দে, করো কর্ম আনন্দে।

চিত্রঋণ : বিদ্যুৎ সরকার