অন্টারিওর সৈকতে ডুবে মরতে বসা চারজনের প্রাণ বাঁচালেন এক লন্ডনবাসী

ব্রনসন ডিয়াগল, স্ত্রী নিকোল এবং মেয়ে আদালিয়া (৬) ও নোভালিকে (৩) নিয়ে শনিবার গ্রান্ড বেন্ড সাউথ বিচে গিয়েছিলেন। এসময় তিনি ডুবে মরতে বসা চার ব্যক্তিকে উদ্ধার করেন। ছবি: নিকোল ডিয়াগল

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ০৬ আগস্ট ২০২১: ব্রনসন ডিয়াগল গত সপ্তাহান্তে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে অন্টারিওর গ্রান্ড বেন্ড সাউথ সমুদ্র সৈকতের এক নির্জন জায়গায় যান তাদের শেষ ছুটির দিন উপভোগ করতে। এসময় দেখতে পান একটি অল্পবয়সী মেয়ে পানি থেকে বিপন্ন ভঙ্গিতে তার দিকে হাত নাড়ছে। প্রথমে তিনি আশেপাশে তাকিয়ে লাইফগার্ডদের খোঁজেন। এরপর নিজেই ছুটে যান মেয়েটির কী হয়েছে জানতে।
পরে লন্ডন অন্টারিও’র সিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমি দেখতে পাই, একজন নয়, চারজনের একটি পুরো পরিবারের সবাই একসঙ্গে ডুবে যাচ্ছে।’
ওই পরিবারের সদস্যরা পানিতে নেমে আনন্দ করছিলেন। এসময় একটি প্রচণ্ড ঢেউ এসে তাদেরকে ভারসাম্যহীন করে ফেলে। তারা আর সৈকতে ফিরে আসতে পারেনি।
ডিয়াগল বলেন, কাছে গিয়ে তিনি দেখতে পান একজন নারী পানিতে উপুড় হয়ে আছেন আর একজন পুরুষ ও দুটি শিশু ভেসে থাকার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘একসঙ্গে চারজন মানুষকে ডুবে মরতে দেখাটা ছিলো সত্যি মর্মান্তিক।’
অন্টারিওর লন্ডন শহরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দমকলকর্মী ডিয়াগল (৩৬) বলেন, তিনি সকৃতজ্ঞ এজন্য যে, পরিবারটিকে রক্ষার জন্য সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় তিনি হাজির ছিলেন।
ডিয়াগল দৌড়ে পানিতে নেমে যান এবং প্রথমে ছোট মেয়েটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। সে শ্বাস নিতে পারছিলো না। তিনি পুরুষ ব্যক্তিটি এবং আরেকটি ছেলে শিশুকে দেখতে পান। তারাও বাঁচার জন্য আপ্রাণ লড়ে যাচ্ছিলেন। তারা ছিলেন সম্পূর্ণ পোশাক পরা।
তিনজনকে সফলভাবে সৈকতে তুলে আনতে সক্ষম হবার পর, ডিয়াগল বলেন, পানিতে উপুড় হয়ে থাকা অচেতন নারীকে বাঁচানো ছিলো এক কঠিন লড়াই। জেট স্কিতে চড়া এক ব্যক্তি ঘটনাটি দেখতে পেয়ে মহিলাটিকে পানি থেকে উঠিয়ে আনার কাজে ডিয়াগলকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন।
ডিয়াগল বলেন, ‘আমি তখন স্রোতের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, ভাটার টানের সঙ্গে যুদ্ধ করছি। আমি জানি না, ওই স্রোত ও অমন ঢেউয়ের মধ্যে আমি কেমন করে তাদের কাছে পৌঁছেছিলাম।’

অন্টারিও লেকের সৈকতে চারজনের একটি পরিবারকে পানির ওপর ভেসে থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে দেখা যায়। এটি ঘটে ছবিতে লাল ক্রসচিহ্নিত জায়গায়। ঘটনার সামান্য আগে এই ছবি তোলা হয়। ছবি: নিকোল ডিয়াগল

তিনি বলেন, মহিলাটিকে সিপিআর (Cardiopulmonary resuscitation) দেয়ার সময় তার পাঁজরের হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় তিনি মহিলাটিকে তুলে বসান এবং তার পিঠে পাঁচবার আঘাত করেন। এর ফলে তার পেট থেকে পানি উগরে আসে এবং আবার শ্বাসপ্রশ্বাস শুরু হয়। এর খানিকটা পরেই প্যারামেডিকরা চলে আসে।
পরিবারটি ডিয়াগল-এর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে এবং তাদেরকে বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ জানায়।
সিবিসির পক্ষ থেকে ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার স্বার্থে তাদের পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান। তবে তারা ই-মেলে সাড়া দেন।
ই-মেলে তারা লিখেন, ‘আমরা এই শনিবার (৩১ জুলাই) সৈকতে গিয়েছিলাম পারিবারিক পিকনিকে। সেখানে পানিতে নেমে মজা করার সময় একটি বড় ঢেউ এলে আমরা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি। আমি, আমার বোন, ভগ্নিপতি ও তাদের সন্তানেরা প্রায় ডুবেই গিয়েছিলাম। ওই সময় ব্রনসন আমাদের দেখতে পান এবং আমাদের সাহায্য করেন।
‘আমি ও আমার বোন স্রোতের কাছে পরাস্ত হয়েছিলাম এবং জীবিত ফিরে আসার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমি তার (ব্রনসনের) সাহসিকতা, গতি ও শক্তিমত্তা দেখে বিস্মিত হয়েছি। তিনি আমাকে এবং আমার বোনকে পানি থেকে উঠিয়ে এনেছেন। তিনি যা করেছেন সেজন্যে যথাযোগ্য ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই।’
ডিয়াগল এখন সৈকতের কর্মীদের প্রতি অনুরোধ রেখেছেন যাতে জনগণকে তীব্র স্রোতের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়।
তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করতে পারি না যে, যেখানে সবার জানা এমন ভাটার টান আছে, সেখানে তারা সহজেই একটা রশি টানিয়ে কিছু বয়া ঝুলিয়ে দিয়ে একটি সাইনবোর্ড লাগাতে পারে যাতে বলা হবে, ‘এই জায়গাটি পেরিয়ে যাবেন না’ অথবা ‘ভাটার টান থেকে সাবধান’।” কিন্তু সেখানে কোনও সাইনবোর্ড বা সতর্কীকরণের ব্যবস্থা ছিলো না। -সূত্র : সারা জাবাখানজি / সিবিসি