কানাডায় প্রতারক মুভার কোম্পানীগুলোর দৌরাত্ম

আগস্ট ১৮, ২০১৯

খুরশিদ আলম

কানাডায় গ্রীষ্মকাল আসলেই প্রকৃতি জেগে উঠে তার পূর্ণমাত্রায়। আর এই সময়ে মানুষজনও যেন জেগে উঠেন হাইবারনেশন বা শীতযাপনতা থেকে। কিন্তু বছরের এই সময়টার স্থায়ীত্বকাল অবার সীমিত। ফলে শীতযাপনকালে যে কাজগুলো করা কঠিন বা কষ্টকর সে কাজগুলো এই গ্রীষ্মকালে করে নিতে চান সবাই।

বাড়ি বা বাসা বদল তেমনি একটি কাজ। আর এ কাজটি শ্রমসাধ্য এবং একই সাথে ঝামেলাপূর্ণ সন্দেহ নেই। কিন্তু তারপরও করতে হয়। করতে হয় নানান প্রয়োজনে। কেউ হয়তো বাড়ি কিনেছেন। তাই ভাড়া বাসা ছেড়ে নিজ বাড়িতে উঠবেন। আবার কেউ হয়তো চাকরীর সুবিধার কারণে কিংবা সন্তানদের স্কুলে যাওয়া আসার সুবিধার কারণে বাসা বদল করেন। এরকম আরো কিছু কারণ থাকে বাড়ি বা বাসা বদলের।

কিন্তু সেই বাসা বা বাড়ি বদলের কাজটি আবার কখনো কখনো চূড়ান্তরকমের পীড়াদায়কও হয়ে উঠে যদি কেউ কোন প্রতারক মুভারের খপ্পরে পড়েন। এবং দুর্ভাগ্যক্রমে এই প্রতারক মুভারের সংখ্যা কানাডায় কিন্তু কম নয়! এবং আরো দুর্ভাগ্যের কারণ হলো, পুলিশও অনেক ক্ষেত্রে এই প্রতারকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারে না আইনী জটিলতার কারণে! এই প্রতারকরা আবার কদিন পর পর তাদের মুভার কোম্পানীর নাম বদল করে নেন যখন অভিযোগের সংখ্যা বেড়ে যায়। নতুন কোম্পানীর নামে নতুন ভাবে তখন তারা আবার ঝাপিয়ে পড়েন প্রতারণার বাণিজ্যে।

টরন্টোতে এক বাঙ্গালী প্রতারকের কাহিনীটাও ছিল এরকম। তিনি কিছুদিন পর পরই নিজের মুভার কোম্পানীর নাম বদল করতেন। আর তিনি শুধু নিজেই যে প্রতারণা করতেন তা নয়, নিজের দুই ছেলেকেও এই প্রতারণার বাণিজ্যে ট্রেনিং দিয়ে মাঠে নামিয়েছিলেন!

 ‘দেশী মুভার’ নামে তাদের একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। টরন্টোর ‘বাংলা কাগজ’ পত্রিকায় ঐ প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনও ছাপা হতো। প্রায় এক দশক আগের ঘটনা এটি। ঐ সময় কত সংখ্যক বাংলাদেশী তাদের খপ্পরে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তার কোন হিসাব নেই। তবে বেশ কিছু ক্ষতিগ্রস্ত লোকের টেলিফোন এসেছিল পত্রিকা অফিসে। তাদের অভিযোগ ছিল এরকম একটি প্রতারক কোম্পানীর বিজ্ঞাপন কেন বাংলাদেশী পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে?

অবশ্য এই ‘দেশী মুভার’ এর নামে লোকজন পুলিশের কাছেও অভিযোগ করেছিলেন। পুলিশ তিন মাস তদন্ত চালিয়ে এক পর্যায়ে ‘দেশী মুভার’ গং এর অফিসে অভিযান চালায় এবং পিতা পুত্র তিনজনকেই গ্রেফতার করে। আটক করে তাদের ব্যবহৃত গাড়িও। তাদের বিরুদ্ধে ১৬০ টি প্রতারণার অভিযোগ ছিল।

পুলিশের তদন্ত শুরু হওয়ার বছরদুই আগে টরন্টো স্টার পত্রিকা এ বিষয়ে একটি অনুসন্ধান চালিয়েছিল। ঐ অনুসন্ধানে পত্রিকাটি জানতে পারে যে দেশী মুভারের বিরুদ্ধে ৩০ জনেরও বেশী ভুক্তভোগীর অভিযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য যে, এ বিষয়ে অনুসন্ধানকালে টরন্টো স্টার এর এক রিপোর্টারকে হুমকীও দিয়েছিল দেশী মুভার এর মালিকপক্ষ। হুমকী এসেছিল টরন্টোর বাংলাদেশী কমিউনিটির পত্রিকা ‘বাংলা কাগজ’ এর বিরুদ্ধেও যখন পত্রিকাটি দেশী মুভার এর বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয় এবং তাদের কুকীর্তির কথা পত্রিকায় তুলে ধরে। পুলিশ এই দেশী মুভার বিষয়ে একবার পাবলিং ওয়ার্নিং ইস্যু করেছিল। কিন্তু পরে শুনেছিলাম, তারা জামিনে বেড়িয়ে এসে আবারো একই ব্যবসা শুরু করেছিল। তাদের বর্তমান অবস্থা অবশ্য আমাদের জানা নেই।

মুভার কোম্পানীর মালিকদের মধ্যে যারা প্রতারক তাদের কৌশলটা খুবই সরল সোজা। প্রথমে তারা ক্লায়েন্টএর মালামাল পরিবহনের জন্য তাকে সস্তায় একটি রেট দেন। সস্তায় রেট দেখে স্বাভাবিকভাবেই ক্লায়েন্ট রাজী হয়ে যান। কিন্তু প্রতারক এই মুভার কোম্পানীরগুলোর মালিকদের আসল রূপ প্রকাশ পায় যখন মালামাল সব গাড়িতে উঠানো হয়। মালামাল গাড়িতে উঠানোর পর তারা নানান কারণ দেখিয়ে রেট বাড়িয়ে দেন। চুক্তি ৫০০ ডলার হয়ে থাকলে মালামাল গাড়িতে উঠিয়ে তিন বা চারগুণ বেশী অর্থ দাবী করে বসবেন। ক্লায়েন্টের অবস্থা বুঝে আরো বেশী অর্থও দাবী করে বসতে পারেন এরা। ক্লায়েন্ট যদি বেশী অর্থ দিতে রাজী না হন বা বাগবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন তবে গাড়িতে উঠানো মালামাল জব্দ করার হুমকী দেন মুভার কোম্পানীর লোকেরা। এরকম জিম্মী অবস্থায় ক্লায়েন্টের কিছুই করার থাকে না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। কেউ কেউ অবশ্য ৯১১ এ কল করে পুলিশ ডাকেন। কিন্তু বিষয়টি জরুরী নয় বলে ৯১১ এর অপারেটর পুলিশের রেগুলার নাম্বারে কল করতে বলেন ভুক্তভোগীকে।

এরকম পরিস্থিতির শিকার এক ভদ্রলোক অনলাইনে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেন, “আমি ৯১১ এ কল করার পর আমাকে নন-এমার্জেন্সি লাইনে রেফার করা হয়। সেখান থেকে আমাকে বলা হয় তুমি যদি চাও তবে আমরা পুলিশ পাঠাতে পারি যাতে কোনরকম গন্ডোগল না হয়। আমি তখন একটু দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ি। কি করবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। তাৎক্ষনিক জবাব দিতে না পারায় তারা ফোন লাইন কেটে দেয়।”

এই লেখার শিরোনাম ছিল “আমার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা”। মুভারের লোকজন তার বাসায় আসার কথা ছিল বিকেল ৪টায়। কিন্তু তারা আসেন রাত ৮টায়। অর্থাৎ শুরুতেই ক্লায়েন্টকে একটা বেগতিক অবস্থায় ফেলে দেন তারা। কারণ তাকে ঐ দিনের মধ্যেই মুভ হতে হবে। বাড়িওয়ালাকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। নতুন যে বাড়িতে উঠতে যাচ্ছেন সেখানেও নোটিশ দেয়া আছে। এবং মুভাররা যথা সময়ে না এসে রাত ৮টা বাজিয়েছেন। এই অবস্থায় ক্লায়েন্ট হয়ে পড়েন জিম্মী। তখন তাকে যা করতে বলা হয় তিনি তাই করতে বাধ্য হয়ে পড়েন।

মুভাররা হেলতে দুলতে এসে মালামালগুলো দেখে নেন এক নজর এবং জানান কোন সমস্যা নেই। এ কথা বলেই গাড়িতে মালামাল উঠাতে শুরু করেন। এর মধ্যে তারা দাবী করেন ২০০ ডলার আগাম দিতে হবে। একটা চুক্তিপত্রও ধরিয়ে দেয়া হলো স্বাক্ষর করার জন্য। ক্লায়েন্ট সবই করলেন। কারণ উপায় নেই। আর চুক্তিপত্রে কি লেখা আছে সেটা দেখারও সময় নেই। তাড়াতাড়ি বাড়ি ছাড়তে হবে।

প্রথমে কথা ছিল মুভিং এর জন্য ২৫০ ডলার দিতে হবে। যদি সময় বেশী লাগে তবে প্রতি ঘন্টায় ৪৫ ডলার করে অতিরিক্ত চার্জ ধরা হবে। কিন্তু দেখা গেল ২০০ ডলার আগাম নিয়ে গাড়িতে মালামাল উঠানোর পর তারা দাবী করে বসলেন ৬০০ ডলার দিতে হবে। কি কারণে ৬০০ ডলার দিতে হবে? এ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলেন, প্রতি ঘন্টায় লেবার কস্ট জন প্রতি ৪৫ ডলার। গাড়ির গ্যাস খরচ, হেভী আইটেম উঠানো নামানোর খরচ, সিড়ি বেয়ে উঠা ও নামার খরচ ইত্যাদি সব মিলিয়ে ৬০০ ডলার হয়।

তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে ভদ্রলোক বললেন, দরকার নেই আমার মুভিং এর। আমার ডলার ফেরত দিন এবং আমার মালামাল গাড়ি থেকে নামান। এই সময় মুভাররা ডলার ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং নানান টালবাহানা শুরু করেন। তারা বলেন, এখন রাত হয়ে গেছে অনেক। আপনি মুভ না হয়ে যাবেন কোথায়? তখন ভদ্রলোক ৯১১ এ কল করেন। কিন্তু নন এমার্জেন্সী বিধায় বিষয়টি পুলিশের কাছে গুরুত্ব পায়নি। ইতিমধ্যে মুভারগণ বাড়ির সাইডওয়াকের ওপর মালামালগুলো দ্রুত এবং এলোপাথারীভাবে ফেলে দিয়ে চম্পট দেন ঐ ২০০ ডলার ফেরত না দিয়েই।

প্রতারক মুভারদের নিয়ে এরকম শত সহস্র কাহিনী আছে অনলাইনে। এরকমই আরেক কাহিনী হলো নাদিন নাটোর নামের এক মহিলার। সিবিসি নিউজ জানায়, মুভাররা তার কাছে প্রথমে যে রেট দিয়েছিলেন, পরে সেই রেটের চেয়ে দশ গুণ বেশী অর্থ আদায় করেছেন তার কাছ থেকে। শুধু তাই নয়, মুভিং শেষে যাওয়ার সময় তার ৫৫ ইঞ্চি টেলিভিশনটাও সাথে করে নিয়ে গেছেন। সাথে করে নিয়ে গেছেন আরো দুটি কার্টুন যেখানে তার মূল্যবান কিছু সামগ্রী ছিল। ওকভিলে বসবাসকারী ঐ মহিলার সঙ্গে মুভারদের প্রথমে কথা হয়েছিল ২৫০ ডলারে তার মালামাল নতুন ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া হবে। কিন্তু সেই ২৫০ ডলার পরে গিয়ে দাড়ায় ২২০০ ডলারে। এই মহিলাও পুলিশে কল করেছিলেন। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল তারা এ বিষয়ে কোন কিছু করতে পারবে না। ঐ মহিলাকে তারা পরামর্শ দিয়েছিলেন বিষয়টি নিয়ে তিনি স্মল ক্লেইম কোর্টে যেতে পারেন।

পুলিশ অবশ্য সিবিসি নিউজকে জানায়, ভুক্তভোগীরা এরকম পরিস্থিতিতে পুলিশকে কল করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে দ্বিধা করার কোন কারণ নেই। তবে বাস্তবতা হলো, সব ক্ষেত্রেই পুলিশ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। হস্তক্ষেপের বিষয়টি নির্ভর করছে প্রকৃত পরিস্থিতিটা কি তার ওপর।

আসলে কানাডা একটি উন্নত, আধুনিক ও শান্তিপ্রিয় দেশ হলেও এখানে প্রতারকদের উপস্থিতিও আছে। হয়তো অনুন্নত দেশের তুলনায় তাদের সংখ্যা এখানে কম। কিন্তু বাস্তবতা হলো তারা এদেশটিতে আছেন। তাই নিজের নিরাপত্তার জন্য এবং নিজের স্বার্থে পুলিশ বা সরকারের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর না করে নিজে থেকেও কিছুটা সতর্ক হওয়া প্রয়োজন নাগরিকদের। কিছুটা সাধারণজ্ঞান ও বাকীটা আত্মীয়-বন্ধুদের পরামর্শ গ্রহণ করে এই প্রতারকদের হাত থেকে মুক্ত থাকা যেতে পারে। সেটা মুভার নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেমন, তেমনি অন্যান্য আরো ক্ষেত্রেও। যেমন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রেভিনিউ কানাডার নাম করে একদল প্রতারক বিভিন্নজনকে ফোন দিয়ে আসছেন। টেলিফোনের মাধ্যমে প্রতারকরা সম্ভাব্য শিকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমরা আপনার টেক্স রিটার্ন এর ফাইল চেক করে দেখেছি। ফাইল চেক করে আমরা দেখতে পেয়েছি আপনি আপনার আসল ইনকাম গোপন করেছেন টেক্স ফাঁকি দেওয়ার জন্য। এ জন্য আপনাকে কম করে হলেও ৫০ হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হতে পারে। এমনকি জেলও হতে পারে। ভয় দেখানোর জন্য তারা আরো হুমকী দেন এই বলে যে, “কিছুক্ষণের মধ্যেই আরসিএমপি এসে আপনার দরজায় কড়া নাড়বে। তাদের কাছে আপনাকে গ্রেফতার করার জন্য ওয়ারেন্ট রয়েছে।”

আরেক ধরণের প্রতারণা হয় ফিসিং ই-মেইল এর মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়ায় প্রতারকরা এমন সব নামী দামী প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙ্গিয়ে ই-মেইল পাঠাবেন যে, তাৎক্ষণিক ভাবে কেউ সন্দেহই করতে পারবেন না। নামকরা কোন ব্যাংক বা অন্যকোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান কিংবা রেভিনিউ কানাডার নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারকরা ই-মেইল পাঠাবেন এবং বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য চাইবেন। যদি কেউ সেই সব তথ্য দেন তবে তা ব্যবহার করে টার্গেট করা ব্যক্তির একাউন্ট বা ক্রেডিট কার্ড এর অর্থ হাতিয়ে নিতে পারেন প্রতারকরা।

ভাবতে অবাক লাগে, কি এক টেকনলজির যুগে বাস করছি আমরা যেখানে প্রতারক আর ঠকবাজরা অনায়াসে আমাদের অন্দরমহল পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছেন প্রতারণার ফাঁদ পাতার জন্য। আর না জেনে বা না বুঝে এই প্রতারণার ফাঁদে পা দিচ্ছি আমরা অনেকে। প্রতারকরাও হাতিয়ে নিচ্ছেন মিলিয়নস অব ডলার। এদের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হলে পুলিশেরও আর বিশেষ কিছু করার থাকে না। কারণ, কোথায় খুঁজবে তাকে? কোন সূত্রইতো ঐ অনলাইন প্রতারকরা রাখে না।

আর মুভার প্রতারক কোম্পানী? এরাও কদিন পর পর নিজেদের কোম্পানীর নাম বদল করেন। অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন, এই প্রতারক মুভাররা প্রতারণার মাধ্যমে কতই বা আর আয় করতে পারেন? শুনলে আশ্চর্য হবেন। শুরুতে যে বাংলাদেশী মুভার কোম্পনীর কথা বলছিলাম তাদের বাৎসরিক আয় ছিল এক মিলিয়ন ডলারের মত! এদের একজন আবার সরকারী বাড়িতে থাকতেন। ওয়েলফেয়ার মানি কালেক্ট করতেন। অন্যদিকে চালাতেন বিলাসবহুল মার্সিডিজ। টরন্টো স্টার এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে! প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১০ সালের ২০ মে।

উল্লেখ্য যে, গত বছর অন্টারিও প্রভিন্স এর ‘মিনিস্ট্রি অব গভার্নমেন্ট এ্যান্ড কনজুমার সার্ভিসেস’ মুভার কোম্পানী নির্বাচনের সময় জনগণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছিল। সিবিসি নিউজের সূত্রে জানা যায়, সরকারী ঐ দপ্তর থেকে বলা হয়েছিল- সুখ্যাতি আছে এমন মুভার নির্বাচন করলে সমস্যা এড়ানো যেতে পারে। তাছাড়া আত্মীয়-বন্ধুদের কাছেও কোন মুভার কোম্পানীর ঠিকানা চাওয়া যেতে পারে যারা সাম্প্রতিক সময়ে নির্ঝঞ্জাটভাবে মুভ হয়েছেন ঐ কোম্পানীর মাধ্যমে। অনলাইনে সরকারী দপ্তরের একটি ‘কনজ্যুমার বিওয়ার লিস্ট’ আছে যেখানে ব্ল্যাক লিস্টেড বা কালো তালিকাভুক্ত মুভার কোম্পানীর নাম চেক করা যেতে পারে।

যে সকল মুভার কোম্পানীর মালিকগণ প্রতারণার উদ্দেশেই এই ব্যবসায় নামেন তাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আরো কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। গ্লোবাল নিউজ এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা নিন্মরূপ :

কাজ শুরু হওয়ার আগেই পেমেন্ট সবটা দিয়ে দিবেন না

কানাডিয়ান এসোসিয়েশন অব মুভার্স এর পরিচালক জিম কার্নি বলেন, মুভিং এর কাজ শুরু হওয়ার আগেই তাদের পেমেন্ট সবটা মিটিয়ে দিতে যাবেন না। তিনি জানান, মুভারগণ সাধারণত ১০% অগ্রীম চেয়ে থাকেন যদি মুভিং এর কাজটি স্থানীয় পর্যায়ের হয়ে থাকে। আর যদি লং ডিস্টেন্স এর মুভিং হয়ে থাকে তবে পেমেন্ট দেয়া হয় সাধারণত মালামাল গন্তব্যে পৌঁছানোর পর। তবে পেমেন্টটা করতে হয় মালামাল গাড়ি থেকে নামানোর আগে।

দি কানাডিয়ান এসোসিয়েশন অব মুভার্স এর সঙ্গে যোগাযোগ করুন

এই সংগঠনটির কাছে সুখ্যাতিসম্পন্ন বা বিশ্বাসযোগ্য মুভার কোম্পানীর লিস্ট আছে যারা আইন মেনে চলেন।

কোন আত্মীয় বা বন্ধুর কাছে মুভার এর খোঁজ নিন

কোন আত্মীয় ব বন্ধুকে জিজ্ঞেস করুন তারা সম্প্রতি কোন মুভারের সার্ভিস নিয়েছেন কিনা। তারা যদি কোন মুভার কোম্পানীর নাম সুপারিশ করেন তবে সেই কোম্পানীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

মুভার কোম্পানীর চমকপ্রদ ওয়েবসাইট দেখে মুগ্ধ হবেন না

আজকাল টেকনলজীর উন্নয়নের ফলে তিল কে তাল বানানো মোটেও কঠিন কাজ নয়। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এ কাজটি আরো সহজে করা যায়। তাই কোন মুভার কোম্পানীর চমকপ্রদ বা চোখ ধাধানো ওয়েবসাইট দেখেই মুগ্ধ হবেন না। আগে ভাল করে খোজ খবর নিন তাদের সম্পর্কে। প্রয়োজনে অনলাইনে দেয়া সরকারী দপ্তরের ‘কনজ্যুমার বিওয়ার লিস্ট’ চেক করা যেতে পারে যেখানে ব্ল্যাক লিস্টেড মুভার কোম্পানীর নাম থাকতে পারে।

প্রয়োজনে লিখিত চুক্তি করুন

অনেক মুভার কোম্পানী টেলিফোনে আপনাকে একটি কোটেশন দিতে পারে। কিন্তু তাদের মুখের কথায় সিদ্ধান্ত নিবেন না। প্রয়োজনে তাদের কাছ থেকে লিখিত ডকুমেন্ট নিন। এবং ঐ লিখিত ডকুমেন্ট ভাল করে চেক করে দেখুন সই করার আগে।

মনে রাখবেন কানাডায় এই মুভার কোম্পানীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশী অভিযোগ করে থাকেন লোকজন। ‘বেটার বিজনেস ব্যুরো’র তথ্য এটি। কানাডিয়ান এসোসিয়েশন অব মুভার্স এর পরিচালক জিম কর্নি বলেন, এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের জন্য কানাডায় কোন লিখিত আইন নেই।

তাই মুভিং এ সময় নিজের মালামাল এর নিরাপত্তার জন্য আপনাকে সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে।

খুরশিদ আলম

সম্পাদক ও প্রকাশক

প্রবাসী কণ্ঠ