অশ্বেতাঙ্গদের সঙ্গে কানাডা পুলিশের আচরণ নিয়ে ৩৯% মানুষের ‘গুরুতর অস্বস্তি’ আছে
সমীক্ষায় পদ্ধতিগত বর্ণবাদ, বলপ্রয়োগ এবং পুলিশ বাহিনীর অর্থবরাদ্দ ইত্যাদিসহ সার্বিক পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি উঠে এসেছে
ডিসেম্বর ৩, ২০২০
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ২৬ অক্টোবর ২০২০ : কানাডীয় নাগরিকদের প্রতি পাঁচজনে প্রায় দু’জন বিশ্বাস করেন, সারাদেশে কৃষ্ণাঙ্গ, আদিবাসী এবং অশ্বেতাঙ্গ মানুষের প্রতি পুলিশ বাহিনী যে আচরণ করে তাতে গুরুতর সমস্যা আছে। নতুন এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
ডিফেন্ড অর ডিফান্ড (রাখবেন নাকি বরাদ্দ বাতিল করবেন) শিরোনামে অ্যাঙ্গুশ রেইড-এর এই সমীক্ষায় ৫,০০৫জন প্রাপ্তবয়স্ক কানাডীয় নাগরিকের মতামত নেয়া হয়। এতে দেখা যায়, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের কাছাকাছি সংখ্যক মানুষ (৬৩ শতাংশ) একমত যে পদ্ধতিগত বর্ণবাদ একটি গুরুতর সমস্যা এবং প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মানুষ বলেন, কানাডার পুলিশ কৃষ্ণাঙ্গ, আদিবাসী এবং অশ্বেতাঙ্গ লোকেদের প্রতি অন্তত কখনও কখনও অন্যায় আচরণ করে। খবর সিবিসি নিউজের।
অশ্বেতাঙ্গ মানুষের প্রতি পুলিশের আচরণ সম্পর্কে কানাডীয়দের অনুভূতি কোন্ জবাবের মধ্যে প্রতিফলিত হচ্ছে জিজ্ঞাসা করা হলে যে, ফলাফল পাওয়া যা তা হলো:
– ৩৯ শতাংশ মনে করেন এক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা আছে।
– ৩৪ শতাংশ বলেন, পুলিশের আচরণ কখনও কখনও সমস্যাজনক।
– ১৫ শতাংশ বলেন, কোনও সমস্যা নেই।
– ১২ শতাংশ এ বিষয়ে নিশ্চিত নন।
তবে, নিজ প্রদেশের পুলিশ অশ্বেতাঙ্গদের সঙ্গে যে আচরণ করে তাকে গুরুতর সমস্যা বলেছেন আরও কম সংখ্যক মানুষ। আর তাদের নিজের কমিউনিটিতে পুলিশের আচরণ কেমন সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে ওই সংখ্যা আরও কমে যায়।
কানাডীয় নাগরিকদেরকে কমিউনিটি পুলিশিব্যবস্থা সম্পর্কে একই প্রশ্ন করা হলে যে ফলাফল পাওয়া যায় সেটি হলো:
– ২৭ শতাংশ মনে করেন এক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা আছে
– ২৭ শতাংশ বলেন, কোনও কোনও সময় সমস্যা থাকে
– ২৭ শতাংশ বলেন, কোনও সমস্যা নেই
– ১৯ শতাংশ নিশ্চিত নন।
সমীক্ষায় শহর ও পল্লী এলাকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা গেছে। (অ্যাঙ্গুশ রেইড ইন্সটিটিউট)
শহর বনাম গ্রাম
সমীক্ষায় দেখা গেছে, উল্লেখিত বিষয়ে শহর ও গ্রামাঞ্চলে বসবাসের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
অশ্বেতাঙ্গদের প্রতি পুলিশের আচরণে গুরুতর সমস্যা আছে এমন বলার মত মানুষের সংখ্যা বৃহৎ নগরীর বাইরে বসবাসকারী লোকেদের মধ্যে অর্ধেক মাত্র: নগরে বসবাসকারীদের প্রায় ৩০ শতাংশ মনে করেন এক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা বিদ্যমান, কিন্তু গ্রামাঞ্চলে বাস করা লোকেদের মাত্র ১৪ শতাংশ তেমনটা ভাবেন। সমীক্ষায় অংশ নেয়া গ্রামের লোকেদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনে দু’জন এক্ষেত্রে কোনওরকম সমস্যা দেখতে পান না।
কানাডার বৃহৎ নগরীগুলোতে সমীক্ষার যে ফল পাওয়া গেছে তা পৃথকভাবে দেখাতে গেলে দেখা যায়, পশ্চিমাঞ্চলের নগরীগুলোর চেয়ে বৃহত্তর টরন্টো এলাকার মানুষ অশ্বেতাঙ্গদের প্রতি পুলিশের আচরণ নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন।
– বৃহত্তর টরন্টোতে ৪১ শতাংশ মানুষ বলেন, এটি একটি গুরুতর সমস্যা;
– একই কথা বলেন, উইনিপেগ-এর ৩৬ শতাংশ;
– মন্ট্রিলে ৩৫ শতাংশ;
– ভ্যাঙ্কুভারে ২৯ শতাংশ;
– এডমন্টনে ২৪ শতাংশ এবং
– ক্যালগেরিতে ২৩ শতাংশ মানুষ।
পুলিশি ব্যবস্থায় সমসাময়িক প্রসঙ্গ
কানাডায় পুলিশি ব্যবস্থায় কিছু সমসাময়িক প্রসঙ্গও সমীক্ষায় উঠে আসে। এর মধ্যে রয়েছে পদ্ধতিগত বর্ণবাদ, বলপ্রয়োগ এবং পুলিশের অর্থ বরাদ্দ ইত্যাদি।
সমীক্ষায় দেখা যায়, ২৮ শতাংশ কানাডীয় একমত যে, বিশেষ করে আরসিএমপিতে (রয়েল কানাডিয়ান মেট্রোপলিটন পুলিশ) পদ্ধতিগত বর্ণবাদের অস্তিত্ব আছে। আর ২৭ শতাংশ বলেছেন, সমস্যার সমাধানে বলপ্রয়োগের ব্যাপারে পুলিশ অত্যধিক করিৎকর্মা।
সহিংসতা এবং পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সোচ্চার প্রতিবাদের মুখে পুলিশকে দেয়া অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দেয়ারও আহবান জানানো হয়। সমীক্ষায়, ২৫ শতাংশ কানাডীয় একমত হন যে, পুলিশ বাহিনীর জন্য অত্যধিক পরিমাণে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে এবং তা কমানো উচিৎ। তবে ৩৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন পুলিশ বাহিনীকে যে অর্থ দেওয়া হয় তা যথাযথ।